নির্বাচনের পরপর নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনাটি শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, এটি বর্বরোচিত একটি ঘটনা। এটি সবার মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কঠিন বাস্তবতা হলো, ঘটনাটি রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে বলে বড় করে সামনে এসেছে। কিন্তু গণমাধ্যম যে সারাক্ষণ নারী নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে, সেটা কিন্তু অতটা গুরুত্ব পায় না, সে বিষয়টিও দেখতে হবে। তবে নোয়াখালীর বর্বরোচিত এই ঘটনা আলোড়ন জাগানোর মতোই ঘটনা। এ বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যায়। এখানে যেন সেটি না ঘটে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব শুধু সরকার বা গণমাধ্যমের নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব।
আরেকটি বাস্তবতা হলো অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনা নিয়ে বেশ কিছুদিন আলোচনা চলে, পরে তা হারিয়ে যায়। সেই কারণে মানবাধিকারের জায়গা থেকে দাবি করব, যেন বিষয়টি কখনো হারিয়ে না যায়, অপরাধীদের যেন অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হয়, সে যে–ই হোক। অর্থ প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব যা–ই থাকুক না কেন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।
গণমাধ্যমেই উঠে এসেছে, নারী নির্যাতনের ঘটনার অধিকাংশের বিচার হয় না। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারক ও আদালতকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। এখনো তো ৮০ শতাংশের মতো নারী নিজের ঘরেই নির্যাতনের শিকার হন। এগুলোও আদালতের দৃষ্টিতে নিতে হবে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ঘটনাটিও প্রথমে সেভাবে সামনে আসেনি। তাই আমি বলব, এসব নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ভূমিকা রয়েছে। অভিযোগকারীর অভিযোগটি যাতে ঠিকমতো তদন্ত হয় এবং অভিযোগটি যাতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিযোগটি সঠিকভাবে তদন্ত করে আদালতে উপস্থাপন না করলে আদালতও নিরুপায় হয়ে থাকেন। তাই তদন্তকাজটি সঠিকভাবে করতে হবে।
আমি মনে করি, নারী নির্যাতন বন্ধে উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তাদের তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। ওই সব কর্মকর্তা যদি আরও তৎপর হন, তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে।
লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা