২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রাসায়নিকের গুদাম সরান

পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমানোর অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে সেখান থেকে বিভিন্ন দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ সফল হয়নি ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে। বছর দুয়েক আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনকে সেই কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন। ফলে কাজটি আর এগোয়নি।

গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার সেই পুরোনো তাগিদ আরও জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ব্যবসায়ীদের আপত্তির বিষয়টিকে দুঃখজনক অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আশা করি, (চকবাজারে) এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার যে দাবি উঠেছে, তাতে আর কেউ আপত্তি করবেন না।’

আমরা প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলতে চাই, আর আপত্তির কোনো সুযোগ নেই, বরং রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সরকার ও সিটি করপোরেশনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করা উচিত। পুরো জনপদের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে তো বটেই, ব্যবসায়ীদের নিজেদের স্বার্থেও এটা করা উচিত। কারণ, অতিশয় দাহ্য নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো তাঁদের বাসস্থানেরই অংশ বা আশপাশের স্থাপনায় অবস্থিত, যেখানে তাঁরা নিজেরাও সন্তানসন্ততিসহ বসবাস করেন। গুদাম ও কারখানাগুলো অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের আপত্তির প্রধান কারণ ব্যবসায়িক, বর্তমান স্থানই তাঁদের জন্য বেশি লাভজনক বলে তাঁরা মনে করছেন। কিন্তু যে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে তাঁরা পরিবার–পরিজনসহ বসবাস করছেন, তা চূড়ান্ত বিবেচনায় যে লাভজনক নয়, তা ২০১০ সালের নিমতলী অগ্নিকাণ্ড এবং গত বুধবারের চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের উপলব্ধি করতে হবে যে জীবনের চেয়ে মুনাফা বড় নয়।

অন্যদিকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো স্থানান্তরের বিষয়ে সরকারের জোরালো তৎপরতার অভাব ছিল কি না, সেটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। স্থানান্তরের কথা মুখে বললেই চলে না, কোথায় স্থানান্তর করা হবে, কীভাবে করা হবে, কত সময়ের মধ্যে করা হবে—এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত। শিল্প মন্ত্রণালয় ঢাকার কেরানীগঞ্জে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লি’ নামে যে শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রকল্প নিয়েছে, তা কেন নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে করা হয়নি—এ বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকা উচিত। কারণ, নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর ‘জরুরি ভিত্তিতে’ রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের জবাবদিহি কোথায়? অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির পর প্রবল জনপ্রতিক্রিয়া প্রশমনের উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটি গঠন, নানা ধরনের সুপারিশ পেশ এবং সেগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস নিষ্ফল হতে বাধ্য। কারণ, বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না, শাস্তি পাওয়া তো দূরের কথা।

অনেক সময় গড়িয়েছে, অনেক প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, কাজেই আর সময়ক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো পুরান ঢাকা থেকে স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক। এই উদ্যোগে ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।