যেসব দেশে শান্তি বিরাজমান, সেসব দেশেই পর্যটনশিল্প সহজে বিস্তার লাভ করে। কারণ, পর্যটনশিল্পের প্রথম কথাই হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া পর্যটনে উন্নত দেশগুলোতে পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেসব দেশে পর্যটনশিল্প হচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শিল্প।
আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, শুধু পর্যটনশিল্পকে উপজীব্য করেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোপরি ইতিবাচক ভাবমূর্তি নির্মাণে কতটা এগিয়েছে তারা।
অপরদিকে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প সঠিক দিকনির্দেশনা, উপযুক্ত নেতৃত্ব, সরকারের শীর্ষস্থান থেকে সুনজর সর্বোপরি বেসরকারি পর্যটনশিল্পের নেতৃত্বের অক্ষমতা—সবকিছুই পর্যটনশিল্পকে ক্রমশ অতল গহ্বরে পতিত করছে।
আর ঠিক এমনি বাস্তবতায় আজ ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। প্রতিবছর পর্যটন দিবস আবর্তিত হয় একটি প্রতিপাদ্য ঘিরে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পর্যটন শান্তির সোপান’। শুরু করেছিলাম এই শান্তি নিয়েই। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে করোনার ভয়াবহতায় সারা বিশ্বে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশে সাধারণত পর্যটন মৌসুম শুরু হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে। কিন্তু বিগত কিছুদিন সারা দেশের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ এবং ইনবাউন্ড পর্যটন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেটের হোটেলগুলো অন্য বছরের তুলনায় তুলনামূলক ফাঁকা। ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের বিদেশি পর্যটন গ্রুপের বুকিংগুলো সব বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
পর্যটনশিল্প হচ্ছে একটি বহুমাত্রিক শিল্প, যার সঙ্গে কমবেশি প্রায় ২০-২১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা সরাসরি জড়িত। সরকারের অন্য সংস্থাগুলো পর্যটনকে পুরোপুরি ধারণ করে না।
শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে বেশ কিছু ট্যুরিস্ট জেনারেটিং দেশগুলো তাদের দেশের পর্যটকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও পর্যটকদের বেড়ানোর উৎসাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
এখন পর্যন্ত পর্যটন যে বাংলাদেশে চালু রয়েছে এবং বিদেশি পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা, অন-অ্যারাইভাল ভিসা, পর্যটন স্থানগুলোতে যথাযথ সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরকারের কোনো মহল থেকেই কোনো ভাষ্য, প্রেসনোট, দূতাবাসগুলো কর্তৃক পর্যটকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ—এমন সব কর্মকাণ্ড নেওয়া হয়নি। যার কারণে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এখনো আলো-আঁধারের দোলাচলে দুলছে।
দেশে বর্তমানে একটি নতুন সরকার রয়েছে। আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের খবর হচ্ছে, প্রায় তিন দশক ধরে বেসরকারি স্টেকহোল্ডাররা সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি দ্বারা পর্যটনশিল্প পরিচালনার কথা বলে আসছে। এর প্রধান কারণ পর্যটনশিল্প হচ্ছে একটি বহুমাত্রিক শিল্প, যার সঙ্গে কমবেশি প্রায় ২০-২১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা সরাসরি জড়িত। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, সরকারের অন্য সংস্থাগুলো পর্যটনকে পুরোপুরি ধারণ করে না। কিন্তু যদি কোনো আদেশ-নির্দেশ, পরিপত্র সরকারের শীর্ষ মহল থেকে উঁচু থেকে নিচু অবধি যায় তাহলে সবাই পালনে বাধ্য হয়।
আনন্দের খবর হচ্ছে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার অধীনেই এখন পর্যন্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ন্যস্ত রয়েছে। সুতরাং এখনই হচ্ছে উপযুক্ত সময় বিকাশমান পর্যটনশিল্পকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার। আর এ জন্য উপযুক্ত মার্কেটিং, প্রমোশন আর ব্র্যান্ডিংয়ের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে পর্যটনশিল্প, বিশেষত বিদেশি পর্যটকেরা বাংলাদেশমুখী হবেই।
দেশে পর্যটনশিল্পের বেসরকারি কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি র্যাপিড রিকভারি পর্যটন পরিকল্পনা গ্রহণ করে দেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবেই পর্যটনের সুদিন ফিরবে। আর এটাই বিশ্ব পর্যটন দিবসে আমাদের সম্মিলিত চাওয়া।
তৌফিক রহমান সেক্রেটারি জেনারেল, পাটা বাংলাদেশ কেন্দ্র