কৃষকের ‘লাভের গুড়জীবী’ কিছু ‘দ্বিপদী পিপীলিকার’ দৌরাত্ম্য এই দেশে চিরকালই ছিল। এখনো আছে। ভবিষ্যতে থাকবে না, এমন কথা জোর দিয়ে বলার সুযোগ কম। দেশে বিপণনব্যবস্থা এতটাই চাঁদাবাজকবলিত যে ‘ফসল বিপণন সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে’, এমন রাজনীতিঘনিষ্ঠ সুলভ বাণী বিশ্বাস করা কৃষক অতি দুর্লভ হয়ে পড়েছে। তবে কৃষকের লাভের গুড়ে পিঁপড়ার ‘সামাজিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত’ থাবা অন্তত ‘সহনীয় পর্যায়ে’ রাখা যেতে পারে—এমন আশা এখনো উবে যায়নি, এটিই বড় আশার কথা। বরগুনার তরমুজচাষিদের কাছ থেকে ‘সিস্টেমেটিক কায়দায়’ স্থানীয় প্রভাবশালীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া বন্ধ করে স্থানীয় পুলিশ সেই আশাকে জোরালো করে তুলেছে।
অন্য এলাকার তুলনায় বরগুনার তরমুজ সুস্বাদু বলে এখানকার তরমুজের দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। এটিকেই আখের গোছানোর সুযোগ বানিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দেখা গেছে, বরগুনার ৯ নম্বর এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে তরমুজচাষিদের একটি সমিতি বানানো হয়েছে। সেই সমিতিতে তরমুজচাষি নন এমন লোক আছেন এবং প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই সমিতির ‘মাথা’। পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি তরমুজ কিনতে পারেন না। সমিতির মাধ্যমে চাষিদের তরমুজ বিক্রি করতে হয় এবং তরমুজপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা সমিতির তহবিলে জমা দিতে হয়। ওই তহবিলের একটি টাকাও তরমুজচাষিদের হাতে যায় না। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী লোক এ টাকা নেন।
অর্থাৎ তরমুজচাষি যখন তাঁর খরচের টাকা উঠবে কি না, সেই হিসাব করছেন, তখন যে ব্যক্তি একটি তরমুজও আবাদ করেননি, এক লাখ তরমুজ বিক্রি হলে বখরা হিসেবে তাঁর পকেটে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা চলে যাবে। এমন অভিযোগ পেয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেন অভিযুক্ত ব্যক্তি ও চাষিদের ডেকে জানিয়ে দেন এ ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। স্থানীয় চাষিরা তাঁদের ইচ্ছামাফিক তরমুজ বিক্রি ও কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই ট্রাক ও অন্য পরিবহন ঠিক করতে পারবেন। এতে চাষিদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে চাষিদের ওপর কোনো ধরনের চাপ দিতে না পারেন, সে জন্য পুলিশ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
সারা দেশে সব কৃষিপণ্যের বাজারেই কমবেশি এ অবস্থা চলছে। স্থানীয় পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা যদি শাহজাহান হোসেনের মতো সাহসী ভূমিকা রাখেন ,তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে, সন্দেহ নেই।