২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভালুকায় কারখানার শব্দ

শব্দদূষণ এখনো এ দেশে ভোট পাওয়া না-পাওয়ার কারণ হয়ে ওঠেনি। তাই এটি নিয়ে রাজনীতিকদের আগ্রহ কম। যেহেতু এ দেশে ক্ষমতাশালীরাই শব্দদূষণের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখেন এবং তাঁরাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, সেহেতু তাঁদের সৃষ্ট শব্দদূষণ বন্ধ করা জনসাধারণের পক্ষে অসম্ভব।

নগর এলাকায় গাড়ির হর্ন বা কলকারখানার শব্দদূষণ নিয়ে তবু যা হোক কিছু লেখালেখি হয়, পরিবেশবাদীরা সভা-সেমিনার করেন। তাতে কিছুটা হলেও কাজ হয়। কিন্তু মফস্বল কিংবা গ্রামাঞ্চলের শব্দদূষণের প্রতিবাদে উচ্চকিত হওয়ার কথা প্রায় শোনাই যায় না। সেখানে নীরবে মুখ বুজে প্রভাবশালীদের ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ জনসাধারণকে মেনে নিতে হয়।

প্রথম আলোয় গতকাল শনিবার ছাপা হওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে একটি শিল্পকারখানা। মহাসড়ক থেকে পূর্ব দিকে কয়েক শ গজের মধ্যেই আবাসিক এলাকা। এখানে দোকানপাট ছাড়াও আছে বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এসবের পাশেই বিকট শব্দে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে গ্যাসে চালিত তিনটি জেনারেটরে। একটির ক্ষমতা ৯০০ কিলোওয়াট আর দুটির ক্ষমতা ৭৫০ কিলোওয়াট করে। প্রায় চার বছর আগে স্থাপন করা হয় এসব জেনারেটর। জেনারেটরের বিকট শব্দের কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অতিরিক্ত শব্দ সহ্য করতে না পেরে কারখানার আশপাশের ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁরা বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে না পারছেন চলে যেতে, না পারছেন এই জুলুম সহ্য করে টিকে থাকতে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ভালুকার এ ঘটনা সারা দেশের বাস্তব অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে। ঘটনাটি পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে বলেই সেটি উদাহরণ হিসেবে এসেছে। কিন্তু কোনো রকম সমীক্ষা ছাড়াই বলা যায়, দেশের প্রায় সব এলাকায় এ ধরনের ছোট-বড় শব্দদূষণ ঘটানো কলকারখানা আছে। সেসব কারখানার প্রচণ্ড শব্দে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে তারা নালিশ জানাতে পারছে না।

শব্দদূষণ কতটা ভয়ানক এবং এ জন্য ক্ষতি কত বিপুল, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। তারপরও শব্দদূষণের মাত্রা দুরন্ত গতিতে বেড়ে চলেছে। মাথাধরা, বধিরতা, মানসিক রোগ—সবই এই দূষণের ফল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।

সব জেনেও লোকালয়ে কারখানার উচ্চ শব্দ দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্ষতি করছেন প্রভাবশালীরা। স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচার যে এক জিনিস নয়, তা তাঁরা কোনোকালেই বুঝতে চাননি। কারণ, সেটি বুঝলে তাঁদের স্বার্থ টেকে না। কিন্তু তাঁরা বুঝুন আর না বুঝুন, তাঁদের হাত থেকে নাগরিকের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতেই হবে। এই শব্দ-সন্ত্রাস থামাতেই হবে।