ইলন মাস্ক আবার আলোচনায় এসেছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনীয় যোদ্ধা ও তাঁদের সমর্থকদের জন্য নিজ মালিকানাধীন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংকের ২০ হাজার টার্মিনাল বিনা মূল্যে খুলে দেওয়ার মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে তিনি এ যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা বলে তিনি ফের আলোচনায় এসেছেন।
স্টারলিংক হলো ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স–এর একটি শাখাপ্রতিষ্ঠান, যারা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, যেখানে ইন্টারনেটের অ্যাকসেস নেই, সেখানে সস্তায় নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে। ছোট ও সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য এই স্যাটেলাইট ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগে একটি বিপ্লব এনেছে। এ ছাড়া এটি যুদ্ধ পরিচালনার পন্থাও বদলে দিয়েছে।
ইলন মাস্ক বিনা মূল্যে ইউক্রেনীয়দের এ পরিষেবা দিয়েছেন, যাতে তাঁরা তাঁদের দেশকে নৃশংস রাশিয়ানদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারেন। সেই সুবাদেই ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে একের পর এক জয়লাভ করছে। সবাই ধরে নিয়েছিল, রাশিয়ানরা সহজেই জয়ী হবে; কিন্তু উল্টো তারা এখন মার খাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে বসতে পারেন—এমন একটি আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এ আশঙ্কাই ইলন মাস্ককে বিচলিত করেছে। তিনি মনে করছেন, যুদ্ধ যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন এবং সেটি করলে পুরো বিশ্ব অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সে কারণে তিনি চান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের
মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হোক। ইউক্রেন যাতে সমঝোতায় আসতে রাজি হয়, সে অভিপ্রায় থেকেই তিনি স্টারলিংক পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করার বিষয়ে তঁার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছেন।
মাস্কের বক্তব্য ইউক্রেন ও পশ্চিমজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মাস্ক রাশিয়ার সঙ্গে আপস করেছেন কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা অন্যায্য। মনে রাখা দরকার, স্পেসএক্স একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এটি দাতব্য সংস্থা নয়। এর স্টারলিংক স্যাটেলাইট অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। তারপরও ইলন মাস্ক ইউক্রেনের জন্য যে ছাড় দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি টেসলা এবং স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
এ মাসেই তিনি কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একটি সমঝোতার বিষয়ে তাঁর সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন। এই সমঝোতা হলে যুদ্ধ সমাপ্তির বিনিময়ে ইউক্রেনের রুশভাষী অধ্যুষিত পূর্ব অংশগুলোকে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। মূলত পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ এড়াতেই মাস্ক এ আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা মাস্কের যুক্তিসংগত এ আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একজন ইউক্রেনীয় কূটনীতিক অকূটনীতিকসুলভভাবে টুইট করে ইলনকে উদ্দেশ করে অশ্লীলভাবে গালি দিয়েছেন।
সম্ভবত ওই কূটনীতিক জানেন না, মাস্কের স্টারলিংক কনস্টেলেশনই একমাত্র জিনিস, যা ইউক্রেনকে বিশ্বব্যাপী টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত রাখে। ধারণা করা হয়, যদি স্টারলিংককে ইউক্রেনের অস্ত্রাগার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে এর যুদ্ধের সক্ষমতা ৬০ শতাংশ কমে যাবে। যে যুদ্ধে রাশিয়ানদের সহজে জয়ী হওয়ার কথা ছিল, সেই যুদ্ধে তারা বারবার পরাজিত হচ্ছে। এর বড় কারণ হলো, ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা তাঁদের রাশিয়ান শত্রুদের তুলনায় অনেক দ্রুত আক্রমণকে সমন্বয় করতে পেরেছেন; আর এটি মূলত সম্ভব হয়েছে স্টারলিংকের সহযোগিতার কারণে। রাশিয়া প্রথম থেকেই ইউক্রেনের টেলিকমিউনিকেশন–ব্যবস্থাকে বিকল করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্টারলিংকের কারণেই তারা সেটি করতে পারেনি।
এ পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি পর্যন্ত এ যুদ্ধকে টেনে আনতে ইউক্রেনীয়দের সহযোগিতা করতে বিনা মূল্যে স্টারলিংক পরিষেবা দেওয়ায় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন দুই কোটি ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে। কিন্তু স্পেসএক্স বলছে, স্টারলিংক পরিষেবা ব্যবহার করা বাবদ ইউক্রেনের যে ব্যয় হয়, তা আর তারা বহন করবে না। তারা বলেছে, স্টারলিংক ব্যবহার করার জন্য ইউক্রেনের এ বিল মার্কিন সরকারকে দিতে হবে। অন্যথায়, ইউক্রেনীয়রা এ সুবিধা হারাবে।
মাস্কের বক্তব্য ইউক্রেন ও পশ্চিমজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মাস্ক রাশিয়ার সঙ্গে আপস করেছেন কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা অন্যায্য। মনে রাখা দরকার, স্পেসএক্স একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এটি দাতব্য সংস্থা নয়। এর স্টারলিংক স্যাটেলাইট অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। তারপরও ইলন মাস্ক ইউক্রেনের জন্য যে ছাড় দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি টেসলা এবং স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা এমন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় এড়াতে মাস্কের প্রচেষ্টার প্রতিনিধিত্ব করে, যা একদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর মানুষের নির্ভরতা সম্পূর্ণ নিরসন করতে পারে।
একইভাবে স্পেসএক্স মানুষকে ভিনগ্রহে পাড়ি জমানোর বিষয়ে মাস্কের প্রতিশ্রুতির উদাহরণ দেয়। যাঁরা তাঁকে রাশিয়ার সঙ্গে আপসকারীর অপবাদ দিচ্ছেন, তাঁরা কি জানেন না, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, আমাদের পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করার আশঙ্কা তত বেশি।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
● ব্র্যান্ডন জে উইচার্ট ভূরাজনীতি বিশ্লেষক ও উইনিং স্পেস: হাউ আমেরিকা রিমেইনস এ সুপার পাওয়ার বইটির লেখক