২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা কতটা নিশ্চিত হয়েছে

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর জন্য সমমজুরি, কাজের ঘণ্টা কমানো, উন্নত কর্মপরিবেশ ও ভোটাধিকারের দাবির দুর্বার আন্দোলনের পটভূমিকায় জন্ম হয়েছিল দিবসটির। নারীমুক্তি, নারী–স্বাধীনতা, নারী অধিকারের বিষয়গুলো দেশকালভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা গ্রহণ করলেও এদের মধ্যে একটি সর্বজনীন সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবছর দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে নারী-পুরুষের সমতার কথা এবং নারীদের প্রতি সব রকমের অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-অবিচার ও বৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়।

এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়ে সারা পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত রূপান্তর ও ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের অবদানের কথা স্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

দেখা যায়, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সারা পৃথিবীতেই প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ কম। বাংলাদেশে এ হার আরও কম। ২০২১ সালের ১ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘জেনারেশন ইকুইটি ফোরাম’-এ  বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘টেক স্টার্টআপ ও ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবমতে দেখা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ২৯ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনা করলেও কর্মক্ষেত্রে মাত্র ১২ শতাংশ নারী কাজ করছেন, যাঁদের অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কাজ করেন। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অবস্থান শতকরা ১ শতাংশের চেয়েও কম। এ ছাড়া আইসিটিতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ শতাংশেরও কম। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২২ অনুযায়ী, নারী অধিকার ও নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য নিরসন, পেশাগত ও কারিগরি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীর দক্ষতাবৃদ্ধির আশানুরূপ উদ্যোগ না থাকায় নারীরা পিছিয়ে পড়ছেন।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়নসহ সব ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সব ক্ষেত্রে নারীর সমান প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সম-অংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীর প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো প্রতিনিয়ত চিহ্নিত করা অপরিহার্য।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করতে পারলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, যা নারীর প্রয়োজন ও লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের জন্য এর প্রতিবন্ধকতাগুলোও দূর করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার একদিকে যেমন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার অন্যদিকে দেখা যায়, কিছু দুর্বৃত্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে নারী নির্যাতন করছে। ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে নারীরা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করছেন এবং দিন দিন এর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। কিন্তু অনেকেরই সাইবার জগতে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা না থাকার কারণে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুর্বৃত্তরা একে নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইউএন উইমেনের ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সারা বিশ্বেও ৫১টি দেশের ৩৪ শতাংশ নারী অনলাইন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে একশনএইডের ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ নারী অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাইবার প্ল্যাটফর্মগুলোতে নারীর সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ভুক্তভোগী নারীর বেশির ভাগই পুনরায় হয়রানির আশঙ্কায় অভিযোগ দিতে চান না।

আরও পড়ুন

নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-তে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর স্বার্থের অনুকূলে লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন নীতি, কৌশলপত্রে নারীর স্বার্থের অনুকূলে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা সুনির্দিষ্টভাবে থাকলেও সেটি অনেক সময় কাগজেই থেকে যায়। বাস্তবায়ন থাকে সুদূরপরাহত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ নারী-পুরুষের সমান অংশীদারত্ব নিশ্চিত করার জন্য এখনই গ্রাম ও শহরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটালকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

এ জন্য নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির জ্ঞান ও ব্যবহারের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে সমতা আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নারীর ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়নসহ সব ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সব ক্ষেত্রে নারীর সমান প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সম-অংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীর প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো প্রতিনিয়ত চিহ্নিত করা অপরিহার্য।

  • সারা জামান উন্নয়নকর্মী