চারপাশের গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। কারণ, শহর এলাকায় গাছপালা ও উন্মুক্ত স্থান গ্রামের তুলনায় অনেক কম। গাছপালা ছায়া দিয়ে এবং প্রতিনিয়ত পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে চারপাশকে শীতল রাখে। অন্যদিকে শহরে গাছপালা কম থাকে এবং ভূপৃষ্ঠ ইট-বালু-সিমেন্ট-কংক্রিটে বাঁধাই করা থাকে, ফলে শহরাঞ্চল গাছের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়, ইট-বালু-কংক্রিট সূর্যের তাপে অধিক উত্তপ্ত হয় এবং ভূপৃষ্ঠতল কংক্রিটে আচ্ছাদিত থাকায় পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাতাসের তাপমাত্রা হ্রাসেরও সুযোগ থাকে না। এ কারণেই চারপাশের গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরে বেশি তাপমাত্রার ‘হিট আইল্যান্ড’ বা তাপীয় দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্য অনুসারে, সূর্যের তাপে ইট-বালু-কংক্রিটের উন্মুক্ত পৃষ্ঠতল (রাস্তা, ফুটপাত, বাড়ির ছাদ ইত্যাদি) চারপাশের বাতাসের তাপমাত্রার তুলনায় ২৭ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। অন্যদিকে গ্রামীণ ছায়াঢাকা আর্দ্র অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সূর্যের তাপের মধ্যেও বাতাসের তাপমাত্রার কাছাকাছি থাকে। এ কারণে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরের কংক্রিটে ঢাকা গাছপালাহীন এলাকার তাপমাত্রা দিনের বেলায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি এবং রাতের বেলায় ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হতে পারে। (রিডিউসিং আরবান হিট আইল্যান্ডস: কমপেন্ডিয়াম অব স্ট্র্যাটেজিস, ইপিএ, ২০০৮, অধ্যায় ১, পৃষ্ঠা: ২)
অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং গাছপালা-মাঠ-পার্ক-জলাভূমি ধ্বংসের কারণে রাজধানী ঢাকা তপ্ত দ্বীপে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে এক গবেষণার সূত্র ধরে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এলাকার সঙ্গে দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শহরের সবুজ স্থান ও জলাভূমি সংকুচিত করে ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ঢাকার ভূপৃষ্ঠ এলাকা ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণা অনুসারে, ঢাকা মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন অথচ আছে সাড়ে ৮ শতাংশের কম। এসব কারণে গ্রীষ্মকালে চারপাশে সবুজ এলাকার তুলনায় ঢাকার অধিবাসীদের গরমের অনুভূতি ও কষ্ট বেশি হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের শহরগুলোকে হিট আইল্যান্ডের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হলে জলাভূমি ও পার্কগুলোকে সংরক্ষণ এবং ব্যাপক ভিত্তিতে গাছাপালা রোপণের কোনো বিকল্প নেই। ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্য অনুসারে, গাছপালা ও সবুজ অঞ্চলে ছায়া থাকার কারণে ছায়াবিহীন অঞ্চলের তুলনায় তাপমাত্রা ১১ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। এ কারণেই নগরের ঘরবাড়ির চারপাশে, রাস্তায় ও পার্কে বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়ন জরুরি।
গাছপালা লাগানো ও সবুজায়নের বদলে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষগুলোর মনোযোগ উন্নয়নের নামে গাছ কাটা ও গোটা শহরকে কংক্রিটে আচ্ছাদিত করার দিকেই বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ বছরের জানুয়ারি ও মে মাসে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের সড়ক বিভাজকে থাকা শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে। শুধু গাছ কাটাই নয়, নগর কর্তৃপক্ষগুলো যেন উঠেপড়ে লেগেছে বিদ্যমান পার্ক ও মাঠগুলোকে রেস্তোরাঁ, কফি শপ, বুকস্টলসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে। করোনাকালে আমরা দেখেছি, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটা পথ, খাবারের দোকানসহ নানান স্থাপনা তৈরির জন্য অন্তত দেড় শ বড় বড় গাছ কাটা হয়েছে।
অথচ রাজধানী ঢাকায় আর যা কিছুরই অভাব থাকুক না কেন, রেস্তোরাঁর কোনো অভাব নেই। অলিগলিতে, বড় রাস্তায়, শপিং মলে সর্বত্রই রেস্তোরাঁর দেখা মেলে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি অভাব হলো বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার মতো একচিলতে খোলা জায়গা, মাঠ, পার্ক ইত্যাদি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ কিংবা পার্ক নেই। ঢাকার আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় পার্ক ও খেলার মাঠের জন্য যথাক্রমে ১ হাজার ১৩৭ একর ও ১ হাজার ৮৭৬ একর এলাকা বরাদ্দ রাখা উচিত অথচ পার্ক আছে মাত্র ২৭১ একর জায়গাজুড়ে এবং খেলার মাঠে জন্য রয়েছে কেবল ২৯৪ একর।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো বিদ্যমান মাঠ, পার্ক ইত্যাদিকে রক্ষা করা ও সব বয়সের মানুষের হাঁটাচলা, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপযুক্ত পার্ক ও মাঠের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। নগর কর্তৃপক্ষ তার এই দায়িত্ব তো পালন করছেই না, উল্টো বিদ্যমান পার্কগুলোকে রেস্তোরাঁ ও দোকান দিয়ে ভর্তি করে ফেলছে। কী অদ্ভুত! যে শহরে রেস্তোরাঁর অভাব নেই, সেই শহরের ক্রমে সংকুচিত পার্কগুলোকেও কেন রেস্তোরাঁ দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে হবে!
স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকান বসিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে, অস্থায়ী ‘ফুড ভ্যান’ প্রকল্পের নামে ২০২২ সালের অক্টোবরে পার্কটিকে বছরে ৩ লাখ ৬১ হাজার, অর্থাৎ দৈনিক ৯৮৯ টাকার বিনিময়ে ইজারা দেওয়া হয় ডিএআর হোল্ডিং লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে। ইজারাদার সেখানে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো (দোকান ও গুদাম) তৈরি করেছে। এভাবে ৮৪ দশমিক ৩ কাঠা আয়তনের ছোট এই পার্কের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা ইজারাদারের দখলে চলে গেছে।
সেখানে পার্কের খোলা জায়গা ঢালাই করে রেস্তোরাঁর জন্য ৮টি টেবিল ও ২৩টি চেয়ার বসানো হয়েছে, চারপাশের মোট ২১টি গাছে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা দেখে রাতের বেলা পার্কটিকে নাইট ক্লাব বলে মনে হতে পারে। খোলা জায়গা ঢালাই করার ফলে তাপমাত্রা হ্রাসসহ প্রকৃতি রক্ষায় পার্কের যে ভূমিকা থাকে, সেটা ব্যাহত হচ্ছে। দোকান বসানোর ফলে হাঁটাচলার জায়গা সংকুচিত হয়েছে, রান্না করা ময়লা পানি জমে থাকার কারণে দুর্গন্ধ ও গ্যাসের চুলা জ্বালানোর কারণে গাছ-প্রকৃতি-পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
শুধু পার্ক বা উন্মুক্ত স্থান হিসেবে নয়, ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবেও বাহাদুর শাহ পার্ক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা জেলার পরিচিতমূলক সরকারি ওয়েবসাইটে পার্কটিকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে: ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে।
তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। ১৯৫৭ সালে (মতান্তরে ১৯৬১) সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। আমার জানা নেই, পৃথিবীর আর কোন দেশে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনায় রেস্তোরাঁ বসিয়ে চুলা জ্বালিয়ে পরিবেশ নোংরা করা হয়!
শুধু বাহাদুর শাহ পার্কই নয়, ঢাকা শহরের খুব কম পার্কই পাওয়া যাবে, যেখানে রেস্তোরাঁ, কফি শপ ইত্যাদি বাণিজ্যিক স্থাপনা বসানো হয়নি! প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, ধানমন্ডি এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র উন্মুক্ত জায়গা ধানমন্ডি লেক এলাকায় রেস্তোরাঁ, দোকানপাট বসিয়ে রীতিমতো ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত করে ফেলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২০১৩ সাল থেকে লেকটিকে সাতটি সেক্টরে ভাগ করে ছয়টি সেক্টর দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে ইজারা দিয়েছে দক্ষিণ সিটি। সেখানে চলছে ১৩টি রেস্তোরাঁ। ইজারার বিনিময়ে দক্ষিণ সিটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কিছু বেশি আয় করেছে, যা করপোরেশনের মোট রাজস্বের (২০২১-২২) মাত্র শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এই সামান্য অর্থ আয় করতে গিয়ে গোটা লেকের পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলো মূল কাঠামোর বাইরে ইস্পাত ও টিনের ছাউনি দিয়ে নিজেদের মতো করে সম্প্রসারণ করে নিয়েছে, যেখানে রান্নাবান্নার কাজ করা হয়। পার্কের খোলা জায়গায় শত শত চেয়ার ও টেবিল বসিয়ে বড় জায়গা খাবারের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। রেস্তোরাঁর কারণে লেকের পাড়ে ও পানিতে পড়ে থাকে খাবারের প্যাকেট, বোতল ও পলিথিনের ব্যাগ।
ঢাকা শহরের পার্ক, মাঠ, লেকের পাড়ের চারপাশে এমনিতেই নানান বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। এসব এলাকার চারপাশে দোকানপাট বা রেস্তোরাঁর এমন কোনো অভাব নেই যে পার্ক বা মাঠের মধ্যে বা লেকের পাড়ে রেস্তোরাঁ বসিয়ে নাগরিকদের খাওয়ার ব্যবস্থা না করলে তাঁরা খেতে পারবেন না। তা ছাড়া পার্কে মানুষ আসে ক্যালরি খরচ করতে, সেখানে কেন খাবারদাবারের এত আয়োজন রাখতে হবে, তা বোধগম্য নয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ডিএনসিসির আওতাধীন গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কে বসেছে কফি শপ ও বইয়ের দোকান। গুলশানের লেক পার্কে বসেছে আইসিডিডিআরবির রক্ত ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহের কেন্দ্র। আছে চা, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ও হালকা খাবারের দোকান। সম্প্রতি বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, ডিএনসিসি নতুন নির্মিত ও সংস্কার করা আরও পাঁচটি পার্ক ও খেলার মাঠ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পার্ক ও মাঠগুলো হলো শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক (গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক), বনানী রোড নম্বর ২৭ পার্ক (কামাল আতাতুর্ক পার্ক), শহীদ যায়ান চৌধুরী মাঠ (চেয়ারম্যানবাড়ি খেলার মাঠ), বারিধারা পার্ক, বনানী ব্লক সি পার্ক।
ঢাকা শহরের পার্ক, মাঠ, লেকের পাড়ের চারপাশে এমনিতেই নানান বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। এসব এলাকার চারপাশে দোকানপাট বা রেস্তোরাঁর এমন কোনো অভাব নেই যে পার্ক বা মাঠের মধ্যে বা লেকের পাড়ে রেস্তোরাঁ বসিয়ে নাগরিকদের খাওয়ার ব্যবস্থা না করলে তাঁরা খেতে পারবেন না। তা ছাড়া পার্কে মানুষ আসে ক্যালরি খরচ করতে, সেখানে কেন খাবারদাবারের এত আয়োজন রাখতে হবে, তা বোধগম্য নয়।
ইজারা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ সংগ্রহের যুক্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। ইজারা দিয়ে যে সামান্য অর্থ পাওয়া যায়, তার চেয়ে বহুগুণ অর্থ নাগরিকেরা করের মাধ্যমে প্রদান করেন। নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো জনগণের করের অর্থে এই গুরুত্বপূর্ণ এই উন্মুক্ত স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা, অর্থের বিনিময়ে প্রাকৃতিক ও উন্মুক্ত স্থান ইজারা দিয়ে সেগুলোকে বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত করা নয়।
‘মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০’-এর ৫ ধারা অনুসারে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা ওই জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা বা ব্যবহারের জন্য ভাড়া বা ইজারা দেওয়া নিষেধ। অথচ সরকারের সিটি করপোরেশনগুলো পার্ক বা লেকের পাড়ে রেস্তোরাঁ বসিয়ে এই আইন ভঙ্গ করে চলেছে।
অবশ্য এটা শুধু আইনভঙ্গের মামলা নয়। পার্কগুলোতে বাণিজ্যিক স্থাপনা বসানোর অর্থ হলো তাপনিয়ন্ত্রক হিসেবে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যম হিসেবে এগুলোর ভূমিকা খর্ব করা। নামে পার্ক কিন্তু ভেতরে যদি সবুজ না থাকে, যদি পার্কের খোলা জায়গা কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়, বাণিজ্যিক স্থাপনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, তাহলে নগরের তাপ কমানোর ক্ষেত্রে এগুলো কোনো ভূমিকাই রাখতে পারবে না। নগরকে বসবাসযোগ্য করতে হলে তাই স্থানীয় প্রজাতির বৈচিত্র্যময় গাছপালা লাগানোর পাশাপাশি বিদ্যমান গাছপালা, জলাভূমি, পার্ক, মাঠ ইত্যাদিকে সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নের নামে বাণিজ্যিক তৎপরতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’।
ই-মেইল: [email protected]