সেতু যদি নির্দিষ্ট মানের উচ্চতাবিশিষ্ট না হয়, তাহলে তার নিচ দিয়ে বড় বড় নৌযান চলতে পারে না। এতে সড়কপথের যানের গতি বাড়লেও নৌযান চলাচল মাঝপথেই থেমে যেতে বাধ্য। তাই উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার স্বার্থে নৌ, রেল ও সড়কপথ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় করে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকার যানজট নিরসনে যখন বৃত্তাকার নৌপথ সৃজনের কথা ভাবা হচ্ছে, তখন সেই সম্ভাবনার সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সমন্বয়হীনতা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, টঙ্গীতে তুরাগ নদের ওপর রেলওয়ে যে সেতু নির্মাণ করছে, তার উচ্চতা পানির স্তর থেকে বেশ কম। ফলে কমে এসেছে সেতুর তলদেশ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ। শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু রেলওয়ে তা শোনেনি। নির্মাণাধীন রেলসেতুটির উচ্চতা কিছুটা বাড়ানো হলেও সেটি নৌচলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী হবে না বলে বলছে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথের সম্ভাবনা অনেক কমে এসেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে ঠিক একই ধরনের বিপত্তি ঘটে কি না, সেটিই বড় চিন্তার বিষয়। নির্মিতব্য রেলপথে ১৩টি সেতু বানানো হবে। এর মধ্যে ১১টির উচ্চতা নৌযান চলাচলের উপযোগী রাখতে পরামর্শ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। শোনা যাচ্ছে, সে পরামর্শে রেল বিভাগের আগ্রহ কম।
বর্তমানে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। তার মানে মূল কাজ বা নকশা প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ অবস্থায় সেতুগুলো বানানোর বিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে রেল বিভাগের মতবিনিময় ও একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার। যদি এসব সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর দরকার হয়, তাহলে সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে। অন্যথায় এ ক্ষেত্রেও নির্মীয়মাণ তুরাগ নদের ওপরের রেলসেতুটির ঘটনারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে। এতে ছোট ছোট নৌযান চলতে পারবে। কিন্তু জাহাজ বা তুলনামূলক বড় নৌযান চলতে পারবে না।
সড়কের মতো চাইলেই রেলসেতুর উচ্চতা যেকোনো জায়গায় বাড়ানো যায় না। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার প্রকল্পের অধীন সেতুগুলো যেহেতু এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় করে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।