>
সময়মতো ঋণ না পেয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অস্ত্রের মুখে বনানীর বাসায় ধরে এনে নির্যাতন চালিয়েছে সিকদার গ্রুপ। ব্যাংকটির এমডিকে উদ্দেশ করে গুলিও ছোড়েন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার। হায়দার আলী মিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যানও। আর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেছে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। একাধিক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
প্রথম আলো: একজন এমডিকে গুলি করা হয়েছে। বাসায় ধরে এনে নির্যাতন চালানো হয়েছে। শুনেছেন বিষয়টা?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: হ্যাঁ, শুনেছি। এ ঘটনা জানার পর আমার মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, আইন কি আমাদের শাসন করছে, নাকি কয়েকটি ধনী গ্রুপ আমাদের শাসন করছে। ব্যাংকারদের নিয়ে আমরা আগ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন শুনে আসছি। তাঁরা চাপে আছেন, আবার কেউ কেউ ঘুষ নিয়ে কাজ করছেন। এখন যেটা জানা গেল, সেই চাপটা ভয়ংকর। একজন এমডিকে ডেকে নিয়ে গুলি করা, বাসায় নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো সাংঘাতিক ব্যাপার। এমডিকে গুলি করার ঘটনা চিন্তাও করা যায় না। এ কাজটা করল সরকার ঘনিষ্ট একটা ধনী গ্রুপ, যাদেরও একটি ব্যাংক রয়েছে। এরা অনেক ক্ষমতাবান, অনৈতিক ক্ষমতাবান।
প্রথম আলো: পুরো বিষয়টি জেনে কী মনে হচ্ছে, এভাবে কি চলতে থাকবে, নাকি এটাই শেষ?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: ঘটনা ঘটার ১২ দিন পর মামলা হয়েছে। এর কারণ হলো, এক্সিম ব্যাংকের মালিকেরাও ধনিক গোষ্ঠী। এক ধনিক গোষ্ঠী গুলি করেছে, আরেক গোষ্ঠী তাদের রক্ষা করতে চেয়েছে। এ জন্য মামলা করতে বিলম্ব করেছে। আমাদের সন্দেহ হয়, এই মামলা কি কখনো আলোর মুখ দেখবে। যেমনভাবে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই ধোরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন, এরাও একইভাবে পাড় পেয়ে যাবে কি না। এটা কেমন শাসন! এই অপশাসন থেকে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে যেতে চাই। তাহলেই সব সমাধান হবে। আর যে পরিস্থিতি চলছে, এমন ঘটনা এখনই বন্ধ হবে না। এটা আমরা জানতে পেরেছি, অনেক ঘটনা অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: ব্যাংকাররা চাপে পড়লে কী সমস্যা? এতে কি গ্রাহকদের কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: ব্যাংকাররা এভাবে চাপে পড়লে জনগণের আমানত অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। চাপে পড়ে ঝুঁকি বিবেচনা না করে ঋণ দেবে, যা আদায় হবে না। ফলে জনগণের আমানত খেয়ানত হয়ে যাবে। এমনিতে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত। আর এসব ঋণই তো খেলাপি হয়ে পড়ে, এ কারণে ব্যাংকটি স্বেচ্ছায় এ ঋণ দিতে চায়নি।
প্রথম আলো: এ অবস্থায় আপনার চাওয়া কী? এর সমাধান কীভাবে হবে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: সরকারের উচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কারা অপরাধ করল, তা বিবেচনা না করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সরকারের কাছে অনুরোধ করতে পারে। কারণ, এটা ব্যাংকের এমডিদের অস্তিত্বের বিষয়। তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কি না, তার পরীক্ষা।
প্রথম আলো: এ ঘটনাার অন্য ব্যাংকারদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হবে? অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: এর ফলে সব ব্যাংকারই আতঙ্কে ভুগবেন। প্রতিনিয়ত গুলি খাওয়ার আতঙ্কে ভুগবেন ঋণ কর্মকর্তারা। ব্যাংক খাত এমনিতেই খারাপ অবস্থায়, এর মাধ্যেম খাতটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা হয় গুলি খাবেন, না হলে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখন রাজনৈতিক সরকারই পারে এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে। আমরা এখনো সে আশায় বসে আছি। নিশ্চয়ই একদিন সুদিন আসবে।
আরও পড়ুন:
‘গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব’