২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ডিএসসিসির কমিউনিটি সেন্টার

কোনো দেশের রাজধানী শহরের বাসিন্দারা সম্ভবত ঢাকার বাসিন্দাদের মতো দুর্ভাগা নয়। এই মহানগরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই যেন বেশি। গণপরিবহনব্যবস্থা দুর্ভোগময়। রাস্তাঘাটের বিশৃঙ্খলায় যানজটে অপচয় হচ্ছে দিনরাতের অনেকটা সময়। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে নোংরা-আবর্জনা। নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে একটু বৃষ্টিতেই নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওয়াসার পানি দূষিত, অনেক এলাকায় পানির সরবরাহ অনিয়মিত, জ্বালানি গ্যাসের সংকট। ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে; আবাসিক এলাকাগুলো ভরে উঠেছে বিচিত্র ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনায়। উদ্যান ও বিনোদনের জায়গার প্রচণ্ড অভাব, নেই নিরিবিলি সময় কাটানোর স্থান। শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ ও খোলা জায়গা নেই বললেই চলে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজধানীবাসীর নাগরিক জীবনযাত্রার চিত্র এককথায় শোচনীয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৪টি কমিউনিটি সেন্টার আছে, যেগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ৩৪টির মধ্যে ১১টি কমিউনিটি সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাজে। এগুলোর মধ্যে আটটিতেই চলছে পুলিশ ও র‍্যাবের কার্যক্রম। আর তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে খোদ ডিএসসিসিই তার আঞ্চলিক কার্যালয় খুলে বসেছে। একটি কমিউনিটি সেন্টারে চলছে জাতীয় রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম। থানা-পুলিশ, র‍্যাব কিংবা রাজস্ব বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সে জন্য সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এর ফলে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনাটির প্রকৃত ব্যবহারই বাধাগ্রস্ত হয়। যেসব কমিউনিটি সেন্টারে বিভিন্ন সংস্থার দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে, সেগুলো বস্তুত আর কমিউনিটি সেন্টার নেই।

ডিএসসিসির কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারতেন। সরকারি সংস্থাগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দাদের সেই অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। আসলে কোনো সংস্থার দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দেওয়ার অধিকার ডিএসসিসির নেই; এমনকি ডিএসসিসি নিজের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও কোনো কমিউনিটি সেন্টার দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারে না। কমিউনিটি সেন্টারগুলো নাগরিক কেন্দ্র, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকলেও সেগুলোর প্রকৃত মালিক নগরবাসী। সুতরাং ডিএসসিসি সেগুলো তাদের খেয়ালখুশিমতো অন্য সংস্থার কাছে ভাড়া দেওয়া কিংবা নিজের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করার অধিকার রাখে না।

২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র ও কাউন্সিলররা নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁরা নির্বাচিত হলে নতুন নতুন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করবেন এবং পুরোনোগুলোর সংস্কার করবেন। তাঁরা নির্বাচিত হওয়ার পর সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু তাঁরা নগরবাসীকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। মোট ৩৪টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে ১০টিই সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। প্রায় সমানসংখ্যক কমিউনিটি সেন্টার যখন বিভিন্ন সংস্থার দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে, তখন ব্যবহারের অযোগ্য কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সংস্কারসাধন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত ছিল। উপরন্তু তাঁরা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এগুলো সংস্কার করা হবে। আর তিনটি কমিউনিটি সেন্টারকে নিজেদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে পরিণত করার মধ্য দিয়ে নগরবাসীর অধিকারের প্রতি ডিএসসিসির অবজ্ঞার প্রকাশ ঘটেছে।

ডিএসসিসির কমিউনিটি সেন্টারগুলো থেকে বিভিন্ন সংস্থার দাপ্তরিক কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলোর ওপর নাগরিকদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক। ব্যবহারের অযোগ্য কমিউনিটি সেন্টারগুলো সংস্কার করে নতুনভাবে চালু করা হোক।