চিংড়িঘেরে সবজি চাষ

একটা সময় ছিল, যখন চাষাবাদ ছিল জুয়া খেলার মতো অনিশ্চিত। মাছচাষি কিংবা কৃষকেরা ভালো উৎপাদনের জন্য প্রকৃতির ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতেন। চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সমন্বয়ের অভাবে অনেক সময়ই ভালো ফলন পাওয়া যেত না।

দিন বদলেছে। কৃষি নিয়ে এখন নানামুখী গবেষণা হচ্ছে। আগে বসতবাড়ির আশপাশে যেসব জায়গা সারা বছর পড়ে থাকত, এখন সেখানে বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় রেখে নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়। আশার কথা হলো, এ ক্ষেত্রে দেশের কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এখন বেশ সক্রিয়। তারা নতুন নতুন চাষপদ্ধতি ও কর্মকৌশল বের করছে এবং মাঠপর্যায়ে সেগুলো প্রয়োগের পর কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগ সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল প্রকাশ করেছে, যা বিশেষ করে চিংড়িঘেরের মালিকদের জন্য অনেক ভালো খবর বয়ে আনতে পেরেছে। তারা দেখিয়েছে, ঘেরে কোনো কারণে গলদা চিংড়ির উৎপাদন আশানুরূপ না হলেও ঘেরের বেড়িবাঁধে বছরব্যাপী সবজি চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

বাগেরহাটের মোল্লাহাটের তিনটি ইউনিয়নের চিংড়ি ও একই সঙ্গে ঘেরের বেড়িতে সবজিচাষিদের ওপর ওই গবেষণা সমীক্ষা পরিচালিত হয়। তাদের সমীক্ষা বলছে, এখনো এসব ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষ পরিকল্পিতভাবে হয় না। পরিকল্পিতভাবে তা করা গেলে উৎপাদন ও আয় দুই-ই বাড়তে পারে। বেড়িবাঁধে সবজি চাষকে বহুমুখী ও বছরব্যাপী করার নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা গেলে সেই উৎপাদন বহু গুণ বেড়ে যেতে পারে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে টাটকা সবজির সরবরাহে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ক্ষেত্রে ঘেরের বেড়িতে সবজি উৎপাদন ভূমিকা রাখতে পারবে। সারা বছর যাতে ঘেরের বেড়িতে সবজি উৎপাদন করা যায়, এ জন্য একটি ফসল পঞ্জিকা অনুসরণেরও তাগিদ দেওয়া হয় গবেষণা সমীক্ষায়।

চিংড়িঘেরের এই সবজি চাষে ব্যবস্থাপনাগত ও কারিগরি বিষয়ে কৃষককে আরও দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থসামাজিকভাবে তা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

আমাদের নীতিনির্ধারকদের খেয়াল রাখা দরকার, দেশের মোট জমির ২০ শতাংশ এবং চাষাবাদযোগ্য জমির ৩০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বন্যা, খরা, ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যখন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনো এ এলাকার বেড়িবাঁধের সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে, যা রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকটাই চাহিদা মেটায়। ফলে এই এলাকার চাষাবাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। যেহেতু এখানকার বাগদা চিংড়ির ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষের সম্ভাবনা অনেক, সেহেতু এই এলাকার জন্য যে যে কারিগরি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা দরকার।