চা–বাগান নাকি দাসত্বের বাগান

‘এখানে গাছ হেলালে টাকা পাওয়া যায় এ রকম কথার প্রলোভনেও এসেছিল অনেক মানুষ।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগানের এলাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ। এই কমলগঞ্জের চাম্পারাই চা-বাগানে আমার প্রায় বছর পনেরো ধরে আসা–যাওয়া। শুধু এই চা-বাগান নয়, এই এলাকার প্রায় সব চা-বাগানেই আমার নানা সময়ে যাওয়া ও থাকা হয়েছে। কোনো এনজিওর বিশেষ প্রকল্প বা কোনো রকম অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই এসব বাগান, বিশেষত চাম্পারাইয়ের সঙ্গে আমার এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চাম্পারাইতে চা–বাগানের মানুষদের জীবন নিয়ে ‘বাগানিয়া’ নামের একটা ফিল্ম শুট করি, যার ইংরেজি নাম ‘গার্ডেন অব মেমোরিস’। চা–বাগানের মানুষের স্থানীয় নাম বাগানিয়া। তিন প্রজন্মের তিন বাগানিয়ার জীবনচক্রকে ঘিরে এই চলচ্চিত্র আবর্তিত। যার মূল কথা হলো, মৃত্যু ছাড়া বাগানের দাসত্ব থেকে বাগানিয়ার কোনো মুক্তি নেই।

প্রায় এক শ ঘণ্টার ফুটেজ এডিট করে এক ঘণ্টার ফিল্মে দেড় শ বছরের দাসত্বের ইতিহাস আর কতটাই–বা দেখানো সম্ভব? বঞ্চনা কতটুকুই–বা দেখানো সম্ভব? সময় যেন চা–বাগানে থমকে গেছে। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীর মতো একটা সমাজ যেখানে কর্তৃপক্ষের প্যানপটিক সারভেইলেন্সের মধ্যে শ্রমিকেরা যেন নির্জীব শ্রমযন্ত্র, যাঁদের ঘামে-শ্রমে উৎপাদিত চা পান করে আমরা চুমুকেই তাজা হয়ে উঠি।

‘মদ খাই সব ভুলে থাকার লাগি’

গল্পের শুরু বাগানের সবচেয়ে বেশি বয়সের সর্দার, যারা কুলি হিসেবে পরিচিত সেই অশীতিপর পদ্মলাভ বুনারজিকে নিয়ে। চাম্পারাই বাগান তৈরি হয়েছিল ১৯১০–এ। পদ্মলাভের পূর্বপুরুষ ওডিশার কটক থেকে এসেছিল। এসেছিল বললে তো ভুল হবে, জোরজবরদস্তি করে তাদের তুলে আনা হয়েছিল। ১৮৪০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে চা–শিল্প শুরু হওয়ার পর ১৮৫৪ সালে যখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়, এর আগে থেকেই এই জোরপূর্বক অভিবাসন শুরু। অবিভক্ত ভারতের নানা ধরনের নিম্নবর্গ গোষ্ঠী, আদিবাসীরা ছিল ব্রিটিশদের প্রথম টার্গেট। এখানে গাছ হেলালে টাকা পাওয়া যায় এ রকম কথার প্রলোভনেও এসেছিল অনেক মানুষ।

পদ্মলাভের স্মৃতি–বিস্মৃতির এক দোলাচলপূর্ণ অবস্থায় আমার এন্ট্রি। পদ্মলাভ ১২ বছর বয়স থেকে হাঁড়িয়া খায়, কেউ নাকি কখনো তাকে পানি খেতে দেখেনি। ‘মদ খাই একটু শান্তি পাওয়ার লাগি, সব ভুলে থাকার লাগি’—সব সময় এটাই বলত পদ্মলাভ।

পদ্মলাভ বুনারজি

ইংরেজদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করায় বাগানে পদ্মলাভের অন্য রকম এক গুরুত্ব ছিল। সে বিড়বিড় করত, ‘আমি ব্রিটিশদের কুলি—এই বাগানে কুত্তা নাই আমার মতো’। নিজেকে কুত্তার মতো ওয়াফাদার বলতে পারে কোনো মানুষ! ক্যামেরা ধরে থাকি আমি, ওয়াফাদার অবসারভেসশনাল ফিল্মমেকার হয়ে, মুহূর্তের পর মুহূর্ত ধরা পড়ে। সেই মুহূর্তগুলো এই শহুরে চোখ দিয়ে দেখলে বোঝা যায় এ এক দাসের জীবন। যে দাসেরা কেউ কেউ এটাকেই স্বাভাবিক বলে মাথা পেতে নিয়েছে। কর্তৃপক্ষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাগানের শ্রমিকেরা মুখোমুখি কখনোই কথা বলে না। গলা পর্যন্ত মদ্যপান করে, সারা দিনের ব্যথা-বঞ্চনা ভুলে গিয়ে তারা বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অন্যায় হচ্ছে। পদ্মলাভ এক অতৃপ্ত আত্মার মতো এঘর–ওঘর করতে থাকে আর বলতে থাকে ৪ ফুট বাই ৪ ফুট, বাগানের গাছের মাপ এখনো তার মাথায় ঘুরছে।

পদ্মলাভ ছিল আগের যুগের সর্দার, যখন বাগানে টাকার প্রচলন ছিল না। ব্রিটিশরা নিজেদের মতো করে একটা কারেন্সি প্রচলন করেছিল, যাতে এই শ্রমিকেরা বাগান থেকে বাইরে যেতে না পারে। অপর দিকে বাগানের মেডিকেল-কর্মী তারাপ্রসাদ যাদবের ছেলে তরুণ সজয় যাদব, ঢাকার সেন্ট জোসেফ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করে আবার চা–বাগানেই ফিরে আসে। নিজের ভাষা, আচার–আচরণ সর্বোপরি বাগানের টান উপেক্ষা করে বাগানের বাইরে থাকা সজয়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি, তাই সে বাগানে সর্দার হয়ে ফিরে আসে।

স্কুলে যাওয়াটাই যাদের জন্য বিলাসিতা

সজয়ের মতো শিক্ষিত ছেলেরা কেন এই গণ্ডির বাইরে যেতে পারছে না, তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সজয়ের মতো চা–বাগানের বেশির ভাগ মানুষের আইডেনটিটি এই চা–বাগানেই, কারণ এখানেই তার ভোজপুরিভাষী জনগণ, তার কৃষ্টি, সংস্কৃতি সব চাগাছের শিকড়ের মতোই শক্ত হয়ে আছে। সজয় সব সময়ই চা–শ্রমিকের অধিকার নিয়ে সরব ছিল, তাই বাগানের কর্তৃপক্ষ তাকে বেশি ঘাটাতে সাহস পেত না। বাগানের শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছিল সজয় ও তার বন্ধুরা, কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। কারণ, বাগানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার প্রকট।

চা–বাগানে ৬ থেকে ১৫ বছরের ৬ হাজার ৭৮৫ জন ছেলেমেয়ের উপর আউট অব স্কুল চিলড্রেন ইন দ্য টি গার্ডেন অ্যান্ড এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটিজ (২০০৫) শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, চা জনগোষ্ঠীতে প্রতি ৫ জনে ২ জন স্কুলে যায় না। অনেক ক্ষেত্রে দূরবর্তী বাগানে এই সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি।

বাগানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার প্রকট

গবেষকেরা স্কুলে না যাওয়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, জীবনধারা, ভাষার পার্থক্য, বাগান থেকে স্কুলের অধিক দূরত্ব এবং যাতায়াতব্যবস্থার সমস্যার কথা উল্লেখ করেন (নাথ, ইয়াসমিন, শাহ জামাল, ২০০৫)। এসব তথ্য–উপাত্তের পর বিনা মূল্যে ব্র্যাকের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম যা শুরু হয়, তা একটা সার্কাসের থেকে কম কিছু নয়। একটা ঘরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর একই সঙ্গে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন একজন শিক্ষক। তার মান নিয়ে আমার কথা বলার কিছু নেই। কারণ, এর আগে তো এ শিক্ষাও তারা পেত না।

আমার ক্যামেরার সামনে হাসতে খেলতে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া চন্দন ড্রপ আউট হয়ে গেল। কারণ, তার বৃত্তির টাকা সংসারের কাজে খরচ হয়ে যাচ্ছিল? আর না হয়েই–বা যাবে কোথায়? আধপেটা খেয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে পড়তে যাওয়া চা–শ্রমিক পরিবারের জন্য একটা বিলাস ছাড়া আর কিছুই না। এখন চা–বাগানে গেলে চন্দনের দেখা পাওয়া যায় না, কখনো শুনি পানের বরজে কাজ করতে গেছে, কখনো বা উপজেলার দোকানে কাজ করছে।

এক টুকরো ঘরের মায়া...

