‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের নিয়ে করণীয় কী

এই মানুষদের জন্য পাকিস্তান সরকারও ঐতিহাসিক দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তাদের অবশ্যই করণীয় রয়েছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গফুটের ‘জেনেভা ক্যাম্পে’ প্রতি বর্গফুটে তিনজনের বেশি মানুষের বাস্প
ফাইল ছবি

১৯৭৪ সালের জুনে জুলফিকার আলী ভুট্টো যখন প্রথম ও শেষবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজও। ফিরে গিয়ে ফয়েজ ‘ঢাকা সে ওয়াপসী পর’ শিরোনামে একটা কবিতা লিখেছিলেন। সেখানে দুটো লাইন ছিল এ রকম:

...জানি না আর কত সাক্ষাতের পর পুনরায়

বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে

কবে দেখতে পাব দাগহীন সবুজ বসন্ত!

কবিরা নাকি বহুদূর দেখতে পান। ফয়েজের কবিতার অনিশ্চয়তায় ভরা ইঙ্গিত আজও ও রকমই আছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ভেতরকার পুরোনো সমস্যার সমাধান হয়ে ‘সবুজ বসন্ত’র দেখা পাওয়া মুশকিল। ৫০ বছরের পুরোনো দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলোও প্রত্যাশামতো সমাধান করা যায়নি। ফলে হঠাৎ হঠাৎ সেগুলো সামনে চলে আসে।

অতীতে অমীমাংসিত সমস্যার তালিকায় সামনে ছিল বাংলাদেশে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের বিষয়। সম্প্রতি আবার এ প্রসঙ্গ আলোচনায় এল। এই আলোচনার সূত্রেই খতিয়ে দেখা দরকার ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের অবস্থা এখন কী রকম? একই সঙ্গে দেখা প্রয়োজন, গত ৫০ বছরে মাঠপর্যায়ে ক্ষুদ্র এই জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক-আইনগত অবস্থার এমন কোনো পরিবর্তন ঘটেছে কি না, যা জরুরি মনোযোগ পাওয়া উচিত।

‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ কারা

‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলতে সাধারণভাবে বোঝানো হয় সেসব উর্দুভাষীকে, যাঁরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর এখানে ক্যাম্পে আশ্রয়ে থেকে পাকিস্তানে চলে যেতে চেয়েছিলেন। যুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে অনিশ্চয়তার মুখে এসব মানুষ শরণার্থীদের জন্য তৈরি অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই ক্যাম্পগুলো আছে। মানুষও আছে সেখানে। সারা দেশে এ রকম ক্যাম্প আছে কাগজপত্রে ১১৬টি। ঢাকায় আছে ৪৫টির মতো। পুড়ে যাওয়া ও উচ্ছেদের কারণে এসব ক্যাম্পের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। সব মিলিয়ে এসব ক্যাম্পে থাকা উর্দুভাষীর সংখ্যা আনুমানিক আড়াই লাখ। এই ক্যাম্পবাসীদের বাইরেও এ দেশে উর্দুভাষী আছেন। তাঁদের সংখ্যা ক্যাম্পের উর্দুভাষীদের চেয়েও বেশি; প্রায় তিন–চার লাখ। ক্যাম্পের বাইরে থাকা ব্যক্তিরা সচরাচর নাগরিকত্বসংক্রান্ত ঐতিহাসিক জটিলতায় পড়েননি।

যুদ্ধের পর আলোচনায় ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের বিষয়

যেহেতু ক্যাম্পের ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’রা ১৯৭২-এ পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিলেন, সে কারণে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। কেবল বাংলাদেশ-পাকিস্তান নয়, ভারতও এই আলোচনায় যুক্ত ছিল। ভারত মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর অংশীদার হিসেবে সেই আলোচনায় অংশীদার হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪-এর মাঝে পরপর তিনটি সমঝোতা/চুক্তি হয় ওই সময় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। কোনোটি দ্বিপক্ষীয়, কোনোটি ত্রিপক্ষীয়।

এ সময় তিন দেশের মাঝে বড় আলোচ্য বিষয় ছিল যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানের সৈনিকদের দেশে ফেরা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গ। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝে আরও দুটি বিষয়ে মতবিনিময় চলছিল। এগুলোর একটা হলো উভয় দেশে ‘আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিক’দের পছন্দনীয় স্থানে ফেরার প্রসঙ্গ এবং দুই দেশের সম্পদ ও দায়দেনা ভাগাভাগির বিষয়। বাংলাদেশ এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাভাষী যাঁরা আসতে চেয়েছেন, তাঁদের উদারভাবে গ্রহণ করেছে।

অন্যদিকে, ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের বিষয়ে তিন দেশের মাঝে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিলের দিল্লি চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, পাকিস্তান এঁদের মধ্য থেকে চার ধরনের মানুষ গ্রহণ করতে রাজি আছে:

এক. যাঁরা অখণ্ড পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের নাগরিক,

দুই. যাঁরা অখণ্ড পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ও পরিবারের সদস্য;

তিন. নাগরিকদের বিভক্ত হয়ে পড়া পরিবারের সদস্য এবং

চার. বিশেষভাবে দুর্ভোগে পড়া ২৫ হাজার মানুষ।

এসব সিদ্ধান্ত ও আলোচনার পটভূমিতেই ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পের দেড় লাখের মতো উর্দুভাষী বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যান। পরবর্তীকালে আরও কিছু ক্যাম্পবাসী যেতে চেয়েছিলেন। তবে এরপর পাকিস্তানের অনাগ্রহে বিষয়টা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ক্যাম্পবাসী নবীন প্রজন্মের মাঝে পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহও দেখা দেয়। ২০০৩ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইনগত অগ্রগতিও ঘটে। দেশের উচ্চ আদালত ক্যাম্পবাসী কয়েকজনের পৃথক পৃথক সময়ে করা দুটি আবেদন মীমাংসা করে যে মত দেন,Ñতার সারমর্ম ছিল, এই ক্যাম্পবাসীরা ‘উর্দুভাষী বাংলাদেশি’ এবং তাঁদের ভোটার হতে ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে বাধা নেই। এ–ও বলা হয়েছে, ক্যাম্পবাসীদের মধ্যে যাঁরা পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য আবেদন দাখিল করেছিলেন, সেই কারণে তাঁদের ভোটাধিকার বা জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বঞ্চিত করা যায় না। একদিকে পাকিস্তানে যাওয়ার সম্ভাবনা থিতিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের উক্ত রায়ের পর স্বাভাবিকভাবে ক্যাম্পবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ তৈরির প্রবণতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বর্তমানে কোনো ক্যাম্পের উর্দুভাষীদের পাকিস্তানে যাওয়ার আবেদন, আগ্রহ ও আন্দোলন সচরাচর দেখা যায় না। আপিল করা হয়নি বলে উক্ত রায়ও বহাল ও কার্যকর আছে।

যেখানে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে

‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলতে যাঁদের কথা সাধারণভাবে প্রচারমাধ্যমে এখন আসে, সরেজমিন দেখা যায়, তাঁদের বড় অংশ বয়সের হিসাবে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া নারী-পুরুষ। এঁরা কেউ একাত্তর দেখেনি। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের। তাঁরা এখানকার নাগরিক হতে চান। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাঁরা সেই অধিকারের মৌলিক দিক ভোগও করছেন। ক্যাম্পের প্রায় অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এখন এনআইডি কার্ডধারী। প্রতিবছর ক্যাম্পে এনআইডি হালনাগাদ কর্মসূচিতে ১৮ বছর পেরোনোরাও নতুন করে নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। অনেকে এনআইডির সূত্রে পাসপোর্টও করছেন ক্যাম্পের ঠিকানায়। পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁরা নিজস্ব বিদ্যুৎ বিলের রসিদও দেখাচ্ছেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ছয়টি ক্যাম্প ছাড়া দেশের অধিকাংশ ক্যাম্পে বসবাসকারীরা নিজেদের বিদ্যুৎ ও পানির বিল দিচ্ছেন। ২০০৪ সাল থেকে ক্যাম্পগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক ‘ত্রাণ’ দেওয়াও বন্ধ বলে বসবাসকারীরা বলছেন। অর্থাৎ নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার বিপরীতে ‘শরণার্থী’ হিসেবে পাওয়া সুবিধাগুলো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ক্যাম্পে ক্যাম্পে। নাগরিকতার জোরেই উর্দুভাষী এসব পরিবারের কিশোর-তরুণেরা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করছেন এখন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মহত্তম এক ঘটনা হলো, বাংলাদেশ তার দেশের পুরোনো উর্দুভাষীদের পরবর্তী প্রজন্মকে এভাবে মৌলিক অধিকার চর্চার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিচারালয় এবং উচ্চতর প্রশাসনের দিক থেকে এটা গর্ব করে বলার মতোই একটা বিষয়।

