এবারের গন্তব্য নাইক্ষ্যংছড়ি

মাঝারি একটা দল নিয়ে এবারের সূর্য উৎসব। পাহাড়ি বন্ধুদের দেশে পাহাড়ের পাদদেশে মিলব মেলাব প্রাণে প্রাণ। বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে যাত্রা। পাহাড়, লেক আর প্রায় শীর্ণ হয়ে যাওয়া ঝরনাধারার আহ্বান অথবা আকর্ষণ—যা-ই বলি না কেন। প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাত্রা। স্থানীয় মানুষেরা বিরক্ত হবেন, এমন কোনো কাজ আপনি আমি আমরা করতে পারব না। ঝাকানাকা চকচকে কাপড়, উচ্চ স্বরে কোলাহল অথবা মাইক—এসব কিছুই করা বা রাখা যাবে না। 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত কার্যক্রম হচ্ছে এই সূর্য উৎসব। বছরের প্রথম দিনটিতে দেশের অপরিচিত বা সাধারণত যাওয়া হয়ে ওঠে না—এমন জায়গাতে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করা এবং বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখা। 

স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আয়োজন থাকবে রকেট, বিমান, পেরিস্কোপ এবং পিরামিড বানানোর কর্মশালা। প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হবে সূর্য উৎসবের আয়োজকদের পক্ষ থেকেই। প্রত্যেকেই তাদের তৈরি করা সামগ্রী নিজ গৃহে নিয়ে যাবে। প্রয়োজন হবে না কোনো ফি দেওয়ার। বরং সঙ্গে থাকবে সনদ আর রংবেরঙের টি-শার্ট। ওই যে বললাম, অংশগ্রহণকারীদের কোনো ফি দিতে হবে না। 

আঁকিবুঁকির কাজও চলবে সমানতালে। রং-পেনসিল আর কার্টিজ পেপারে যার যা খুশি এঁকে দেখবে। তাদের জন্য থাকবে পুরস্কার। থাকবে টেলিস্কোপে রাতের আকাশের তারা দেখা। আর তারাদের নিয়ে গল্পের আসর। আমাদের মায়াবী পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করবার জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। স্থানীয়দের সঙ্গে মিলতে থাকছে সাংস্কৃতিক আয়োজন। 

শুরুর গল্প

এই আয়োজনের যাত্রা শুরু হয়েছিল সহস্রাব্দের প্রথম সূর্যোদয়লগ্ন ২০০১ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ। সেবার সহস্রাব্দের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে আয়োজন করা হয় প্রথম সূর্য উৎসব। এরপর থেকে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্য উৎসবের আয়োজন করা হয়।

আয়োজকদের আকাঙ্ক্ষা, অভিযাত্রী বন্ধুদের মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার-প্রকৃতি-বিজ্ঞানবিষয়ক মেধা ও সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই সূর্য উৎসব। এ উৎসবে দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রকৃতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, মিডিয়াকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে।

প্রতিবারের মতো সূর্য উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো এবং মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে চ্যানেল আই।

এবারই প্রথম যাচ্ছেন?

প্রথমবারের মতো সূর্য উৎসবে যোগ দিতে আগ্রহীদের জন্য জেনে রাখা ভালো। সূর্য উৎসব কোনো বিলাসভ্রমণ নয়। এর আয়োজক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কোনো ভ্রমণ সংস্থাও নয়। এটা একটা অ্যাডভেঞ্চারমূলক অভিযান। পুরো অভিযানে থাকা-খাওয়া, শোয়া, গোসল, বাথরুম এবং সবকিছুতেই সর্বোচ্চ কষ্ট হবে। যেতে হবে এই কষ্টটা স্বীকার করেই।

জানতে হবে

আরও যেসব বিষয় অবশ্যই জানা প্রয়োজন, তা হলো সব কাপড় পুরোনো, বহুল ব্যবহৃত সাদা/হালকা নীল/হালকা সবুজ হলেই ভালো হয়। লাল বা কমলা ইত্যাদি উজ্জ্বল রং ও গাঢ় কালো কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো। কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য এবং আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, আপনার সব ব্যবহার্য জিনিস পুরো সময়ই আপনার নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে এবং আপনাকেই বহন করতে হবে। সুতরাং জিনিসপত্র নেওয়ার সময় এই বিষয়টি ভালো মনে রাখবেন। অংশগ্রহণে আগ্রহীদের অংশগ্রহণ ফিসহ নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে উৎসবে গ্রহণ করা হবে না।

পরামর্শ

অভিযাত্রীদের যা যা সঙ্গে আনতে পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে: বিছানাপত্র (তোশক, চাদর, বালিশ, লেপ বা কম্বল) অথবা স্লিপিং ব্যাগ (হালকা ও সহজে বহনযোগ্য)। ন্যূনতম পরিধেয় বস্ত্র, হালকা জ্যাকেট/উইন্ড ব্রেকার, সান ক্যাপ। টর্চলাইট ও তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, পানির বোতল (ফিতাসহ যাতে কাঁধে বা ঘাড়ে ঝোলানো যায়), দুরবিন, ডায়েরি, কলম, সানস্ক্রিন লোশন। প্রত্যেকের সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা বিবেচনা করে ওষুধ নিতে হবে। বই পড়তে চাইলে সঙ্গে করে বই।

আমরা যাচ্ছি ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ রাত সাড়ে ১১টায়। আর নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ঢাকা ফিরব ২০২০ সালের জানুয়ারির ৪ তারিখ সকালে। 

যোগাযোগ

আগ্রহী বন্ধুরা সূর্য উৎসবে যেতে চাইলে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে: প্যাপিরাস, ৫১ আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা। ফোন ০১৯ ৩৯১ ৬৬৩৫৫

আপনি যাচ্ছেন কি?

মশহুরুল আমিন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান