সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ও পথচারীদের সচেতনতায় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার যে উদ্যোগ সিলেট নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ গ্রহণ করেছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সিলেট নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যান চলাচলের নিয়মকানুন ও সড়কে চলাচলে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে গঠন করছে ট্রাফিক নিয়মাবলিবিষয়ক শিক্ষামূলক কার্যক্রম ‘ট্রাফিক এডুকেশন নেটওয়ার্ক’, সংক্ষেপে টেন। গত মঙ্গলবার শহরতলির লাক্কাতুরা সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গঠন করা হয় টেনের চতুর্থ কমিটি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কমিটি করা হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা সপ্তাহের প্রতি রোববার অ্যাসেম্বলির সময় শিক্ষার্থীদের সড়কে চলাচলের ১০টি নির্দেশনা পাঠ করাবে। এ ছাড়া স্কুল ছুটির পর সড়কের পাশে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে ১৫-৩০ মিনিট পথচারীদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে।
সিলেট ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবসে প্রধানমন্ত্রী সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পথচারীদের সচেতন করার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের একটি গুরুতর সমস্যা। এ দুর্ঘটনায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছে। নানা বিশৃঙ্খলার কারণে আমাদের যাতায়াতব্যবস্থা আজ এক করুণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক, গাড়ি চালানোর সময় চালকদের প্রতিযোগিতা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, ট্রাফিক আইন মানার ব্যাপারে উদাসীনতা ইত্যাদি কারণে ঘটে সড়কে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার আইন প্রণয়নসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো খুব একটা কাজে আসেনি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন সিলেট নগর ট্রাফিক পুলিশের সচেতনতা সৃষ্টিকারী এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সড়ক পরিবহন খাতে কীভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হয়, সেটিও তারা সংশ্লিষ্টদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকেই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী সড়কে যান চলাচলের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রচারণায় শিশুদের সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সিলেট ট্রাফিক বিভাগের মতো উদ্যোগ অন্য মহানগরগুলোর ট্রাফিক বিভাগও নিতে পারে। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে হয়তো দেখা যাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।