বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তবু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে অচলাবস্থা কাটানোর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের এক অংশ আট দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তাঁরাও উপাচার্যের পদত্যাগ চান। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব কড়াকড়ি আরোপ করেছে, তাতে উপাচার্যের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। শিক্ষকেরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ এনেছেন।
গত ২৬ মার্চ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালমন্দ করলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। শিক্ষার্থীরা সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে হলে থেকেই আন্দোলন চালান। ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন, তার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। পরে একজন উপমন্ত্রীর অনুরোধে তাঁরা সেই কর্মসূচি থেকে সরে আসেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অচলাবস্থা কীভাবে সৃষ্টি হলো, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অশিক্ষকসুলভ আচরণ করেছেন। কিন্তু সে জন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলেও প্রথমে তাঁর পদত্যাগের দাবি করেননি, তাঁকে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। সে সময়ে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করলে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হতো না। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের কারণসংগত ক্ষোভের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে তাঁদের আরও কঠোর অবস্থানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এখন শিক্ষার্থীরা যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে উপাচার্যের পদত্যাগ করা কিংবা বাকি মেয়াদের পুরো সময় ছুটিতে যাওয়ার বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। উল্লেখ্য, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির কাছে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন এবং তা মঞ্জুরও হয়েছে। আগামী ২৭ মে উপাচার্যের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে। মাত্র এক মাস কয়েক দিনের ব্যবধান। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষকদের বড় অংশ উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন, সেখানে তাঁর উচিত সসম্মানে বিদায় নেওয়া।
এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ, পড়াশোনার আরও ক্ষতি হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু তারা যখন তা নিচ্ছে না, তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসতে পারে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, এতে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তঁাদের পক্ষে কঠিন হবে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন করে সেশনজটের কবলে পড়বে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্মও বন্ধ রয়েছে বলে শিক্ষক–কর্মচারীরা চলতি মাসের বেতন পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
অতএব, আর সময় নষ্ট না করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার দ্রুত অবসান ঘটানো হোক।