গতকাল ২৮ অক্টোবর দুপুরের দিকে বের হলাম অফিস থেকে। লক্ষ্য—বিরোধী ও সরকারদলীয় সমাবেশের দিকে যাওয়া। সকাল থেকেই জল্পনাকল্পনা, আজ (গতকাল) আসলে কী হবে?
এদিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের প্রধান অতিথি থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। কিন্তু তিনি ঢাকা ছেড়ে গেছেন সরকারপ্রধানের সঙ্গে চট্টগ্রামে, সকালে দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে, অন্য নেতা–মন্ত্রীরাও। তাহলে কি সরকার বা সরকারদলীয় নেতা-মন্ত্রীরা ঢাকা নিয়ে অতটা চিন্তিত নন? ঢাকার পরিস্থিতি সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সে ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা? যদিও ওবায়দুল কাদের পরে ঢাকায় শান্তি সমাবেশে যোগ দেন।
বিএনপি থেকেও কর্মীদের প্রতি বারবার বলা হয়েছে, তারা ‘অহিংস’ কর্মসূচি করতে চায়। দেশের গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর আছে, সেই বিবেচনা থেকেও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়াবে না, এমনটা আশা করা যাচ্ছিল। কিন্তু জনমনে যে শঙ্কা ছিল, সেটিই সত্য হলো। সমাবেশস্থলের দিকে যাত্রার আগেই সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে।
কারওয়ান বাজার থেকে একটা রিকশা নিলাম। বাংলামোটর হয়ে যেতে দেখলাম, রাস্তার দুই পাশে লাইন করে দাঁড়ানো গাজীপুরের অনেকগুলো বাস। সেখানে স্লোগান শুনে ও জমায়েত দেখে বুঝলাম গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাঙ্গাগীর আলমের বহর এটি।
জাহাঙ্গীরের বহরের একটি বাসের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাতের বিষয়টি ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে চলে এসেছে। বিএনপির কর্মীদের গাড়িবহর যেখানে সহজে ঢাকায় ঢুকতে পারেনি, পদে পদে বাধা পেয়েছে, সেখানে জাঙ্গাগীরের নেতৃত্বে সরকার দলীয় কর্মীদের নিয়ে এসব বাস সহজে বা বিনা বাধায় ঢাকায় ঢুকতে পেরেছে। যেমনটি আগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে।
রমনা থানার সামনে যেতেই পুলিশের ব্যারিকেড। রিকশাচালক রিকশা ঘুরিয়ে ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে ঢুকে গেলেন। মনে হলো ঢাকা রিকশার শহর। মোড়ে মোড়ে জমায়েত দেখে মনে হলো, সবাই সরকারদলীয় লোক। তবে মহিলা সমিতি হয়ে বেইলি রোড দিয়ে শান্তিনগর ফ্লাইওভার মোড়ে গিয়ে বুঝলাম, সব রাস্তা আর গলি আসলে বিএনপির কর্মীদের দখলে।
তখন বেলা দুইটা। রিকশা থেকেই দাঁড়িয়ে দেখলাম, কাকরাইলের রাজমণি মোড়ের দিকে ধোঁয়া উড়ছে। সেদিক থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের মুহুর্মুহু আওয়াজ আসছিল। শান্তিনগর মোড় ও আশপাশের অলিগলি—সবখানেই বিএনপির কর্মী। অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে চলছে স্লোগান। এসবের মাঝখানেই মোড়ের সঙ্গে বেইলি রোডের মুখে আল মদিনা প্যালেস, যেটিকে অনেকে বলছিলেন—বিএফসি ভবন, সেটির নিচে একদল পুলিশ সতর্কভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
কাকরাইলের রাজমণি মোড়ের আগে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের দিকে এক-দেড় শ গজ গিয়ে আর সামনে যাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তাজুড়ে বিএনপির কর্মীরা। মাথায় বিএনপি, যুবদল বা ছাত্রদলের নাম লেখা কাপড়ের ব্যান্ড। আর মুখে নানা স্লোগান তো আছেই। রাজমণির দিকেও তাঁরা যেতে পারছেন না।
রাস্তার পাশে একজন লোককে দেখলাম আরেকজনের মাথায় কাফনের সাদা কাপড় পরিয়ে দিতে। দুজনেরই পঞ্চাশের কমবেশি বয়স। জানালেন, নতুন বাজার থেকে এসেছেন। দলের কোনো পদ-পদবি জানাতে চাইলেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, সাদা কাফন পরছেন, আজকে কি আপনারা রাস্তায় থেকে যাবেন? তাঁরা জানালেন, ঢাকা ছেড়ে তাঁরা নড়বেন না।
এর মধ্যেই পেছনে শান্তিনগর মোড় থেকে সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ। বুঝলাম, পুলিশ অ্যাকশনে গেছে। পাশেই একটা হোটেলের শাটার বন্ধ করে দিচ্ছিল, আরও কয়েকজনের সঙ্গে দৌড়ে সেখানে ঢুকলাম। বাইরে কী হচ্ছে, বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না। চূড়ান্ত সংঘর্ষ কি শুরু হয়ে গেল? বাইরে কী ঘটছে, এই আটকা পড়া অবস্থা থেকে কীভাবে বের হব, সেই চিন্তাই করছিলাম। ১০ মিনিট পর শাটারের ওপরে একটি ছিদ্রে মোবাইলের ক্যামেরা রেখে বোঝার চেষ্টা করলাম। দেখলাম, দৌড়াদৌড়ি বন্ধ।
শাটার খুলে বের হতেই কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজ চোখেমুখে ধাক্কা দিল। দৌড়ে আবার হোটেলে ঢুকতে চাইলাম, ততক্ষণে শাটার বন্ধ। শান্তিনগর মোড় তখন বিএনপির কর্মীদের দখলে। দেখেই বুঝলাম, পুলিশ পিছু হটেছে। মুখে মাস্ক পরে চোখ অর্ধেক বন্ধ করে সামনে কয়েক গজ এগিয়ে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে অন্য পাশে চলে গেলাম। সেদিকে গিয়ে দেখলাম, ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশবক্সের পাশে দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে একটি মোটরসাইকেল।
শান্তিনগর মোড়ে যেতেই দেখলাম, একটা দলকে দেখলাম সড়কের ওপরে হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা-ই ভাঙচুর করছে। বিশেষ করে ট্রাফিক লাইট। রাস্তার পাশে ভবনের ওপর থেকে যাঁরাই ভিডিও করছেন বা ছবি তুলছেন, তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে ইটপাটকেল মারার ভয় দেখাচ্ছেন। যে পরিমাণ সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলাম, আর কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া দেখলাম, তা বিএনপি কর্মীদের আরও বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তবে কোনো দোকানপাট বা অন্য কোনো স্থাপনায় ভাঙচুর চালাতে দেখিনি তাঁদের।
বেইলি রোডের মুখে পুলিশকে দেখতে পেলাম না। পুরো গলিতে বিএনপির কর্মীরা। কয়েকজনের কাছে জানতে পারলাম, পুলিশ বিএফসি ভবনের ভেতরে ঢুকে গেছে। সেখানে দোতলা, তৃতীয় তলা আর ছাদে উঠে গেছে। ছাদ থেকেই সাউন্ড গ্রেনেড আর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। তখনো দেখলাম, দুই–একজন নিচ থেকে সেই ভবনের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ছেন।
বিএফসি ভবনের পাশের একটি ছোট গলিতে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে। শান্তিনগরের মোড়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত সম্পর্কে কয়েকজনের কাছ থেকে জানতে চাইলাম। তাঁরা জানালেন, পুলিশ প্রথমে তাঁদের ধাওয়া দিয়েছে। এরপর তাঁরাও পুলিশকে ধাওয়া দেন। এরপর পুলিশ পিছু হটে ভবনের ভেতরে ঢুকে যায়। তবে এখানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হিসেবে শান্তিনগর ১৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কর্মীরা বিএনপির জমায়েতের দিকে ইট–পাটকেল ছোড়ার কথা বললেন কয়েকজন।
কিছুক্ষণ পর আরেকটা ছোট গলি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এক পুলিশ সদস্য বেরিয়ে আসেন। তাঁকে একা পেয়ে বিএনপির কর্মীরা ঘিরে ধরে লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটালেন। তিনি যদিও সেই অবস্থায় দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে টান মেরে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। গলিতে ফুটপাতে পুলিশের ছররা গুলি খেয়ে রক্তাক্ত কয়েকজনকে দেখলাম। একজনের হাত থেকে ছররা গুলি বের করার চেষ্টা করছিলেন অন্যরা। আহত ব্যক্তি আমার গলায় ঝোলানো সাংবাদিক কার্ড দেখে অনুরোধ করলেন ছবি না তুলতে।
গলির ভেতরে হাঁটার সময় বিএনপির এক তরুণের সঙ্গে দেখা হলো। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আগ্রহ নিয়ে কথা বললেন। জানালেন তাঁর নাম মোহাম্মদ ফয়সাল। ভাসানটেক থেকে এসেছেন। তিন বছরের একটা বাচ্চা আছে। বললেন, ‘ঘর থেকে মহাসমাবেশে আসতে বাধা দিলেও দলের জন্য, দেশের জন্য চলে এসেছি। আজকে ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় দখলে রাখতে পারলে বিএনপিকে আর ঠেকানো যাবে না।’ একটা মামলাও আছে তাঁর। বললেন, সরকারি দলের মিথ্যা মামলা। এখন নিয়মিত হাজিরা দিয়ে বেড়ান। মহাসমাবেশে যোগ দেওয়া তাঁর মতো আরও অনেক বিএনপি কর্মী পাওয়া যাবে, যাঁরা এ সরকারের আমলে মামলা–গ্রেপ্তার–নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
এরপর আরেক তরুণের সঙ্গে কথা হলো, কক্সবাজার থেকে এসেছেন। বললেন, কক্সবাজার থেকে ৭০-৮০টি মাইক্রোবাসে করে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসেছেন। সকাল ছয়টার দিকে তাঁরা ঢাকায় ঢুকেছেন। পথে তাঁদের গাড়িটি তেমন বাধার মুখে পড়েনি বলে জানালেন তরুণ। যদিও শনিবার থেকে সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে সব গাড়িকে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।
এমন সময় বিএফসি ভবনের সামনে পুলিশের এপিসি (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) গাড়ি ঢুকল। তখন গোটা গলিতে দৌড়াদৌড়ি পড়ে গেল। বিএনপির কর্মীরা ইটপাটকেল হাতে পিছিয়ে এলেন। আমিও দৌড়ে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের সামনে চলে এলাম। পুলিশ এবার অ্যাকশনে যেতে পারে ভেবে নিরাপদে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসা সমীচীন মনে হলো। ১০ মিনিট হেঁটে কাকরাইলের চার্চের মোড়ের দিকে গেলাম। সেখানে পুলিশ, র্যাব আর বিজিবি সদস্য ছাড়া কেউ নেই।
সোজা রাজমণি মোড়ের দিকে তাকিয়ে গোটা রাস্তা ফাঁকা দেখতে পেলাম। রাস্তাজুড়ে ইটপাটকেল পড়ে আছে। এখানেই সংঘর্ষ শুরু হয় আগে। পুলিশবক্স আগুনে জ্বালানো। সড়ক বিভাজকের গাছ ছিন্নভিন্ন। এ সড়কে এসে প্রথম সাংবাদিক বন্ধুদের দেখা পেলাম। তাঁদের সঙ্গে রাজমণি মোড়ে গিয়ে সেখানে শুধু পুলিশকেই পেলাম। পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারাও। কোথাও কোনো বিএনপির কর্মী নেই। সরকারদলীয় কর্মীও নেই। পরিস্থিতি শান্ত।
পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিএনপির কাছ থেকে তাঁরা এমন কর্মকাণ্ড আশা করেননি। বিএনপি বলেছিল, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেটি থাকল না। সেখানেই জানতে পারলাম, বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বেরিয়ে গেছে।
আরও জানতে পারলাম, বিএনপি আগামীকাল (আজ) হরতাল ডেকেছে। দৈনিক বাংলার মোড়ে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ভেতরের অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপির কর্মীরা সেখানে ঢুকে এ হামলা চালাতে পারলেন! সবসময় কড়া নিরাপত্তা থাকা এমন একটি স্থাপনায় এ হামলা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে।
এ মোড়ে পুলিশ আর সাংবাদিক ছাড়া কেউ নেই। আর ফুটপাত ঘেঁষে অল্প দু-একজন মানুষ হাঁটাচলা করছেন। আছেন পানি, বাদাম, বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতারাও। এর মধ্যে কয়েক পথচারীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক করল।
এবার ফেরার পালা। অফিসে ফিরে সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, কাকরাইলে একটি বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা। অথচ কিছুক্ষণ আগে সেখানে দেখে আসলাম, গোটা রাস্তা পুলিশ আর নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারিকেড। কোনো গাড়ি ঢোকার সুযোগ নেই। সেখানে কী করে বাসে এই আগুন লাগানো হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলো। যাক, এবার সারা দিনের ঘটনা মিলিয়ে নিই।
অতীতে ২৮ অক্টোবর নিয়ে যেহেতু জামায়াতের মনে ঘা আছে, সে জন্য আজকে (গতকাল) তারা মাঠে নেমে সহিংস আন্দোলনে যায় কি না, সেটি নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল। দিন শেষে তেমন কিছুই হয়নি। অনুমতি ছাড়াই জামায়াতকে এত বড় সমাবেশ কীভাবে করতে দিল সরকার, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে।
কিন্তু বিএনপি এমন আচরণ করতে গেল কেন? কাকরাইল, শান্তিনগর, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, দৈনিক বাংলার মোড়ে সংঘর্ষগুলো ঘটেছে। অন্যান্য ঘটনাস্থলে কী ঘটেছে তা দেখার সুযোগ না হলেও তবে শান্তিনগরে দেখলাম, পুলিশ শুরুতে সতর্ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে যে পরিস্থিতি দেখলাম, তাতে মনে হয়েছিল, পুলিশ গুলি না চালিয়ে থাকতে পারবে না। যদিও সেদিকে যায়নি তারা। এমনকি মার ও ধাওয়া খেয়ে ভবনের ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে।
বিএনপির গতকালের মারমুখী আচরণে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হলো: শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা বিএনপির হাইকমান্ড তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা বারবার ঢাকায় এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। মাঠ দখল করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়াই তাঁদের মনোভাব ছিল। সেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
বিএনপির নেতা–কর্মীরা আদৌ কি চূড়ান্ত সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নাকি সংঘর্ষ—এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল বললে ভুল হবে না। সংঘর্ষের পরিকল্পনা না থাকলেও এমন ঘটনা ঘটে গেলে, তা মোকাবিলায় কী করতে হবে, তেমন দিক–নির্দেশনাও সম্ভবত ছিল না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড তাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি সঠিকভাবে দিক–নির্দেশনা দিতে পেরেছিল। সেই অর্থে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষে তারা যায়নি। যেভাবে আমরা অতীতে নানা সংঘর্ষে ছাত্রলীগ–যুবদলকে সশস্ত্র অংশগ্রহণ করতে দেখেছি, শান্তিনগরে মোড়ে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে তেমন কিছু আমার চোখে ধরা পড়েনি। বিএনপির নেতা–কর্মীদের হাতেও লাঠিসোঁটা ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।
সবকিছু মিলিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে, গতকাল সংঘর্ষে জড়িয়ে বিএনপি কি ভুল করল না? নাকি সংঘর্ষে জড়াতে তারা বাধ্য হলো? বলা যায়, টানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আজকে এসে বড় ধরনের ছেদ পড়ল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, গতকাল মহাসমাবেশ করতে পারল না বিএনপি। এক অর্থে তাদের সমাবেশ করতে না দেওয়ারই পরিকল্পনা ছিল সরকারের। ফলে অন্যান্যবারের মতো বড় জমায়েত দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। বরং সংঘর্ষে একজন পুলিশ নিহত হলেন। সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা হয়েছে। বিএনপির একজন কর্মীও নিহত হলেন।
অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের অবস্থান ও আচরণ দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, তারা বিএনপিকে আজ সহিংস হয়ে উঠতেই সুযোগ করে দিয়েছে। এতদিন ধরে সেটিই যেন তারা চাইছিল। তার মানে কি বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দিল? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর হয়তো আগামী কয়েক দিনের পরিস্থিতিতে খোলাসা হবে আশা করি।
রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]