উন্নত দেশের কৃষি খাত প্রযুক্তিনির্ভর। সেসব দেশে বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল কাটা ও তা ঘরে তোলা পর্যন্ত যন্ত্রের সহায়তা নেওয়া হয়। এতে শ্রমঘণ্টা বাঁচে, উৎপাদন ব্যয় কমে, আবাদ-প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত নির্ভুল হয় এবং সর্বোচ্চ ফলনের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের কৃষিতেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ধান উৎপাদন ও উৎপাদন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। ধান রোপণ, নিড়ানি দেওয়া ও ধান কাটার যন্ত্র কমবেশি সবখানেই দেখা যাচ্ছে। এর সুফলও দৃশ্যমান হচ্ছে।
তবে ধান কেটে বাড়িতে আনার পর তা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে এখনো সনাতন পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান শুকানো ও ধান থেকে চাল বানাতে গিয়ে শতকরা ১৪ ভাগ অপচয় হয়। এ পদ্ধতিতে ধান শুকানো অনেকটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষও হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ধান শুকাতে প্রচুর দুর্ভোগও পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি করা ‘বাউ-এসটিআর’ নামের ধান শুকানোর একটি যন্ত্র এ ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক সাফল্য এনেছে। এই যন্ত্র দিয়ে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় ৫০০ কেজি পর্যন্ত ধান শুকানো সম্ভব। বিদ্যুৎ ব্যবহারে এই যন্ত্রে এক মণ ধান শুকাতে খরচ হবে মাত্র ২৮ টাকা। আর জ্বালানি তেল ব্যবহারে খরচ পড়বে ৩৩ টাকা।
গবেষকেরা বলছেন, এ যন্ত্র আসলে একধরনের ব্লোয়ার যা ভেতরের ও বাইরের খাঁচা, গরম বাতাস পরিবহন পাইপ এবং চুলার সমন্বয়ে গঠিত। দেশের কয়েকটি চাতালে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ধানের বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতাও প্রায় ৯০ ভাগ বজায় থাকে এবং চালের গুণগত মানও নিশ্চিত হয়। মাত্র দুজন লোক দিয়েই যন্ত্রটি পরিচালনা করা সম্ভব। এটির মাধ্যমে ধানের আর্দ্রতা কমিয়ে উন্নত মানের চাল এবং বীজ বাজারজাতকরণ করা যায়। এ ছাড়া ফলনোত্তর অপচয় এবং শ্রম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব।
খুব আশার কথা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হয়েছে। এখন এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা দরকার। এতে চালের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। দেশে যেসব কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, তার বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা। কিন্তু দেশেও এখন অনেক ভালো, টেকসই ও সাশ্রয়ী যন্ত্র উদ্ভাবন করা হচ্ছে। কিন্তু উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্প্রসারিত না হওয়ার কারণে এসব যন্ত্রপাতির আমদানিনির্ভরতা কমছে না।
বাউ-এসটিআরের মতো কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলে একদিকে কৃষিযন্ত্রের আমদানি কমত, অন্যদিকে দেশীয় প্রযুক্তির ওপর মানুষের আস্থা বাড়ত। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।