‘মন খুলে সমালোচনা’র পরিবেশ কি তৈরি হয়েছে

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ভাষ্যের চেয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মূল্যায়ন বা বক্তব্য অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল ইসলাম

একটি স্বৈরাচারী শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া। এর কারণ হলো, কোনো স্বৈরাচারী শাসক সমালোচনা বা ভিন্নমত সহ্য করতে পারেন না। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত।

প্রশ্ন হলো, স্বৈরাচার শাসকেরা কীভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেন? এর সহজ পদ্ধতি হলো, আইনকানুন, বিধিবিধান বা নীতিমালা নিজেদের সুবিধামতো তৈরি ও ব্যবহার করা। এ ছাড়া আইনবহির্ভূত অনেক পদ্ধতিও রয়েছে। এর মধ্যে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা বা ভয়ভীতি দেখানো হলো বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি; এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার কথা বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছে।

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি। এ ছাড়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পেশাদার সাংবাদিকেরাও নিয়োগ পেয়েছেন।

এর ফলে প্রত্যাশা ছিল, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে—এমন সব আইনকানুন বাতিল করা হবে; সাংবাদিকেরা সব ধরনের চাপ বা ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন; কিন্তু সরকারের মেয়াদ সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে কি কোনো ফারাক লক্ষ করা যাচ্ছে?

২.

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন দফায় সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন (সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি) বাতিল করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ‘অতিমাত্রায় আনুগত্য’ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘বিতর্কিত ভূমিকা’র অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিকের পাশাপাশি অনেক অপেশাদার ব্যক্তিকে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল, এমন তথ্যও জানানো হয়েছিল; কিন্তু যাঁদের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দলনিরপেক্ষ ও পেশাদার সাংবাদিকও ছিলেন। এর ফলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। (অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করায় ক্ষোভ সাংবাদিকদের, প্রথম আলো অনলাইন, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪)

এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের তরফ থেকে অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক স্যাম জাহান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি সেই কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।

সেই পোস্টে স্যাম জাহান খসড়া অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা সম্পর্কে লেখেন, ‘...আমার মতে, সেটা মোটেও সাংবাদিকবান্ধব হয়নি। বরঞ্চ সরকারবান্ধব হয়েছে। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে তাঁদের একটি হুড়োতাড়ার মধ্যে রেখে পুরো ব্যাপারটায় ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। এই নীতিমালা পাস হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদায় নেওয়ার পরে এটা ভয়ংকর একটা রূপ ধারণ করবে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের অপব্যবহারের জন্য বিস্তর ফাঁকফোকর রয়ে যাবে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ভীষণ সাংঘর্ষিক...’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২৫ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নীতিমালা অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক হিসেবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেতে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কমপক্ষে ২০ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা এবং বছরে অন্তত ১০টি প্রতিবেদন প্রচার বা প্রকাশের শর্ত দেওয়া হয়েছে (ধারা ৯.৩)। ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এ রকম কঠোর শর্ত আরোপ করা নিয়ে কোনো কোনো সাংবাদিক অসন্তোষ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ ধরনের শর্ত আরোপের ফলে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সাংবাদিকবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

৩.

গত ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। সেদিন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে তিনি জানান, স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন, গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন প্রণয়ন, সম্প্রচার আইন প্রণয়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংস্কার, সাংবাদিকদের বেতনকাঠামোর যৌক্তিক সংস্কার, অনলাইন নিউজ পোর্টালের লাইসেন্স দেওয়ার নীতিমালা যুগোপযোগী করা ও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। (তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় যা আছে, বাংলা ট্রিবিউন, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪)

নাহিদ ইসলামের এ ঘোষণার পর ১০০ দিন গত বছরেই পেরিয়ে গেছে। এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেন। তাঁর ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরে তিনি আর কিছু জানাননি। তবে তাঁর কর্মপরিকল্পনার বেশির ভাগই যে এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, সেটা সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই দৃশ্যমান।

৪.

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৭ ধারা দিয়ে শুরু; এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ‘সংস্করণ’ সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩; কয়েক বছর ধরে এই আইনগুলো হয়ে উঠেছিল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বা সাইবার স্পেসে মানুষের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার। এ কারণে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অনেকেই সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবি করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া যায়।

গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল হবে বলে জানিয়েছিলেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩–এর প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীবিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সেদিকেই যাব।’ (সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে: আসিফ নজরুল, প্রথম আলো অনলাইন, ৩ অক্টোবর ২০২৪)

এর মাসখানেক পর তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আইনটি বাতিল হবে এবং এই আইনের অধীন যত মামলা হয়েছে, সব মামলাও বাতিল হবে। (সাইবার নিরাপত্তা আইন এক সপ্তাহের মধ্যে বাতিল, মামলাও প্রত্যাহার: উপদেষ্টা নাহিদ, ডেইলি স্টার বাংলা, ৪ নভেম্বর, ২০২৪)

পরবর্তী সময়ে আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি খসড়া অনলাইনে প্রকাশের পর তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিতর্কের মুখে আরেকটি খসড়া প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই খসড়া আইনেরও বিভিন্ন ধারা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইনে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর ফলে এ বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে ৪ মার্চ একটি বিবৃতি দেয় ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ভিকটিমস নেটওয়ার্ক। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলে সরকারের আন্তরিকতায় ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণ-অভ্যুত্থানের বাংলাদেশেও কুখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল তো হয়নি; বরং এই আইনে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন এই আইনে মামলা নেওয়া বন্ধের পরিবর্তে মামলা নিচ্ছে এবং তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারের তোড়জোড় করছে।’ (সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সরকার জুলাই চেতনাকে হত্যা করছে, প্রথম আলো অনলাইন, ৪ মার্চ ২০২৫)

৫.

অন্তর্বর্তী সরকার বিগত স্বৈরাচারী আমলের বিভিন্ন আইনকানুন, বিধিবিধান বাতিল বা প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে এখন পর্যন্ত তা বহাল রেখেছে। এগুলোর পাশাপাশি বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো মব সংস্কৃতি। বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই মব উসকে দেওয়ার কাজ করছে। কিছুদিন আগে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল, কোথাও কোথাও হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

মব সংস্কৃতির পাশাপাশি ভিন্নমতের লোকজনকে নানাভাবে ‘ট্যাগ’ দেওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ বা ‘স্বৈরাচারের দোসর’—নির্বিচার এ রকম স্পর্শকাতর শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান পটভূমিতে কাউকে এ রকম ‘ট্যাগ’ দেওয়া একটি ভয়ংকর বিষয়। এর ফলে যে কেউ হামলা-মামলার শিকার হতে পারেন, সামাজিকভাবে হেনস্তা কিংবা নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ রকম চাপের মধ্যে মূলধারার সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ‘পপুলিস্ট’ বা জনপ্রিয় মতের বাইরে কোনো কিছু বলা বা লেখার সুযোগ এখন কতটা রয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

৬.

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বাড়ছে বলে উল্লেখ করে। সংগঠনটি বলেছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা দেখা দিয়েছিল যে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি হবে; কিন্তু সাংবাদিকেরা এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছেন। তাঁদের ওপর নিয়মিতই হামলার ঘটনা ঘটছে।’ (বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা বাড়ছে, সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রথম আলো অনলাইন, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল প্রথম আলো। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগঠনটির এ বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন...’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)

লক্ষণীয় হলো, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ১৭ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আরেকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) প্রতিবেদনেও একই রকম কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্রমে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা সরকারের পতনের ছয় মাস পরেও সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের জন্য হুমকি পাচ্ছেন এবং হামলার শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে খসড়া পর্যায়ে থাকা দুটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ (বাংলাদেশে হুমকি-হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা: সিপিজে, প্রথম আলো অনলাইন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস—দুটিই আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিশ্বব্যাপী তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদিকদের নিয়ে তাদের প্রতিবেদনের বিষয়ে কারও ‘একমত’ না হওয়াটা বেশ ‘বিস্ময়কর’ ব্যাপার। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কারও কারও এই ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ (কালচার অব ডিনায়াল) কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

৭.

ভুলে গেলে চলবে না, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ভাষ্যের চেয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মূল্যয়ন বা বক্তব্য অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার মাসখানেক পরে তাঁর এক বক্তৃতায় গণমাধ্যমকে ‘মন খুলে সমালোচনা’র আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু শুধু আহ্বান জানালেই হবে না, ‘মন খুলে সমালোচনা’র পরিবেশও তৈরি করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এটা পারার কোনো বিকল্প নেই।

  • মনজুরুল ইসলাম  প্রথম আলোর জে৵ষ্ঠ সহসম্পাদক