স্বাভাবিক সময়ে স্বজনেরা কারাবন্দীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, কারাগারে তাঁরা কেমন আছেন, জানতে চান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর তাঁরা বন্দীদের সঙ্গে দেখা করেন। কেউ কেউ বন্দীদের জন্য পছন্দের খাবারদাবারও নিয়ে আসেন। কিন্তু করোনাকালে দেশব্যাপী লকডাউন থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় কারাবন্দীরাই তাঁদের স্বজনদের নিয়ে উদ্বেগে আছেন। মঙ্গলবার প্রথম আলোয় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো খবরে আরও বলা হয়, কারাবন্দীরা যাতে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারেন, সে জন্য নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের মুঠোফোনে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। এ জন্য ১০টি নির্ধারিত নম্বর চালু করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তঁারা এ সুযোগ পাবেন এবং একজন বন্দী সর্বোচ্চ ৫ মিনিট কথা বলতে পারবেন। প্রতি মিনিটে তাঁদের এক টাকা করে দিতে হবে। প্রতিটি নম্বরে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা আছে। ফলে বন্দীরা কী কথা বলেন, সেটিও কর্তৃপক্ষ নজরে রাখতে পারবে। গত কয়েক দিনে ১০টি মুঠোফোনে বন্দীরা তঁাদের ৭০০ জন স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এতে কারা কর্তৃপক্ষ কিছু নগদ অর্থও পেয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ৬৩ জন নারীসহ ১ হাজার ৬০০ বন্দী আছেন। লকডাউনের আগে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ জন দর্শনার্থী কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। লকডাউনের পর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৫০-এ। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ করোনাকালে বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ, বন্দীদের স্বাস্থ্য ও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে কর্তৃপক্ষ উপেক্ষা করতে পারে না। কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের মধ্যে আছে ক্লোরিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটযুক্ত পানি ছিটানো, ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি ছিটানো, বন্দীদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।
লকডাউন চলাকালে নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার যে সুযোগ করে দিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। দণ্ডিত কিংবা বিচারাধীন হোক, সব দেশেই বন্দীরা কিছু সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার ভোগ করেন। শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার নয়, আরও কিছু কারাগারও মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। আবার অনেক কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বন্দীদের সেই সুযোগ দেয়নি। আমরা আশা করব, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে লকডাউন চলাকালে দেশের সব কারাগারেই বন্দীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। এতে বন্দী ও তঁাদের স্বজনদের উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমবে।