গাজাবাসীকে পুরোনো কায়দায় হত্যা করছে ইসরায়েল
গাজা ভূখণ্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের নেতা বাহা আবু আল আতাকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করার জের ধরে অবধারিতভাবেই মধ্যপ্রাচ্য ‘সংঘাতসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলিতে’ জড়িয়ে পড়েছে। অন্য সব বারের মতো এবারও গাজা ভূখণ্ডে অবরুদ্ধ সাধারণ জনগোষ্ঠীকে এর মূল্য দিতে হচ্ছে। গত বুধবার সকালে ইসরায়েলের ‘বাম ধারার’ পত্রিকা হারেৎস বলেছে, গাজা থেকে ছুড়ে মারা রকেটের তাণ্ডবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া ১৮ জন ইসরায়েলি নাগরিককে আশকেলন হাসপাতালে মনস্তত্ত্ববিদদের চিকিৎসা দিতে হয়েছে। ঠিক একই সময় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২২ জনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ধরনের অসম সংঘাত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সব সময়ই হয়ে আসছে।
অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আবু আল আতার হত্যাকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার সুযোগ আছে। এ আইনকে কাজে লাগিয়েই একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকে ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আবু আল আতা গাজার উপকণ্ঠের সুজাইয়াহ এলাকার বাড়িতে রাতের বেলা স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। ইসরায়েলের রকেট ঘুমন্ত আতা এবং তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করল। তাঁদের দুই এতিম বাচ্চা এখন আল শিফা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আন্তর্জাতিক আইন দিয়ে বিচার করলেও আতাকে এভাবে হত্যা করা বৈধতা পায় না। এতে ‘জোর যার আইন তার’—এমন নীতিই প্রতিফলিত হয়। যাঁরা দীর্ঘদিন ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের ঘটনাবলির খোঁজখবর রাখেন তাঁরা বুঝতে পারবেন, পশ্চিমা নেতারা ইসলামিক জিহাদের নেতাকে এভাবে হত্যার ঘটনাকে অবধারিতভাবেই ‘বৈধ’ বলবেন, এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামিক জিহাদের রকেট ছোড়াকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ বলবেন এবং সেই ‘উসকানির’ পর ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার বিষয়ে মৌন থাকবেন।
আল আতাকে হত্যার পর ইইউর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিবিষয়ক মুখপাত্র মাজা কোচিজান টুইট করেছেন, ‘সাধারণ মানুষের ওপর রকেট ছোড়া বরদাশত করা যায় না, এগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে’। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেন টুইট করেছেন, ‘ইসরায়েলের মানুষ রকেট হামলার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত থাকবে, সেটি মেনে নেওয়া যায় না।’
টাইমস অব ইসরায়েল সংবাদ শিরোনাম করেছে, ‘ইসলামিক জিহাদ কমান্ডারকে হত্যা করেছে ইসরায়েল’। তারা ফিলিস্তিনের এই সংগঠনকে মধ্যপ্রাচ্যের পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে তুলনা করতেও দ্বিধা করেনি। অথচ ফিলিস্তিনি লেখক মরিয়ম বারঘুতির ভাষায়, ‘ফিলিস্তিন কোনো রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় পড়ে না। তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক সেনাবাহিনী নেই। তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক সীমানা নেই। নিজেদের সম্পদের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। এমনকি তাদের নেতা কে হবে, তা–ও বাইরের কেউ ঠিক করে দেয়।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুব শিগগির গাজা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। বিশেষ করে ইসরায়েলের উপনিবেশ ভূখণ্ডটিকে একেবারেই শ্বাসরুদ্ধকর জায়গায় নিয়ে যাবে। গত বছর ইসরায়েল ও মিসরের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ ধরে গাজার অধিবাসীরা বিক্ষোভ করেছিলেন। ওই বিক্ষোভ দমন করার জন্য ইসরায়েল শুধু গত বছরেই দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি শিশু। এরপরও পশ্চিমা নেতারা যথারীতি চুপ থেকেছেন। এখন আবার ইসরায়েল হত্যার অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযান কত দূর বিস্তৃত হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ইতিহাসের আলোকে বিচার করলে আন্দাজ করা যায়, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এ যাত্রায় আরও কয়েক দফা চলতে পারে। গাজার ইসলামিক জিহাদকে দমন করার নামে আরেক দফা তারা গাজাকে কোণঠাসা করবে এবং পশ্চিমারাও মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে।
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া। অনূদিত
ড. ব্রেনডান সিয়ার এন ব্রাউন ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের কনফ্লিক্ট রেজল্যুশন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক