দাওয়াত তাবলিগ তালিম ও বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব
শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুপম আদর্শের প্রতি মানুষকে ডাকা হলো দাওয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ডাকো তোমাদের রবের পথে, হিকমত (প্রজ্ঞা ও কৌশল) এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১২৫)
ইসলামের সহজ–সরল ও যৌক্তিক বিষয়গুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার নাম হলো তাবলিগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত (বাণী) হলেও পৌঁছে দাও।’ (মুসলিম)
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.)–এর সর্বশেষ বাক্য ছিল, ‘তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, তারা অনুপস্থিতদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেবে।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।
দাওয়াত তাবলিগের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘আমর বিল মারুফ’ (সৎ কাজে আদেশ করা) ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ (মন্দ কাজে নিষেধ করা)।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করো, অসৎ কার্যে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)
তালিম হলো আমল ও ইবাদতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আর আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)–কে সব বস্তুর নাম (উন্নতি ও পরিণতি) শেখালেন।’ (সুরা-২, বাকারা, আয়াত: ৩১)
দাওয়াত, তাবলিগ ও তালিম বিভিন্ন মাধ্যমে নানাভাবে করা যায়, যেমন অধ্যয়ন, অধ্যাপনা বা শিক্ষাদান ও শিক্ষার প্রচার–প্রসার, লেখালেখি, গ্রন্থন রচনা বা পুস্তক প্রণয়ন, বইপত্র–পুস্তক–পুস্তিকা প্রকাশনা। ওয়াজ–নসিহত, বয়ান ও খুতবা, ভাষণ–বক্তৃতা, আলোচনা–পর্যালোচনা, সভা–সমাবেশ ইত্যাদি।
এ ছাড়া প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এসব কাজ করা যায়।
দাওয়াত, তাবলিগ ও তালিম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। দাওয়াত, তাবলিগ ও তালিমের কাজ করার জন্য কোনো একটি বিশেষ পদ্ধতি নির্দিষ্ট নয়। প্রচলিত তাবলিগ পদ্ধতি ইসলামি দাওয়াতের একমাত্র কাজ নয় এবং একমাত্র পথও নয়।
ইসলামের প্রচার–প্রসার ও এর সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। ইসলামের সব কাজই বড়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে সময় ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুগের চাহিদামতে একেক সময় একেক অবস্থায় একেক কাজের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বেশি করে দেখা দেয়। তখন সে কাজ বেশি করতে হয়।
দাওয়াত, তাবলিগ ও তালিমের মূল উদ্দেশ্য হলো আচরণে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক পরিবর্তন। তালিমের জন্য ইলম থাকা প্রয়োজন, অন্ততপক্ষে ইলমওয়ালাদের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি। দ্বীনি কাজ মাশওয়ারা বা পরামর্শের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে কাজের মধ্যে আল্লাহর রহমত ও বরকত থাকে এবং সুফল ও কল্যাণ লাভ করা যায়।
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে পাস করা আলেম মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ১৯২০ সালে ‘তাহরিকুছ ছলাত’ বা ‘নামাজ আন্দোলন’ নামে ‘ইমান’ ও ‘আমল’–এর যে দাওয়াতি কাজের সূচনা করেন, তা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং শতাব্দীকাল পরও গতিশীল রয়েছে।
কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাছহিহে নিয়াত ও তাবলিগ—এই ছয় গুণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহু লোক আল্লাহর দেওয়া জান, আল্লাহর দেওয়া মাল, আল্লাহর দেওয়া সময় নিয়ে আল্লাহকে রাজি–খুশির উদ্দেশ্যে দ্বীনি দাওয়াতের মেহনতের জন্য ৩ দিন, ১০ দিন, ১ চিল্লা (৪০ দিন), ৩ চিল্লা, ৭ চিল্লা, সাল (বছর) ও ১০ চিল্লা এবং জীবন চিল্লা তথা আমৃত্যু সময় দিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছেন।
দলনিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত হওয়ায় তাবলিগ জামাত বিশ্বের সব দেশে দাওয়াতি কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তিন দিনব্যাপী তাবলিগ জামাতের বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’য় দলমত-নির্বিশেষে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে শরিক হচ্ছেন। ইমান ও আমল মুমিনজীবনের পাথেয়। দাওয়াতি কাজে ইমান দৃঢ় হয় এবং পরিবেশে আমল পরিবর্তন হয়। তাই দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে ইমান ও আমলে উন্নতি হয়।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম