রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি জনগণের মত চায়

রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন
ছবি: সাজিদ হোসেন

‘যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেকোনোভাবে ক্ষমতায় আসতে হবে’—এ মন্ত্রে উজ্জীবিত সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে ঠিক কী আচরণ করতে পারে, সে ব্যাপারে একটা ধারণা সবারই কমবেশি ছিল। ২০১৪ সালের পর থেকে প্রায় এক দশক জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীনেরা কী করেছে, তা দেখেছে দেশের মানুষ।

বিরোধী দলের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের কথা যদি এক পাশে সরিয়েও রাখি, ভিন্নমতের মানুষের ওপর কখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুন, আবার কখনো গুম, বিনা বিচারে হত্যার মতো অস্ত্র ব্যবহার করে ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে সরকার। গত কয়েক মাসে জেলা-উপজেলার পর বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোয় ক্ষমতাসীনদের আচরণ একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছে, আগের দুবারের চেয়ে ন্যূনতম ভিন্ন কিছু হতে যাচ্ছে না সামনে—আবারও ‘যেকোনো মূল্যে’ ক্ষমতায় থাকতে চাইছে ক্ষমতাসীনেরা।

আরও পড়ুন

জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে একটা রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবে, সেটা একেবারেই নির্ধারিত। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিবর্তন আমাদের স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার মানেই হচ্ছে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনদের হাতে রাষ্ট্রকাঠামোর ধ্বংস। কোনো রাষ্ট্রে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ন্যূনতম কার্যকর থাকলে, রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার টিকে থাকতে পারে না। তাই যে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে যেনতেন প্রকারে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার, তার প্রধান কাজ হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের কাঠামোটিকে ভেঙে ফেলা। এ ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায়ও নেই।

দীর্ঘকালীন গণতান্ত্রিক চর্চার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, একটা রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে ক্ষমতার পৃথক্‌করণ নিশ্চিত করতে হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ (প্রশাসন, আইন ও বিচার) তাদের সংবিধানিক এবং আইনি চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীন এবং পৃথকভাবে কাজ করবে। এর বাইরেও থাকবে অনেক সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যেগুলো নাগরিকদের অধিকার এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখার জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই, সংবিধান ও আইনে যথেষ্টভাবে নাগরিকদের অধিকারের বিষয়গুলো লিখিত থাকলেও সেটা দিন শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অন্তর্নিহিত ত্রুটি একই রকম থাকার পরও এই দেশে আসা সব সরকার জনগণের অধিকার একই রকমভাবে এবং একই পরিমাণে হরণ করেনি। কিন্তু এ কথা একেবারে অনস্বীকার্য যে আমাদের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপায়ণে, রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ও আইনি সংস্কারের এই পদক্ষেপগুলো লাগবেই। বিশেষ করে গত দুটি মেয়াদ জবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার পথে আওয়ামী লীগ এই পুরো রাষ্ট্রকাঠামোকে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যে, এর মেরামত ছাড়া আমাদের পক্ষে এক পা সামনে এগোনো আর সম্ভব নয়।

ইতিহাস সাক্ষী এবারই প্রথম নয়, রাষ্ট্র মেরামতের এই প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল আরও একবার। ১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগ শাসন আমলে যখন সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতির হাতে; সব দল বিলুপ্ত করে যখন দেশে কার্যত একদলীয় শাসন কায়েম করা হয়েছিল। অবশ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানটিই প্রণীত হয়েছিল এমনভাবে যে সেটি কার্যত এক ব্যক্তির হাতেই সব ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল।

আরও পড়ুন

এরপর চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করে তো রাষ্ট্রকে আর গণতান্ত্রিকই রাখা হয়নি। তারপর নানান চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে অনেক সংশোধনীর পর সংবিধান সর্বশেষ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এক ব্যক্তির ওপর ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন তো আছেই, একই সঙ্গে সংবিধান এখন নানা রকম স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ। স্ববিরোধিতাগুলো দূর করতে হবে। স্ববিরোধিতা দূর করাই যথেষ্ট নয়, রাষ্ট্রকে সত্যিকারভাবে গণতান্ত্রিক করে তোলার জন্য এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন কমাতে হবে। সেই লক্ষ্যে একদিকে যেমন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে, তেমনি ক্ষমতার পৃথক্‌করণ নিশ্চিত এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাবান ও কার্যকর করতে হবে।

এই সবকিছু মাথায় রেখেই বিএনপি জনগণের সামনে তার রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি হাজির করেছে। বলা হয়েছে, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘোষিত “১৯ দফা” এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির “ভিশন-২০৩০”-এর আলোকে এই রূপরেখা প্রস্তুত করা হইয়াছে।’ কিন্তু অতীতে বলা হলেও এবার একেবারে শুধু রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাবনা হিসেবে বিষয়গুলোকে হাজির করাই প্রমাণ করে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতকে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন থেকে আমাদের সমাজে আলোচনা চলেছে সংসদকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করে এটিকে আইন প্রণয়নের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার কথা। আলোচনা হয়েছে অধস্তন আদালতকে পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের অধীন দেওয়া এবং বিচার বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় স্থাপনের কথা। কথা হয়েছে সংবিধানের আলোকে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ আইন নিয়েও, যেমন কথা হয়েছে উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তার কথা। রাষ্ট্রের দুই অঙ্গ—আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপি এই দুই ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এ ছাড়া প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে আরও প্রয়োজনীয় সব সাংবিধানিক সংস্কার নিশ্চিত করবে।
দীর্ঘ মেয়াদে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সঠিক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইনসহ প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের কথা বিএনপি বলেছে। তবে এই নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনটি হতেই হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বর্তমান সংবিধানে যেহেতু এমন কোনো সরকারব্যবস্থা নেই, তাই এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। তর্ক সাপেক্ষে এই মুহূর্তের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেরামত এটি।  

জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি সরকার জোর করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকালে জঞ্জাল জমতে থাকে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে। ক্ষমতায় থাকার অস্ত্র হিসেবে সরকারটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে জনপ্রশাসন এবং পুলিশকে। বর্তমান সরকারটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে আমূল পাল্টে গেছে সংবিধানে বর্ণিত তাদের ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী’ চরিত্রটি। এমন একটি প্রশাসন দিয়ে নাগরিকদের সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত দেড় দশকে দেশে সুশাসনের অভাবের ফলে দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসেছে। এখন দুর্নীতি হাজার কোটি টাকার নিচে আর হয় না। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত, বিদ্যুৎ আর মেগা প্রকল্পগুলোয় হয়েছে নজিরবিহীন দুর্নীতি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে এই রাষ্ট্রের প্রতিটি পর্যায় দুর্নীতিবিরোধী বার্তা দেওয়া ছাড়া কোনোভাবেই বাংলাদেশ এগোতে পারবে না। বিএনপি সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছে।

দীর্ঘকালীন কর্তৃত্বপরায়ণ অপশাসনের কারণে আর সব সংকটের সঙ্গে খুব বড় সংকট হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এসব ক্ষেত্রেও কাজ করার পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার নিশ্চিত করা এবং এগুলো বন্ধ করাসহ সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া কমিশন তৈরির মাধ্যমে মিডিয়াকে সত্যিকার অর্থে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

একটা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র নিশ্চিত করলে নিশ্চয়ই খুব বড় কাজ হয়, কিন্তু নাগরিকদের জন্য সেটাই সবকিছু করে দেয় না। নাগরিকদের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দর্শনও অতি জরুরি বিষয়। আমেরিকা আর ইউরোপ—দুটিতেই আছে অসাধারণ গণতন্ত্র। কিন্তু শুধু অর্থনৈতিক দর্শনের ভিন্নতার কারণে নাগরিকদের ভালো থাকার ক্ষেত্রে বড় ধরনের তারতম্য আছে এ দুটির মধ্যে। সে কারণেই অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করার মাধ্যমে এই রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভিত্তিক সংস্কার নিশ্চিত করবে বিএনপি। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির এমন প্রতিশ্রুতি আছে যেগুলোর মাধ্যমে সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে দেশের উন্নয়নের সুফল পৌঁছানো নিশ্চিত করা হবে।

এ ছাড়া প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে আরও প্রয়োজনীয় সব সাংবিধানিক সংস্কার নিশ্চিত করবে। দীর্ঘ মেয়াদে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সঠিক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইনসহ প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের কথা বিএনপি বলেছে।

ইতিহাস সাক্ষী, বিএনপিই একমাত্র দল, যারা দেশের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে নিজের ক্ষমতাকে খর্ব করতে কিছুমাত্র দ্বিধা করেনি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে নিম্ন থেকে উচ্চ—সব আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা যখন রাষ্ট্রপতির একার হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল, তখন বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য গঠন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আর নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ, বদলি, অপসারণের জন্য বিধান করে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের শর্ত। বিএনপি চাইলে এই পরিবর্তন না-ও আনতে পারত এবং পূর্ববর্তী সরকারের করে যাওয়া সংশোধনীর দায়ও তার ছিল না।

এবারও সংস্কার প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলে বিএনপি মূলত প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরার কথাই বলছে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বলা হয়েছে, পরপর দুই টার্মের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। নিজের হাতকে এভাবে শৃঙ্খলিত করার নজির অতীতের মতোই আবারও সৃষ্টি করল বিএনপি।

এ ঘোষণায় বিএনপি দাবি করেনি, এটি একটি নিখুঁত এবং পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা। বিএনপি প্রস্তাবনাটি জনপরিসরে কেবল প্রকাশ করেছে। ঘোষণাতেই বিএনপি চেয়েছে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানাক। সেই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো রকম যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত আছে বিএনপি। সব ধর্ম-বর্ণ-দল-শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিককে বিএনপি এক সূত্রে গাঁথতে চায়। দেশের অবাঙালিদের ওপরও বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এটা কখনো সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বের পরিচয়বাদী রাজনীতির অস্থির সময় শুরুর প্রেক্ষাপটে এই সংকট থেকে আমাদের খুব দ্রুত মুক্ত হতেই হবে। তাই বিএনপি যৌক্তিকভাবেই চায় সব মানুষকে একত্র করে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ ছাতার নিচে এনে সবার জন্য সম্মানজনক একটি ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা...‘যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’। ( সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বর্ণিত)।

  • রুমিন ফারহানা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী