প্রতিবছর শীত মৌসুমে দূরদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসে আশ্রয় নেয়। তবে হাওরাঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে ও খাদ্যের সন্ধানে সুদূর সাইবেরিয়াসহ মধ্য ও উত্তর এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পাখি আসে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এসব পাখির অনেকগুলো আর ফিরে যেতে পারে না। নিষ্ঠুর পাখিশিকারিদের হাতে মারা পড়ে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরে আসা পাখিদের সঙ্গে এখন ঠিক এ রকম ঘটনাই ঘটছে। কিন্তু এসব পাখিশিকারিকে প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসছে না।
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হাকালুকি হাওরে বিষ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিধন করছেন শিকারিরা। গভীর রাতে স্থানীয় কিছু শিকারি পাখি নিধনের উদ্দেশ্যে হাওরের বিভিন্ন বিলের কাছে একধরনের কীটনাশক ছিটিয়ে দেন। ভোরে পাখি ও হাঁস খাবারের খোঁজে বিলে নামে। তখন কীটনাশক খেয়ে তারা মারা যায়। পরে শিকারিরা সেগুলো কুড়িয়ে গলা কেটে বস্তায় ভরে স্থানীয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও লোকজনের কাছে বিক্রি করেন।
যে পাখিরা শুধু জীবন ও খাদ্যের সন্ধানে আমাদের দেশে আসে, লোভের বশবর্তী হয়ে কিছু লোক সেই পাখিদেরই হত্যা করছে। পাখির প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। একশ্রেণির মানুষের রসনার তৃপ্তির জন্য পরিযায়ী পাখিদের এভাবে নিধন করা বর্বরতারই নামান্তর। আর এভাবে বিষ দিয়ে মারা পাখি ও হাঁস কি আসলেই খাওয়ার উপযোগী? যাঁরা খাচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, পাখিরা আমাদের পরিবেশের এক বড় সম্পদ। তারা শুধু পরিবেশের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বনের খাদ্যশৃঙ্খলে স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখা, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বীজের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পাখির। তাই যে করেই হোক পাখি বাঁচাতে হবে। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এভাবে নিষ্ঠুর কায়দায় অবাধে যে পাখি নিধন হচ্ছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কারও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। মাঝেমধ্যে অবশ্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। তবে সামান্য অর্থ জরিমানা করা ছাড়া আর কোনো শাস্তি দিতে দেখা যায় না। যাঁরা পাখি নিধন করছেন, তাঁদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। দিতে হবে কঠোর শাস্তি। আমরা চাই পাখি হত্যা বন্ধ করায় বন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রশাসন ভূমিকা পালন করবে।