‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’ একসময় শিশুদের পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের উপদেশমূলক বাক্য থাকত। এখনো হয়তো আছে। আর গুরুজন বা বড়রা মনে করেন, তাঁদের আদেশ-উপদেশেই ছোটরা মানুষ হবে। সারা দিন ভালো হয়ে চলবে।
কিন্তু বাস্তবে ভালো হয়ে চলার বিষয়টি বড়দেরই একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, আমাদের চারপাশে যে পরিবেশদূষণ ঘটছে, মাদক ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটছে, সেসব ছোটরা করে না। করেন বড়রা।
এই প্রেক্ষাপটে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কচি-কাঁচা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার এক ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রার মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সচেতন করেছে। এই শিশুশিক্ষার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছিল তাদের মাদক, সন্ত্রাস ও বাল্যবিবাহবিরোধী নানা প্ল্যাকার্ড। মুখে তারা স্লোগান দিয়েছে পরিবেশ বাঁচানো ও শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার পক্ষে। শিশুরা উদ্দীপ্ত কণ্ঠে বলেছে, ‘গুজবে কান দেবেন না।’
গুজবে কান দিলে দেশের যে বড় ক্ষতি হয়, সেটি আমরা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখেছি। কে গুজব ছড়িয়ে দিলেন যে বাজারে লবণ নেই, আর লবণ কেনার জন্য শহর-বন্দর ও গ্রামে হিড়িক পড়ে যায়। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেই গুজবের অবসান হয় এবং আরেকটি লবণ কেলেঙ্কারির হাত থেকে দেশ রক্ষা পায়। সেদিন শিশুশিক্ষার্থীরা উপজেলা পরিষদ পৌর বাজার হাসপাতাল রোড, কলাদী রোড, পশু হাসপাতালের মোড়, টিঅ্যান্ডটি রোড এলাকায় শোভাযাত্রা নিয়ে গেলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষ তাদের হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা জনসচেতনতামূলক শোভাযাত্রা বের করে বড়দের যেন শিখিয়ে দিয়ে গেল কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়।
ছোটদের এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে আমরা এটুকুই শিখলাম যে বড়রাই শুধু ছোটদের শেখান না; মাঝেমধ্যে ছোটরাও বড়দের শিখতে উৎসাহিত করে। এই শোভাযাত্রার পর স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা আরেকটু সচেতন হবেন, নিজ নিজ এলাকায় কোনো অন্যায় হতে দেবেন না। সে ক্ষেত্রে দেশটাকে আমরা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারব।
মাদক, সন্ত্রাস, পরিবেশদূষণ কিংবা গুজব এসবের সঙ্গে ছোটরা কখনো নিজেদের জড়ায় না। এগুলো বড়রা করেন। ফলে নিজ নিজ এলাকাকে এসব অনাচার থেকে মুক্ত করতে হলে বড়দেরই সচেতন হতে হবে। ছোট শিশুরা শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বড়দের দায়িত্বের কথাটিই জোর গলায় বলে গেল। আমরা মতলব দক্ষিণ উপজেলার কচি-কাঁচা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই এ রকম একটি সচেতনতামূলক আয়োজনের জন্য। তাদের এ দৃষ্টান্ত অনুসৃত হোক সবখানে। তবে এ ধরনের শোভাযাত্রা বা অন্য কোনো কর্মসূচি যেন শুধু লোকদেখানো বা নিয়ম রক্ষার জন্য না হয়।