নাওয়া-খাওয়া ভুলে কেউ পরের উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়লে সন্দেহ হয়, আড়ালে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই তো? স্বার্থ ব্যতীত পরোপকারের দৃশ্য সুলভ না হওয়ায় নির্জলা পরহিতৈষণায় এই ধরনের সন্দেহ প্রকাশ এ সমাজে সহজাত প্রতিক্রিয়া বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু পরহিতৈষণা যাঁদের কাছে সাধারণ কর্তব্য, তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠের সন্দেহে সংকুচিত হন না। বৃহত্তরের প্রশংসার লোভেও উদ্গ্রীব থাকেন না। তাঁরা কর্তব্য করে যান।
খুলনা নগরের ‘হোটেল টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি তিন তারকা হোটেল টানা পাঁচ বছর ধরে এই ধরনের দৃষ্টান্তমূলক জনহিতৈষীমূলক কাজ করে যাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভর্তি হতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের তারা বিনা মূল্যে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা করে আসছে। এ ছাড়া হোটেল থেকে নিজেদের পরিবহনে পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছেও দেয় তারা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত শুক্রবার কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা ছিল এবং সেই পরীক্ষা দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে বৃহস্পতিবারই শিক্ষার্থীরা খুলনায় চলে আসেন। সেখানকার সবগুলো হোটেল সবার থাকার জায়গা দিতে পারেনি। কোনো হোটেলের কক্ষই খালি ছিল না।
যেকোনো আবাসিক হোটেল বাণিজ্যিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই অবস্থার সুযোগ নিতে চাইবে এবং সাধারণ ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিতে চাইবে। কিন্তু তা না করে টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বছরে দুবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের এই বিশেষ সুবিধা দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের থাকা ও পড়াশোনার সুবিধার জন্য তিনটি কনফারেন্স কক্ষ ও সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কোয়েট হল ছেড়ে দেয় তারা। এ বছর ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে এই সেবা দিয়েছে তারা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থাকার সব কক্ষই ছিল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে দুটিতে ছেলে ও একটিতে ছিল মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা। হোটেল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আরও উদ্দীপনামূলক। তারা বলেছে, ভর্তি পরীক্ষার সময় থাকা ও খাওয়া নিয়ে একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন উদ্বিগ্ন থাকেন, অন্যদিকে চিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। এটি বিবেচনায় নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে থাকে। হোটেলের জায়গার সীমাবদ্ধতার কারণেই তাঁরা ইচ্ছা থাকার পরও বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীকে জায়গা দিতে পারেনি। এই সদিচ্ছা অনুসরণযোগ্য। প্রশংসাযোগ্য।