বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ভেঙে দিতে চাইছে

অগ্রসরমাণ পৃথিবীতে আমাদের যে বিষয়গুলোতে সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী ও সহায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে লিখেছেন নাদিম মাহমুদ

গুচ্ছ ভর্তি–পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার দাবিতে মানববন্ধনপ্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গুচ্ছপদ্ধতি’র ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রথম আলোয় লিখছি। এই নিয়ে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের নানা সময়ে প্রতিক্রিয়া ই-মেইলে পাই। তবে মাসখানেক আগে একটি ব্যতিক্রম প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম। মাসরুর রহমান নামের প্রথম আলোর একজন পাঠক আমাকে যে ই-মেইল লিখেছিলেন, তা আমি হুবহু দিতে চাই। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি তো সব সময় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে লেখালেখি করেন, কিন্তু এখন কিছু লিখছেন না কেন? গুচ্ছ তো ভাঙতে চলেছে। আপনি কি ঘুষ খেয়েছেন?’

মাসরুর রহমান আরও বলেছেন, ‘গুচ্ছপদ্ধতির মাধ্যমে কম খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেত অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। মাত্র দেড় হাজার টাকায় সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যেত, আর মেধাতালিকার ভিত্তিতে প্রতিটি ভার্সিটিতে ৫০০ টাকায় সাবজেক্ট চয়েস দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু গুচ্ছপদ্ধতি বাতিলের ফলে এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার ফি দিতে হবে, যা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে।’

আমি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো নিয়ে সিরিজ লিখেছি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ‘গুচ্ছপদ্ধতি’ বাতিলের সম্ভাবনায় মাসরুরের মতো সাধারণ পাঠকেরা প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। যে কাঠখড় দহন করে আজকের এই গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার উৎসব চলছে, সেখানে হঠাৎ করে গুটিকয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের খবর নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং হতাশার সঞ্চার করে।

গত বছর গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রথম আওয়াজটি তোলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তারা কোনো ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়ে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সেই আগের নিয়মেই তিনটি আলাদা ইউনিটই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছিল। ওই সভায় গুচ্ছে ‘সায়’ দেওয়ার অপরাধে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির ওপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক মারধর করার অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছিল। এ বিষয় নিয়ে আমি প্রথম আলোয় লিখেছিলাম গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষাকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ ও শিক্ষক নির্যাতন কেন? সেই যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গুচ্ছেই শেষ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করলেও এবার তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রথম আলোর খবর বলছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদাভাবে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করেছে। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, কৃষি ও প্রকৌশল গুচ্ছেও ভাঙন ধরছে। ইতিমধ্যে চুয়েট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুচ্ছ থেকে বের হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এমন এক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যখন দেশ একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা এমন একটি সময়কে বেছে নিচ্ছে, যেখানে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ দেওয়ার সমতুল্য।

কিন্তু কেন এ সিদ্ধান্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রহণ করতে যাচ্ছে? এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে কার লাভ বা কার ক্ষতি হবে? যেখানে প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিসিএসসহ সরকারি চাকরির আবেদন ফি সরকার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে দেশের ভর্তি-ইচ্ছুক লাখো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভোগান্তি বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কেন?

কতটা অসহায় জাতি হলে আমরা এমন এই বালখিল্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছি, যেখানে বিশ্বের বড় বড় দেশ বহু আগে থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করে আসছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছোটাছুটি, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরনের সঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল না থাকা—এমন সীমাহীন নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যুগের পর যুগ সেকেলে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া হয়েছে।

সেই জায়গা থেকে বের হয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।

আমরা যখন স্বপ্ন দেখছি ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে ‘সমন্বিত ভর্তি’ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন গুচ্ছ ভাঙার পাঁয়তারা করছে। এটা শোভন নয়, জাতির জন্য মঙ্গলজনকও নয়। এ তৎপরতা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প কিছু শিক্ষকের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার একটা চেষ্টা। ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি, পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন—এগুলো থেকে অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ নিতেই তাঁরা এমন তৎপরতা শুরু করেছেন।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে সরাসরি সরকারি অর্থায়নে। জনগণের করের টাকায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি পরীক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের উৎস হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ভর্তির ফরম থেকে পাওয়া অর্থকে এত বড় করে দেখা হলে রাষ্ট্র যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আমাদের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করছে, তাতে একধরনের কলঙ্ক লেপনও হয় বলা যায়।

এ কথা সত্য, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ শুরু হওয়ার পর দেশের ৭৩ অধ্যাদেশে চলা চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে এই কাতারে আনা সম্ভব হয়নি। সেটা মূলত সরকারের বড় ব্যর্থতা ছিল। তবে আমরা অনেকেই আশাবাদী ছিলাম, আগের সরকার যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ জানাত, তাহলে হয়তো এই অমানিশা কাটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার আমাদের লাখো শিক্ষার্থীকে ভোগান্তির পথে নিয়ে যাবে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

গুচ্ছে যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তার অধিকাংশ কৃত্রিম সমস্যা। আর এ সমস্যা দিনের পর দিন জিইয়ে রেখে ‘গুচ্ছের ভোগান্তি নিয়ে’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একধরনের ভুল বার্তা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভোগান্তি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আড়াই বছর আগেই প্রথম আলোয় দুই পর্বে লিখেছিলাম—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কৃত্রিম জটিলতা কাটবে কীভাবে?’

এরপরও বিষয়টি নিয়ে গুচ্ছ অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তেমন গুরুত্ব দেয়নি; বরং সমন্বয়হীনতার গুচ্ছকে অজনপ্রিয় করার পাঁয়তারা করেছিলেন কিছু শিক্ষক, যা কখনোই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। ফলে এখন তাঁরা গুচ্ছ থেকে বের হতে চাইছেন। কোনো ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ ছাড়াই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা আদৌ করছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।

গত বছরের ১৫ এপ্রিল ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে ‘একক ভর্তি’ পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। এর প্রায় ছয় মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ‘একক ভর্তি’ পরীক্ষার একটি খসড়া অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটা ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বের খেসারতে আটকে যায়।

দুই প্রতিষ্ঠানের চালাচালি করা চিঠি গণমাধ্যমে আসার পর স্পষ্ট হয়ে যায়, মূলত একক ভর্তি পরীক্ষা ও টাকাপয়সা নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ারকে কেন্দ্র করে খসড়া অধ্যাদেশটি বাতিল হয় যায়। ইউজিসিকে পুনরায় খসড়াটি ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ করে’ পাঠানোর জন্য গত বছর ২৭ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হলেও দীর্ঘ এক বছরে আমরা কার্যত এই খসড়ার কোনো অগ্রগতি জানতে পারিনি।

এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকারের কাঁধে ডজন ডজন চ্যালেঞ্জ জমা পড়ছে। তবে অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রশাসন সরে যাওয়ায় নিয়োগ দিতে হয়েছে নতুন উপাচার্যদের। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় এসেছেন নতুনরা।

ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে, কারা সামলাবে—এটা নিয়ে বিস্তারিত ধাপে ধাপে এর আগে প্রথম আলোয় লিখেছি। এসব বিষয় নিয়ে পুনরাবৃত্তি করে লেখাটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না। শুধু একটি বিষয়ই আলোচনা করা প্রয়োজন যে গত বছর ইউজিসি যে খসড়াটি তৈরি করেছিল, তা মূলত ইউজিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমতাকেন্দ্রিক ছিল এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে অর্থ ব্যয়ের ‘সরল বিশ্বাসের’ অজুহাত ছিল, যা ভর্তি পরীক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের চোখে দেখা হয়েছে।

ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ইউজিসির ওই উদ্দেশ্যমূলক অধ্যাদেশের কারণে বিতর্কিত হয়ে যাওয়া খসড়াটি পুনর্লিখন করা যেমন জরুরি, তেমনি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ (রাজনৈতিক মদদপুষ্টদের নিষিদ্ধ) জাতীয় ভর্তি পরিচালনা পরিষদ (এনটিএ) গঠন করা উচিত। এ পরিষদে শুধু উপাচার্যদের না রেখে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, মনস্তত্ত্ববিদ এবং পাঠ্যপুস্তক লেখক মিলে একটি শক্তিশালী ও বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা কঠিন কিছু নয়।

এ ধরনের কমিটির স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে ‘এনটিএ’ যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে সঠিক এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে চায়, এই সংস্থার কাঠামোতে আমলাতান্ত্রিক পদপদবি না থাকাই বাঞ্ছনীয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি কিংবা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব ছাড়াই এ কমিটির পক্ষে ভর্তিপ্রক্রিয়া পরিচালনা করা দুরূহ কিছু নয়।

এখন সিদ্ধান্তটি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। তাঁরা যদি এই উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে ভর্তি পরীক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে সংস্কার দাবি করে আসছি, তা বাস্তবায়ন করতে আমাদের নতুন উপাচার্যরা এক সুরে সায় দিতে পিছপা হবেন না। শুধু চাই সদিচ্ছা। বছরের পর বছর ধরে মেডিকেল কলেজ, সরকারি কর্ম কমিশন লাখো শিক্ষার্থী/চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা নির্বিঘ্নে আয়োজন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে।

এখন সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কাঠামোর মধ্যে এনে ‘নিয়মতান্ত্রিক গুচ্ছভিত্তিক’ ভর্তি পরীক্ষার নিয়মাবলিকে সংস্কার করে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ খসড়া প্রণয়ন করতে সময় লাগবে না। গুচ্ছপদ্ধতিতে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলোর যৌক্তিক সমাধান করতে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন হবে যুগোপযোগী, যা লাখো শিক্ষার্থীর দুর্বিষহ ভোগান্তি কমিয়ে ফেলবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যেকোনো মূল্যে হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বুঝতে হবে, অগ্রসরমাণ পৃথিবীতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তন। আমরা সেই সরল পথে হাঁটছি, যেখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা খুশি থাকবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি ‘গুচ্ছপদ্ধতি’ ভেঙে যায়, তাহলে আমরা যে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার চিন্তাভাবনা করছি, যে উচ্চশিক্ষা আমাদের দারিদ্র্য থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে, তা কখনোই অর্জিত হবে না। আমাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য হলেও যুগোপযোগী এই ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। কিছু ব্যক্তির সাময়িক আর্থিক লাভের জন্য একটি সফল ও ভালো উদ্যোগকে গলা টিপে হত্যা করা বর্বরতার শামিল।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একই ছাতার তলে রাখতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিচ্ছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ‘গুচ্ছপদ্ধতি’র মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের যাবতীয় নির্দেশনা সরকারকে গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই।

  • ড. নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।