টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি পূরণে বিশ্বকে সবার আগে যেটি নিশ্চিত করা দরকার, সেটি হলো দূষণমুক্ত উৎপাদন। অর্থাৎ পরিবেশকে যতটা সম্ভব কম দূষিত করে যতটা সম্ভব বেশি উৎপাদনের মধ্যেই টেকসই উন্নয়নের মূল মাহাত্ম্য নিহিত। কাঙ্ক্ষিত পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য শিল্পকারখানার কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপাদানের ব্যবহার হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা বিশ্বনেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন। খাদ্য, বস্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, শপিং ব্যাগ, চাঁদোয়া ইত্যাদি বানাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার যে কত সুদূরপ্রসারী ক্ষতি করতে পারে, তা তাঁরা অনুধাবন করতে পারছেন। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর ও অপচনশীল প্লাস্টিকের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে পাট ও পাটজাতীয় গাছের পচনশীল তন্তু। তাই এ ধরনের পচনশীল তন্তুর ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ব আগ্রহী হচ্ছে।
অতি আনন্দের খবর, এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে পাটসহ কয়েকটি প্রাকৃতিক তন্তুকে বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে যে প্রস্তাব রেখেছিল, সেটি পাস হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের উত্থাপন করা ওই প্রস্তাবে বিশ্বের ৬৮টি দেশ সমর্থন দেয়। সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। জাতিসংঘে এ ধরনের প্রস্তাব এই প্রথম পাস হলো, যেখানে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে লাভজনক কৃষিপণ্য পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্যতা তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ায় বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উপকারিতা বিশ্ববাসী জানল। এতে এসব পণ্যের উৎপাদকদের ভালো দাম পাওয়া সহজ হবে। ধারণা করা যায়, প্রস্তাবটি পাস হওয়ার ফলে জাতিসংঘ এবং প্রস্তাবটি সমর্থন করা দেশগুলো পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উদ্যোগী হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এখনই পাট উৎপাদন ও পাটজাত পণ্যের বিপণন নিয়ে সরকারের ভাবা দরকার। তিন-চার দশক আগে চট, বস্তা, দড়ি—ইত্যাদি তৈরির কাজেই প্রধানত পাট ব্যবহৃত হতো। বস্ত্র উৎপাদনেও এই তন্তু ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কথা মাথায় রাখা দরকার।
সারা বিশ্বেই প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ জনপ্রিয়। এটি সহজে বহনযোগ্য, দামেও কম। কিন্তু পরিবেশের জন্য তা মারাত্মক হুমকি। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক হোসেন এই প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের সেলুলোজ থেকে এক ধরনের ব্যাগ বানিয়েছেন, যা সোনালি ব্যাগ নামে পরিচিত। এটি বাজারে ছাড়ার জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজ চলছে দুই বছর ধরে। অথচ এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না পরিবেশবান্ধব ‘সোনালি ব্যাগ প্রকল্প’। এই প্রকল্প দ্রুত সচল করা দরকার। বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় পাট উৎপাদনে তৎপর হতে হবে।