ইমরান খানের দল পিটিআই দৃশ্যত ভেঙে পড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা এক এক করে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সামরিক গোষ্ঠী ৯ মের ঘটনাকে পাকিস্তানের ‘নাইন ইলেভেন’ হিসেবে দাঁড় করানোয় তাঁরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে অনেকে পিটিআইয়ের জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়েছেন।
তবে যাঁরা দরিয়ায় ঝাঁপ দিয়েছেন, তাঁদের জন্য চিন্তার কিছু নেই। অন্য দলগুলো শিগগিরই তাদের জাহাজে এই নেতাদের তুলে নেবে।
সাবেক সহযোগীদের চেয়ে ইমরানের দম বেশি থাকলেও একাধিক দ্বন্দ্ব ও স্ববিরোধিতা তাঁকে আটকে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য ক্যাপিটল হিলের সিনেটরদের ‘এসওএস বার্তা’ পাঠাতে ব্যস্ত আছেন।
সেনা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে তৈরি হওয়া বিভাজন নিয়ে সেনাবাহিনী কতটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা উপলব্ধি করতে না পারা ইমরানের মারাত্মক ভুল ছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ৭০ বছর ধরে সেনাবাহিনী পাকিস্তান শাসন করছে। তবে তিনি ওই সাক্ষাৎকারে যা বলেননি, তা হলো ২০১৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীর কাঁধে চড়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তিন বছর পর সেনাবাহিনী নীতি পরিবর্তন করায় তাদের ‘প্রজেক্ট ইমরান’ ভেস্তে যায়।
একবার মেজাজ হারিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, একমাত্র জন্তুরাই নিরপেক্ষ। কারণ, নিরপেক্ষতা আর নিরপেক্ষ লোকের ফারাক তারা বুঝতে পারে না।
এ কথা যে কেউ বুঝতে পারছে, ৯ মে ইমরানের সমর্থকেরা যে সহিংসতা করেছেন, তা তাঁরা গণতন্ত্রের জন্য করেননি, মুক্ত গণমাধ্যমের দাবিতে করেননি অথবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে করেননি। শুধু ইমরানকে গদিতে ফিরিয়ে আনার জন্য পিটিআইয়ের নেতা–কর্মীরা সহিংসতা করেছেন।
অলৌকিকভাবে যদি রাজনৈতিক স্তরে একধরনের ঐক্যের আবির্ভাব ঘটে, তা হলেও পাকিস্তান অকার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং ভগ্ন অর্থনীতিতে আটকে থাকবে। কিন্তু আমরা যদি বর্তমানের মতো খারাপভাবে বিভক্ত থাকি, তাহলে আজকের ভয়াবহ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
ইমরান খানের ভণ্ডামি ও স্ববিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও পিটিআইয়ের মধ্যে ভাঙন ধরানো নিঃসন্দেহে মন্দ ধারণা। একইভাবে সামরিক শাসনও কাম্য নয়।
এখন পাকিস্তানের বাস্তবতা হলো, দেশটির অর্থনৈতিক ধস শতভাগ নিশ্চিত। ধনীদের কাছে মুদ্রার অবমূল্যায়নের অর্থ হলো আমেরিকায় তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ পাঠাতে এখন তাঁদের আগের তুলনায় দ্বিগুণ রুপি জোগাড় করতে হবে। আরও এক বছর পর সেই পরিমাণকে আবার দ্বিগুণ করতে হতে পারে। কিন্তু লাখ লাখ সাধারণ মানুষের জন্য এই পতন তাদের পেনশনকে অর্ধেক করে দিয়েছে। সমাজের সর্বনিম্ন স্তর এখন অনাহারে ভুগছে। ভিক্ষুকের সংখ্যা দৃশ্যমানভাবেই বহুগুণ বেড়ে গেছে। সামনে আরও খারাপ সময় আসছে।
এ অবস্থায় একটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো: আরও বড় অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? এখন থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন পদক্ষেপটি জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া দরকার?
প্রথমত, সাইরেন বাজিয়ে জরুরি অবতরণের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করে বাস্তব জ্ঞানসম্মত একজন বিশেষজ্ঞকে সে পদে নিয়োগ করতে হবে। যে মুহূর্তে পাকিস্তান আইএমএফের কাছে অতিরিক্ত ১১০ কোটি ডলারের জন্য ধরনা দিচ্ছে, ঠিক সেই সময় পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতির জন্য প্রকাশ্যে আইএমএফের সমালোচনা করা বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়।
দ্বিতীয়ত, যারা মুদ্রাস্ফীতির ভারে পিষ্ট হচ্ছে, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। চলন্ত ট্রাক থেকে আটার বস্তা ছুড়ে ফেলে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে দেওয়া সমাধান হতে পারে না। অপব্যবহার হবে না, এমনভাবে ভর্তুকি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ইমরান খানের ধর্মীয় বক্তৃতায় আকৃষ্ট হওয়া পিটিআইয়ের ডানপন্থী কর্মীরা সহিংস চরমপন্থী দলে যোগ দিতে পারেন, যাঁরা ব্যালট বাক্সের পরিবর্তে বন্দুকের শক্তিতে বিশ্বাস করেন। বাস্তবতা হলো ইমরান খানকে তাঁর ঔদ্ধত্য ও অহমিকার মূল্য দিতে হচ্ছে। তাঁর দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এটি আনন্দের নয়, এটি চিন্তার বিষয়। আমাদের বুঝতে হবে, সামনের রাস্তা কতটা কঠিন।
অলৌকিকভাবে যদি রাজনৈতিক স্তরে একধরনের ঐক্যের আবির্ভাব ঘটে, তা হলেও পাকিস্তান অকার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং ভগ্ন অর্থনীতিতে আটকে থাকবে। কিন্তু আমরা যদি বর্তমানের মতো খারাপভাবে বিভক্ত থাকি, তাহলে আজকের ভয়াবহ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
পারভেজ হুদভয় ইসলামাবাদভিত্তিক লেখক