শুঁটকি ভোজনরসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় একটি খাবার। বাঙালিরা তো বটেই, বিদেশিরাও শুঁটকি খাচ্ছে আগ্রহভরে। তাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে। সোমবার প্রথম আলোতে ঠিক এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম ছিল ‘বিদেশেও যাচ্ছে পাবনার শুঁটকি’। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পাবনায় উৎপাদিত শুঁটকি দেশি বাজারে বিক্রির পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইয়ে রপ্তানি করা হয়। বিদেশে শুঁটকি রপ্তানি করে পাবনার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, পাবনার বিভিন্ন বিল ও নদ-নদীতে প্রতিবছর ৬৯ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন দেশি মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে তাজা মাছের চাহিদা আছে ৬২ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন। বাকি ৬৮৩ মেট্রিক টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত এ মাছ থেকে তৈরি হয় প্রায় ২০০ মেট্রিক টন শুঁটকি। এর মধ্যে চলনবিল অঞ্চল থেকে পাওয়া যায় প্রায় ১৩০ থেকে ১৩৫ মেট্রিক টন। গাজনার বিলসহ অন্যান্য বিল থেকে পাওয়া যায় ৬৫ থেকে ৭০ মেট্রিক টন শুঁটকি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
নিঃসন্দেহে এটি একটি আশাজাগানিয়া খবর। এটা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট যে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি শুঁটকি রপ্তানি করে আমরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। আমাদের দেশ থেকে শুঁটকি রপ্তানি শুরু হয় কয়েক দশক আগে থেকে। তখন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, রাঙ্গাদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, চকরিয়া, সেন্ট মার্টিন এলাকায় তৈরি শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হতো। তবে প্রথম দিকে স্বল্প পরিমাণে শুঁটকি রপ্তানি করা হতো। এখন বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। কক্সবাজার অঞ্চল ছাড়িয়ে দেশের আরও বহু স্থানে শুঁটকি উৎপাদিত হয়। সেসব স্থান থেকেও বিদেশে শুঁটকি রপ্তানি করা হচ্ছে।
এসব শুঁটকি সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে রপ্তানি হয়ে থাকে এবং বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। এমনকি সরকারিভাবে শুঁটকি উৎপাদন মনিটর করা বা শুঁটকি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সবকিছু মিলিয়ে শুঁটকি উৎপাদন ও রপ্তানি করতে গিয়ে রপ্তানিকারকেরা নানা দুর্ভোগে পড়েন। ফলে বিদেশের বাজারে যে পরিমাণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা মনে করি এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ নজর ও নীতিসহায়তা জরুরি। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্প থেকে যে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, তা সরকারকে বুঝতে হবে। তাই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, স্থায়ী শুঁটকিপল্লি নির্মাণসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।