৪৫টি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯টিতে ভেজাল পাওয়ার যে খবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। এটা কৃষকদের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি দুঃসংবাদ।
সোমবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তর থেকে দেওয়া বেশি ব্যবহৃত হয় এমন ৪৫টি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯টি নমুনায় ভেজাল পেয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত। এসব সারে ভারী বস্তুকণাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। এগুলো মাটি ও ফসলের মধ্যে গেলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। তা ছাড়া ফলনও ভালো হয় না। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ফসলের মান ও উৎপাদন ভালো করার জন্য কৃষিজমিতে সার ব্যবহার করা হয়। আমরা জানি, রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সার অনেক ভালো। রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারের কারণে ফসল ও মাটির ক্ষতি হয়, ফসলও ভালো উৎপাদন হয় না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জমিতে জৈব সার ব্যবহারের জন্য কৃষকদের মধ্যে প্রচারও চালানো হয়ে থাকে। কৃষকেরাও ব্যাপক হারে তাঁদের ফসলি জমিতে জৈব সার ব্যবহার করছেন। কিন্তু এখন যদি সেই জৈব সারই ভেজাল ও নিম্নমানের হয়, তাহলে কৃষকেরা যাবেন কোথায়? এটা তো তাঁদের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে প্রতারণা করা।
সার উৎপাদন ও বিপণনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেওয়া ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তাদের এখন এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সরকারের সার ব্যবস্থাপনা আইন-২০০৬ অনুযায়ী, জৈব সারে প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলের নিয়ম রয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদিত সার জব্দ করা এবং ইতিমধ্যে বিক্রি হওয়া সার ক্রেতাদের কাছ থেকে মূল্য ফেরত দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। ওই সার নিজ খরচে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করতে হবে। ভেজাল সার ব্যবহারে কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করা যাবে।
আমরা চাই, কৃষি মন্ত্রণালয় এই আইন অনুসরণ করে ভেজাল জৈব সার উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কৃষকেরা যাতে ভেজাল সার শনাক্ত করতে পারেন, সে ব্যাপারে তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে এভাবে কৃষকের তথা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। কৃষি ও কৃষকের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না। সারে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে যেন কোনো ভেজাল সার বিক্রি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।