চা চাষ যেহেতু একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক, তাই এসব শ্রমিকের জন্য চা চাষের জমির আশপাশের এলাকাতেই একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, যাকে ‘লাইন’ বলা হয়। যেহেতু ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই ছিল প্রধান, শ্রমিককল্যাণ নয়, তাই শ্রমিকদের বাসস্থানবিন্যাসও করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যেন একই গোষ্ঠীর লোক এক জায়গায় বেশি না থাকে এবং দল পাকাতে না পারে। প্রথম থেকেই বাগানে দেশি মদের পাট্টা বসানো হয়েছে, যাতে করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর এটাই তাদের একমাত্র বিনোদন হতে পারে। সন্ধ্যার পর তাই চন্দনের বোন শান্তিকে যখন জিজ্ঞাসা করি, ‘তোমার দাদি কই?’ অন্ধকার ঘরে কুপির একপাশ থেকে সে জানায়, ‘দাদি মদ খাইতে গ্যাসে।’ সন্ধ্যার পর পদ্মলাভের ছেলে তার ঘরে পাট্টা বসায় আর আকণ্ঠ পান করে, কানু বিষাদের সুরে গান ধরে—
মোর দাদুকো আনলা ব্রিটিশ ডাকি কি
হায় ধনি, চারাগাছ কাটলি পয়সা পরুচি
গাছের নিচে আমরা ঢুই ঢুই মরুচি…

নুনিয়া জাতির কানু যখন এই গান গায়, পাশের ঘরে পদ্মলাভ হয়তো অতীতের কথা ভাবে। আইন-কানুন ব্রিটিশরা যেভাবে করেছে, তাতে এই জনগোষ্ঠীর একটা নির্দিষ্ট পন্থায় শুধু দাস হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাসস্থান নিয়ে কথা বলতে গেলে চা–শ্রমিকের ভূমি অধিকারের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে।

চা–শ্রমিকদের ঘর

বাংলাদেশির শ্রম ও শিল্প আইনের (২০০৬) বাসস্থান হতে উচ্ছেদ–সংক্রান্ত ধারায় (৩২) শ্রমিকের চাকরির অবসানের ৬০ দিনের মধ্যে মালিক কর্তৃক বরাদ্দকৃত বাসস্থান ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চা–শ্রমিকের ক্ষেত্রে এই আইন খাটে না। চা–শ্রমিকের পরিবারের কোনো সদস্যকে চা–বাগানে কাজ করতেই হবে, নয়তো বাগানে নামহীন অবস্থায় সে তার জায়গার অধিকারও হারাবে। যে কারণে চা–বাগানের জমির ওপর শর্ত সাপেক্ষে থাকার অধিকার নিশ্চিত হয়, তাই চা–শ্রমিক পরিবারের কাউকে বাগানে কাজের হাল ধরতেই হবে। তাই সপ্তাহান্তে ১২০ টাকা মজুরি, ৭ হাত বাই ১৪ হাত মাটির ঘর ও আরও কিছু ক্ষীণ সুবিধা নিয়েই চা–শ্রমিকেরা মুখ বুজে কাজ করে যায়। তাই তারা তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য জোর গলায় দাবি তুলতে পারে না, পাছে যেটুকু থাকার জায়গা আর সুবিধা আছে, তা–ও চলে যাবে।

মজুরি বা রেশন: বৈষম্যের শেষ নেই যেখানে

অনেকেই বলে থাকেন, চা–শ্রমিকেরা অন্যান্য অনেক সুবিধা পায় যে এত কম টাকার মজুরি পুষিয়ে যায়। তো কী কী সেই সুবিধা? প্রথমেই আসে বাসস্থান, বিদ্যুৎ, পানি, স্যানিটেশন, রেশন, শিক্ষা, বোনাস ইত্যাদি। একটু গভীরে গেলেই দেখা যায়, এ সব কটিই একরকম ভ্রান্ত ধারণা।

প্রতিদিন ১২০ টাকা হারে মজুরি শর্ত সাপেক্ষ। এক দিনে ২৩ কেজি পাতা তুললে ১২০ টাকা মজুরি, ১ কেজি বেশি তুললে ৪ টাকা ২৫ পয়সা বেশি পাওয়া যাবে, আর এক কেজি কম তুললে ৫ টাকা ২০ পয়সা কাটা যাবে। এবার আসা যাক রেশনে। রেশনের ক্ষেত্রে পরিবারের স্বামী কাজ করলে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম আটা বা চাল পাবে, সে ক্ষেত্রে স্ত্রী পাবে ২ কেজি ৮০০ গ্রাম, ১২ বছরের নিচে দুজন শিশু ২ কেজি ৪০০ গ্রাম করে রেশন পাবে। কিন্তু স্ত্রীর নামে কাজ থাকলে স্বামী রেশন পাবে না। আর ১২ বছরের উপরে শিশুদের জন্য কোনো রেশন নেই। তাহলে কি দাঁড়াল? যে পরিবারে ধরুন স্ত্রীর নামে কাজ আর কোনো ছোট শিশু নেই, তারা মূলত রেশন পাচ্ছে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। তাদের বৃদ্ধ বাবা–মা এবং আরও ছেলেমেয়ে থাকতে পারে, যারা মূলত ওই ৩ কেজি ২০০ গ্রাম রেশনের ওপর নির্ভরশীল। যে শিশুকে মা ২০০৭ সালে শুধু একটা ডিম কিনে দিত (কারণ তখনো তার মুরগি কেনার সামর্থ্য ছিল না) সে এখন ১২০ টাকা থেকে ১৫ টাকা দিয়ে কি একটি ডিম কিনে দিতে পারছে?

আন্দোলন কেন হারিয়ে যায়

অনেকেই ভাবতে পারে, চা–শ্রমিক নেতারা কী করছেন? তাঁদের ইউনিয়ন কী করছে? যেকোনো একজন প্রতিনিধিকে বাছাই করা, তাঁকে শহরের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং ধীরে ধীরে সে যেন তাঁরই গোষ্ঠীর অন্যদের শোষণ করতে পারে, সেই জায়গায় তাঁকে পৌঁছে দেওয়ার সংস্কৃতি বছরের পর বছর চা–বাগানে চলছে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলন ও দাবিদাওয়াকে পথে বসিয়ে দেওয়ার জন্য এটাই স্বাভাবিক চর্চা। ২০০৭ সালে সজয়ের সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয়, তখন চা–শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ২৭ টাকা। আজকে ২০২২ সালে সেই মজুরি ১২০ টাকা। এই পনেরো বছরে চা–শ্রমিকেরা দফায় দফায় আন্দোলন করে মজুরি মাত্র ৯৩ টাকা বাড়াতে পেরেছে, অথচ সরকারি হিসাবমতে, বাংলাদেশের জনগণের দৈনিক মাথাপিছু আয় প্রায় ৮১২ টাকা।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা–শ্রমিকদের আন্দোলন

বেশ কিছুদিন ধরেই চা–বাগানের শ্রমিকেরা মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে ধর্মঘট, কর্মবিরতি শুরু করেছে। হাড্ডিমাংস এক হয়ে যাওয়া শ্রমিকেরা এর আগেও এমন অনেকবার কর্মবিরতি করেছেন, তাঁদের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ঢাকায় এসে দেনদরবার করে যান। সেই সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায় চা-শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন।

তাই যতবারই এই আপাত এপলিটিকাল জনগোষ্ঠীর যেকোনো অধিকারের দাবি শুনি, নিজেকে আরও ছোট মনে হয়, আত্মগ্লানি আরও বেড়ে যায়। মনে হয়, পদ্মলাভ আসলে সব জেনেবুঝেই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত আর মৃত্যুর দিন গুনত। কারণ, মৃত্যু ছাড়া তো এই চক্র থেকে মুক্তি নেই।

আশা ছাড়ি না তবু

এই সবকিছুর পরও জীবন বিস্ময়কর। আমার হাইপোথিসিসকে ভুল প্রমাণ করে পরিবর্তন ঘটেছে। সজয় যাদব ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছে, অন্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে চা বাগানিয়ারা নিজেদের মানুষকে নির্বাচিত করেছে। আর ২০১৬–তে ক্লাস এইটের ড্রপ আউট চন্দন বাউরি এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার আর সব হাইপোথিসিসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চা–বাগানে আরও পরিবর্তন আসুক, এই দাসের জীবনের গ্লানি থেকে চা বাগানিয়ারা মুক্তি পাক। তারা স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষ হয়ে বাঁচুক। আসুন এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াই। সকাল–বিকেল চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সময় একটু হলেও ভাবি, কার রক্ত ঘাম করা পানীয় আমরা পান করছি।

  • হুমায়রা বিলকিস চলচ্চিত্র নির্মাতা।