দুর্যোগে বন্ধুর মুখ
জাপানের জন্য ২০১৮ সাল অনেকটা বিড়ম্বনার একটি বছর হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আঘাত হানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের দাবদাহে মৃত্যুর সংখ্যাও একেবারে কম গুনতে হয়নি। উন্নত একটি দেশের জন্য এ এক বিড়ম্বনাই বটে।
মাত্র দুদিন আগে আঘাত হানা সামুদ্রিক ঝড় টাইফুন জেবিতে নয়জনের প্রাণহানি ছাড়াও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন শ তিনেক জাপানি। ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বর্ষণে বিস্তৃত এলাকা তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব এখন প্রশাসনকে গুনতে হচ্ছে। এর আগে জুলাই মাসে প্রচণ্ড বর্ষণ থেকে শুরু হওয়া বন্যায় পশ্চিম জাপানের চুগোকু অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হলে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২২০ জন। এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষকে। দুর্যোগের পর অনেকে ঘরে ফিরে গেলেও বিধ্বস্ত বাড়িঘর মেরামত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।
ফলে দুর্যোগ প্রতিরোধের স্থায়ী সমাধানের খোঁজে থাকা দেশটিতে ইদানীং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে জীবন রক্ষার বোসাই প্রক্রিয়া নামের একটি নাগরিক শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমগুলোয় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বোসাই প্রক্রিয়ায় এত দিন পর্যন্ত মূলত ভূমিকম্পের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বলা হলেও ইদানীং ঝড় আর বন্যাও সেই তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। সেখান থেকেই বাংলাদেশের প্রতি জাপানিদের নতুন করে আগ্রহ জন্মেছে।
বন্যা বাংলাদেশের নিয়মিত দুর্যোগ হলেও এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণহানির সংখ্যা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় যথেষ্ট কম। ইদানীং ঝড়ের তাণ্ডব থেকে প্রাণ রক্ষার নতুন নানা রকম পদ্ধতি কার্যকর হওয়ায় মাত্র কয়েক দশক আগের মতো লক্ষাধিক প্রাণহানির ঘটনা শোনা যায় না। ফলে বিশেষ করে বন্যার মতো দুর্যোগ সামাল দিতে বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জাপানে তা কার্যকর করা যায় কি না, তা নিয়ে দেশের কিছু নাগরিক গোষ্ঠীর পাশাপাশি জাপানের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাবতে শুরু করেছেন।
জুলাই মাসের বন্যা আর ভূমিধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর একটি তত্তোরি ভ্রমণের সুযোগ আমার হয়েছিল। তত্তোরির গভর্নর শিনজি হিরাই সেখানে এক সাক্ষাৎকারে শুরুতেই বলেছেন যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যা এখন তাঁকে সেই দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে উৎসাহিত করছে। তত্তোরিতে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হিরোশিমার মতো মারাত্মক না হলেও একজনের মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন। ফলে ধারণা করা যায় সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নির্ধারণ করে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাঁরা হয়তো বাংলাদেশের দিকে আবারও নজর দেবেন।
অন্যদিকে, মাত্র আঘাত হানা টাইফুন জেবিও ঝড়ের সঙ্গে বন্যা নিয়ে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলতে থাকা অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আবারও আলোচনায় চলে এলে এখানেও হয়তো বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হবে।