‘অপচয় রোধ করি, খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করি’ স্লোগান নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গত সোমবার সচেতনতামূলক যে সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড ও যুব সংগঠন ইয়ুথ অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার যৌথভাবে এই র্যালির আয়োজন করে। এতে কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এখন বিশ্বের এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ খাবারের অপচয় হয়। মাঠ থেকে আমাদের থালা পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রতিটি স্তরেই খাদ্য নষ্ট হয়, যা এখন একটা বৈশ্বিক উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) হিসাব করে দেখিয়েছে, প্রতিবছর পৃথিবীতে ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়। নষ্ট হওয়া খাবার পুরো দুনিয়ার মোট খাদ্য জোগানের এক-তৃতীয়াংশ। ভোক্তারা প্রতিদিন, বিশেষ করে ধনী দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট করে, তা পুরো আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে উৎপাদিত খাদ্যের সমান। জাতিসংঘের পরিবেশসংক্রান্ত কার্যক্রমের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর পৃথিবীতে যে পরিমাণ ফল ও সবজি উৎপাদিত হয়, তার অর্ধেক নষ্ট হয়। এত খাবার নষ্ট হয় অথচ পৃথিবীজুড়ে অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটায় কোটি কোটি মানুষ। এটা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই খাদ্যের অপচয় রোধ করা জরুরি।
এটা লক্ষণীয় যে উৎসবের দিনগুলোতে খাবারের অপচয় হয় সবচেয়ে বেশি। এটা বাইরের দেশগুলোতে যেমন হয়, তেমনি আমাদের দেশেও হয়। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচুর খাবারের অপচয় হয়। এসব উৎসবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার রান্না করা হয়। এ ছাড়া প্লেটে খাবার নেওয়া হয় বেশি করে, যার কিছুটা খাওয়া হয় আর বাকিটা পড়ে থাকে। এসব খাবারের স্থান হয় ডাস্টবিনে। হোটেল, রেস্তোরাঁতেও প্রতিদিন প্রচুর খাবার নষ্ট হয়।
সকল পর্যায়ে খাবারের অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এখানে ব্যক্তির যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব আছে। খাদ্য অপচয় রোধে ফ্রান্সে ২০১৭ সালে এক আইন হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, সুপার মার্কেটগুলোর বেঁচে যাওয়া খাবার গরিব মানুষকে দিতে হবে। তা না করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা ও জেল দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালে ইতালি খাবারের অপচয় রোধে আইন করেছে। আইন অনুযায়ী, বিক্রি না হওয়া খাবার ব্যবসায়ীরা ফেলে না দিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দান করবেন।
ফ্রান্স ও ইতালির অনুসরণে আমাদের দেশের সরকারও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। এ ছাড়া কালীগঞ্জে যেভাবে সচেতনতামূলক সাইকেল র্যালি হয়েছে, এ রকম র্যালির আয়োজন সরকার দেশজুড়ে করতে পারে।