মফস্বল শহরের পৌর এলাকায় যাঁরা বাস করেন, অনেক সময় তাঁদের মধ্যে একধরনের মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। বিশেষ করে পৌর এলাকার একেবারে সীমানা ঘেঁষে যাঁদের বাস, তাঁদের মধ্যে একই সঙ্গে আত্মতুষ্টি এবং ক্ষোভ কাজ করে। পৌর এলাকার নাগরিক হওয়ায় একধরনের শহুরে আভিজাত্যের ভদ্রস্থ অহম তাঁরা উপভোগ করেন। কিন্তু তাঁরা যখন দেখেন, নাগরিক সুবিধার দিক থেকে পৌরসভার সীমানার ১০০ গজ বাইরের বাসিন্দার সঙ্গে তাঁদের কার্যত কোনো পার্থক্য নেই, অথচ তাঁদের পৌর এলাকার বাইরের বাসিন্দাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি কর দিতে হচ্ছে, তখন তাঁরা ক্ষুব্ধ হন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে, ব্যয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে পৌর পরিষেবা করও বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বৃদ্ধির হার ২০ গুণ বা ২৫ গুণ হওয়া কি যৌক্তিক হতে পারে? অথচ সে ধরনের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা গেল চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার যে বাসিন্দা হোল্ডিং পৌর কর পরিশোধ করেছেন ৫৪০ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুনর্নির্ধারিত হোল্ডিং কর হিসেবে সেই একই বাসিন্দার কাছে চাওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৮৮৫ টাকা। সে হিসাবে তাঁকে ২৭ দশমিক ৫৬ গুণ বেশি কর দিতে হবে। এই বৃদ্ধির হার যে অযৌক্তিক, তা যে কেউ চোখ বুজে বলে দিতে পারবেন। শুধু ওই বাসিন্দা নন, তাঁর মতো অন্য হোল্ডিং মালিকদের কাছেও এই রকমের অস্বাভাবিক অঙ্কের কর চাওয়া হয়েছে। এতে তাঁরা আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। তাঁরা আপিল বা আপত্তি জানাতে প্রতিদিন পৌরসভায় ভিড় জমাচ্ছেন। পৌর মেয়র বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু নাগরিকদের এই ভোগান্তিতে ফেলার অর্থ কী?
মূলত চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পৌর এলাকায় অবস্থিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক হোল্ডিংগুলোকে বর্গফুট অনুসারে ভাগ করে সরকার-নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী একটি ভাড়া নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি হোল্ডিংয়ের দুই মাসের ভাড়ার সমান পরিমাণ অর্থ ওই হোল্ডিংয়ের বার্ষিক (প্রাথমিক) কর ধরা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এসব হোল্ডিংয়ের ভাড়া ২০ থেকে ২৫ গুণ বাড়েনি। কিন্তু গড় ভাড়ার ধারণাকে আমলে নিয়েই এই অস্বাভাবিক হারের পৌর কর ধরা হয়েছে।
বর্ধিত করের প্রসঙ্গ উঠলে অবধারিতভাবে এই প্রশ্নটিও উঠবে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গত পাঁচ বছরে নাগরিক পরিষেবা কতটুকু বাড়িয়েছে, যার বিনিময়ে এমন অস্বাভাবিক কর দাবি করা যেতে পারে? শুনানির সময় পুনর্মূল্যায়ন করে কর কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতি দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে। এখন মেয়রকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারী যেন একে দুর্নীতির সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে না পারেন।