যুক্তরাজ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন বিক্ষোভ দমন করা হচ্ছে

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ চলছেএএফপি

ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যজুড়ে গত মে মাসে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে নেমেছিলেন। ক্যাম্পাসে মূলত ফিলিস্তিন সমর্থক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। তাঁদের বিক্ষোভ এক মাসের বেশি সময় গড়ানোর পর ক্যাম্পাসে পুলিশি দমন-পীড়ন এবং ছাত্র–কর্মীদের গণগ্রেপ্তার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। 

গাজার রাফা তাঁবু ক্যাম্পে ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে গত ৩ জুন ওয়েলসের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। সে সময় সেখান থেকে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় একজন প্রতিবন্ধী কর্মী ছিলেন, যিনি একটি ‘অবস্থান ধর্মঘট’ পরিচালনা করছিলেন। তাঁদের মুক্তি চেয়ে পরে শতাধিক ফিলিস্তিন–সমর্থক কার্ডিফ বে পুলিশ স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীদের পুলিশ হিংস্রভাবে পাঁজাকোলা করে, চুল ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার বদলে তাদের ভয় দেখানোর জন্য উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে, নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি পানি, বিদ্যুৎ ও শৌচাগার ব্যবহারের সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে।

একটি ফুটেজে দেখা গেছে, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ২২ বছর বয়সী একজন ছাত্র বলছিলেন, তাঁর সামনে কীভাবে হিজাব পরা একজন মুসলিম নারীকে স্রেফ বর্ণবাদী চিন্তা থেকে পুলিশ আটক করেছিল। ওই নারী বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার কেউ ছিলেন না। 

সোয়ানসিতে গত ৪ জুন পুলিশ ১২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি মেয়ে ও তার মায়ের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তারা দুজনকেই গ্রেপ্তার করে। এই দুঃখজনক ঘটনার পর বিক্ষোভ আয়োজকেরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে নির্লজ্জ ব্যবহার, বর্ণবাদী ও অসহিষ্ণু আচরণ করায় সাউথ ওয়েলস পুলিশকে তিরস্কার করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।

তাঁদের অভিযোগের জবাবে সাউথ ওয়েলস পুলিশের একজন মুখপাত্র এবং ওই এলাকার একজন পুলিশ সুপার বলেছেন, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক ও সহিংস ব্যবহার করা হয়নি। 

নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সহিংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তারা সেখানে পুলিশ ডেকে আনেন এবং ১৪০ জনের বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন অভিযান চালানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিবাদ করার সময় পুলিশ ছাত্রদের লাঠিপেটা করেছিল এবং হয়রানি করেছিল। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার বদলে তাদের ভয় দেখানোর জন্য উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে, নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি পানি, বিদ্যুৎ ও শৌচাগার ব্যবহারের সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে।

নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, ‘আমাদের নিরাপত্তাবিষয়ক দল নর্দামব্রিয়া পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী ছিলেন না, তাঁদের কেউ শিক্ষার্থীও ছিল না।’ 

নিউক্যাসলের একজন মেডিকেল ছাত্র যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাডভোকেসি সংস্থা কেজ ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা প্রায় এক মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু তাঁদের দাবিসংক্রান্ত কোনো ধরনের আলোচনায় না গিয়ে একেবারে বিনা উসকানিতে পুলিশ সহিংস উপায় বেছে নিয়েছিল। 

আরও পড়ুন

কিন্তু ইসরায়েলের সমর্থক বিক্ষোভকারীরা কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এবং লন্ডনের সোস ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হলেও তাদের পুলিশি ক্র্যাকডাউন বা জোরপূর্বক সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি। এভাবে যুক্তরাজ্যজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈষম্যমূলক দমন–পীড়ন চলছে। আশার কথা, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে মুখর হওয়া শিক্ষার্থীদের এত সহজে দমিয়ে রাখা যাবে না। 

মাইরা মির্জা হিউম্যান এইড অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত