ভাগনার গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ও দিমিত্রি উটকিন মস্কোর বাইরে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিমানটি উড্ডয়নের আগে আরোহী হিসেবে প্রিগোশিন ও উটকিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। ভাগনার গ্রুপের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার আগে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় বিমানটি আকাশ থেকে মাটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একজন নারী তাঁর বাগান থেকে মুঠোফোনে ভিডিওটি ধারণ করেন। এটা হতে পারে যে তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে কী হয়েছে, তা দেখতে গিয়ে বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার দৃশ্য ধারণ করেন।
জল্পনা চলছে, ইমব্রায়ার-৬০০০ বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরেই সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। মস্কোর শিরেমিটিয়েভো বিমানবন্দর থেকে সেটি সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে যাচ্ছিল। মস্কোর উত্তরাঞ্চলের কয়েক কিলোমিটার দূরে সেটি বিধ্বস্ত হয়। সেটিতে প্রিগোশিন, উটকিনসহ আরও সাত আরোহী ছিলেন।
কেউ কেউ আবার বলছেন, ভিন্ন আরেকটি ইমব্রায়ার বিমানে ছিলেন প্রিগোশিন। সেটি মস্কো থেকে বেলারুশে চলে গেছে। এ গল্প ছড়ালেও রুশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটাতেই ছিলেন প্রিগোশিন।
বিমানটি যদি সত্যিই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়, তাহলে ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরের সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। চীনের মাও সে–তুংয়ের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত লিন বিয়াও মঙ্গোলিয়ায় রহস্যজনকভাবে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছিলেন।
কেউ এখন অনুমান করে নিতে পারেন, প্রিগোশিন ও উটকিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলে পুতিনের অনুগত কর্মকর্তারা ভাগনার গ্রুপের নেতৃত্বে আসবেন। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়। ভাগনার গ্রুপের কর্মকর্তারা ভীষণ রকম স্বাধীন এবং প্রিগোশিন ও উটকিনের অতি ঘনিষ্ট।
প্রিগোশিন ও উটকিনকে সরিয়ে দেওয়ার পর ভাগনার গ্রুপ এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ল যে তাদের এখন নতুন নেতৃত্ব খুজতে হবে। ভাড়াটে সেনাদল ভাগনার বেলারুশ ও আফ্রিকার অনেক দেশে সক্রিয়। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এক দিন আগেই আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের কোনো মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে প্রিগোশিন ঘোষণা করেছিলেন, রাশিয়া ও আফ্রিকার জন্য ‘নতুন দিন’ আসছে।
২২ আগস্টের সেই ভিডিও বার্তায় প্রিগোশিন বলেছিলেন, ‘আমরা কাজ করছি। এখানে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। সবকিছুই আমরা ভালোবাসি। ভাগনার গ্রুপ পরিদর্শন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সব মহাদেশে আমরা রাশিয়াকে আরও মহান করে তুলব! আমরা আফ্রিকাকে আরও মুক্ত করব। আফ্রিকার জনসাধারণের জন্য ন্যায় ও সুখ নিয়ে আসব। আল–কায়েদা, আইএসআইএস ও অন্য সন্ত্রাসীদের জন্য আমরা দুঃস্বপ্ন। আমরা প্রকৃত বীরদের নিয়োগ করি এবং আমরা যে কাজ নির্ধারণ করি, তার সবটাই শেষ করি। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি শতভাগ পূরণ করি। কারণ, আমরা ততটুকুই প্রতিশ্রুতি দিই, যা আমরা পূরণ করতে পারি।’
২৩ আগস্ট পুতিন রাশিয়ার এরোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার সের্গেই সুরোভিকিনকেও বরখাস্ত করেছেন। ইউক্রেনের বাখমুত যুদ্ধের সময় প্রিগোশিনের পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সুরোভিকিন। তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। কেননা, দুই মাস হতে চলল, তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
একটা জল্পনা আছে, সুরোভিকিনকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এবং ভাগনার বিদ্রোহ দমনে কোনো ভূমিকা পালন না করতে পারার কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক সাংবাদিকের একটি কথোপকথন নিচে দেওয়া হলো—
প্রশ্ন: আপনি কি ক্ষমা করতে জানেন?
পুতিন: হ্যাঁ, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়।
প্রশ্ন: কোন ক্ষেত্রে ক্ষমা করতে পারেন না?
পুতিন: বিশ্বাসঘাতকতা।
কেউ এখন অনুমান করে নিতে পারেন, প্রিগোশিন ও উটকিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলে পুতিনের অনুগত কর্মকর্তারা ভাগনার গ্রুপের নেতৃত্বে আসবেন। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়। ভাগনার গ্রুপের কর্মকর্তারা ভীষণ রকম স্বাধীন এবং প্রিগোশিন ও উটকিনের অতি ঘনিষ্ট।
যা হোক, যে খবর বেরিয়েছে, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা নিশ্চিত যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিন তাঁর ক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছেন।
সে ক্ষেত্রে প্রিগোশিন, উটকিনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এ ঘটনাকে অপেক্ষাকৃত ভালো পরিসমাপ্তিই বলতে হয়।
স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির জ্যেষ্ঠ ফেলো
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত