গত বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। তাই এ বছরে আসন্ন কোরবানি ঈদে প্রায় দেড় কোটি পশুর চাহিদা হতে পারে। গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা লাভজনক। অল্প সময়ে অল্প পুঁজিতে গরু মোটাতাজা করে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূর করা যায়।
যদি ৩ মাস মেয়াদি মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয় তাহলে ৩ মাস সময় হাতে রেখে এর আগের ১ মাসের মধ্যে গরু নির্বাচন করে ফেলতে হবে। আসন্ন কোরবানিতে কেউ যদি গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া করতে চায় তাহলে রোজার ঈদের আগের সময়টাতে গরু কিনতে হবে।
গরু কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই গরুর রং লাল বা কালো যেটা গ্রাহকেরা খুবই পছন্দ করে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরুর বয়স হতে হবে ২-২.৫ বছর। উল্লেখ্য গরুর বয়স ন্যূনতম ২ বছর হলে সেটি কোরবানির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নিতে হয়।
গরুর মুখের নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে, তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত। চামড়া হতে হবে ঢিলেঢালা, পেছনের অংশ ও পিঠ চওড়া, দেহ হবে আয়তাকার, কপাল ও বুক প্রশস্ত, খাটো লেজ, হাড় ও হাড়ের জয়েন্টগুলো একটু মোটা হতে হবে। এবং পশুগুলো হবে শান্ত প্রকৃতির ও রোগমুক্ত। নির্বাচনের পর অবশ্যই গরুগুলোকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলাদা রাখতে হবে।
গরুর জন্য বাসস্থান দীর্ঘস্থায়ী এবং ক্ষণস্থায়ী দুইভাবে তৈরি করা যেতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী বলতে খামারির নিজস্ব জায়গার মধ্যে শেড নির্মাণ আর ক্ষণস্থায়ী বলতে অন্যের জমি বর্গা বা চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে তাতে শেড নির্মাণ করতে হবে। গরু রাখার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত জায়গা দিতে হবে। সর্বনিম্ন ৯ ফুটের মতো উঁচু জায়গা রাখতে হবে যাতে বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে। গড়ে ৩০-৪০ বর্গ ফুট জায়গা দিতে হবে প্রতিটি গরুর জন্য এবং প্রতি গরুর জন্য আলাদা খাবার পাত্র এবং পানির পাত্র রাখতে হবে।
গরু কেনার পর প্রথম কাজ হচ্ছে কয়েকদিন (৭-১০ দিন) গরুটিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করা তারপর গরুকে কৃমিনাশক খাওয়ানো যেমন: বাজারে এনডেক্স ১.৫ গ্রামের একটি বোলাস প্রতি ৫০ কেজি ওজনের জন্য অথবা রেনাডেক্স ১টি বোলাস প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য, এর সঙ্গে লিভারটনিক প্রতি গরুকে ৫০ মিলি করে ৩ দিন এবং এরপর তাকে বিভিন্ন মাল্টি ভিটামিন প্রয়োগ করা যেতে পারে (প্রাণী চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক)।
গরু কেনার পর কৃমি রোধ করা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি বিভিন্ন সংক্রামক রোগের টিকা দেওয়াও জরুরি যেমন: এফএমডি, এলএসডি এই রোগ গুলোর টিকা দেওয়া দরকার।
গরু মোটাতাজাকরণ করতে হলে গরুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে। খাবারের মধ্যে শক্তি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি দিতে হবে। যেমন: প্রতি ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য খড় জাতীয় খাদ্য ২.৫-৩ কেজি, তাজা ঘাস ৩ কেজি প্রতিদিন, শক্তি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য (ভুসি, খৈল, চিটাগুড়, ইউরিয়া, শুঁটকি মাছের গুঁড়া)। চিটাগুড় ১৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ৭-৮ গ্রাম ১ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি ১.৫ কেজি খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
সকল ক্ষেত্রেই তাজা ঘাস দেওয়ার প্রয়োজন আছে। খৈল ও ভুসির মিশ্রণ প্রক্রিয়াজাত খড়ের বেলায় অর্ধেক (২০০ গ্রাম) দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও পরিমাণমতো (১-২%) লবণসহ অন্যান্য খনিজ দ্রব্যের মিশ্রণ প্রতিদিন খাদ্যের সঙ্গে দিতে হবে। ফিতার সাহায্যে গরুর ওজন মেপে তাকে খাবার প্রদান করতে হবে এবং বিভিন্ন রুচিবর্ধক যেমন এনোরা ডিএস, এভেইলা-৪ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরণ করে বাজারজাত করা সম্ভব। কোরবানির ১০-১৫ দিন আগে থেকে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে।
উপরিউক্ত উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ শুধু কোরবানিতে নয়, বরং সারা বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রপ্তানি করারও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যে সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে মাংস আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]