তারপরও সম্প্রতি প্রশাসন আবার ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের অ-নাগরিক ধরে নিয়ে ‘হিসাব’ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে কিছু ভুল–বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি হয়েছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের সব জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক’দের সংখ্যা নিরূপণের জন্য। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, ক্যাম্পগুলোতে আটকে পড়া মানুষেরা এনআইডি ও পাসপোর্ট পাওয়ার পর এখন তাঁদের আবার ‘পাকিস্তানি নাগরিক’ ধরে গণনা করা হবে কীভাবে? অর্থাৎ যে সমস্যার পুরোনো অধ্যায় এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়ে গেছে, সেটা আবার নতুন করে সামনে চলে আসছে এভাবে। কিন্তু যাঁদের বাংলাদেশের এনআইডি আছে, তাঁদের কীভাবে ‘পাকিস্তানি’ হিসেবে গণনা করা যাবে? কিংবা তাঁদের কীভাবে পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলা হবে বা তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আইন অনুযায়ী এখানকার নাগরিক বিবেচনা না করে উপায় কী? এ রকম অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ মুহূর্তে দরিদ্র ও হতদরিদ্র ক্যাম্পবাসীদের মাঝে।

প্রতি বর্গফুটে তিনজন!

‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তরে পরিবর্তনের একটা বড় দিক হলো এসব জায়গায় এখন কেবল উর্দুভাষীরা থাকেন না; ক্যাম্পের অনেক ‘ভাড়াটে’ বাঙালি। যা বাইরে থেকে অনেকে বুঝতে পারেন না। যেহেতু ক্যাম্পে থাকা উর্দুভাষীদের বড় অংশ জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, সুতরাং বাঙালি-অবাঙালি মিলিয়ে এসব ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মুখ্য অংশই নাগরিকত্ব ও আনুগত্যে বাংলাদেশি। কথিত আটকে পড়াদের ক্যাম্প জীবনের সঙ্গে ১৯৭২-এ সৃষ্ট শরণার্থী সমস্যার এখন আর মিল নেই। ক্যাম্পের ‘উর্দুভাষী’ এবং ‘বাংলাভাষী’ বাসিন্দারা সবাই মিলে এখন শ্রেণির বিচারে একই পাটাতনের মানুষ। একই জীবনযুদ্ধের শিকার প্রতিদিন। ক্যাম্পের ভেতরকার অতি অমানবিক পরিবেশেই বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে উভয় গোষ্ঠী।

নোংরা ও অপরিসর পরিবেশে বসবাসের কষ্ট ছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে। আগের একতলা থাকার জায়গা খুব নাজুকভাবে ওপরের দিকে তোলা হচ্ছে। সামান্য ভূমিকম্পে এসব ক্যাম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও প্রবল। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গফুটের ‘জেনেভা ক্যাম্পে’ প্রতি বর্গফুটে তিনজনের বেশি মানুষের বাস! এত অল্প পরিসরে এত অধিক মানুষ বিশ্বের কোনো শরণার্থীশিবিরে বিরল। অতি বৃহৎ একটা বস্তি বলা যায় এ রকম ক্যাম্পগুলোকে।

দরকার পুনর্বাসন

অর্থনৈতিক ও আইনি টানাপোড়েন ছাড়াও ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের সাংস্কৃতিক সংকটও অনেক। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে উর্দু ভাষার চর্চা নেই। ফলে ক্যাম্পবাসী উর্দুভাষীদের মধ্যে মাতৃভাষা পড়তে ও লিখতে পারা তরুণ-তরুণী প্রায় নেই। ফলে প্রচারমাধ্যম যাঁদের ‘উর্দুভাষী’ বলে, তাঁরা আসলে পড়ছেন এবং লিখছেন বাংলা ও ইংরেজি।

আবার ক্যাম্পের উর্দুভাষীরা শিক্ষাজীবনের ব্যবহারিক অর্থে এভাবে ‘বাংলাভাষী’ হয়ে উঠলেও ক্যাম্পের ঠিকানা-পরিচয়ে তাঁদের চাকরি-বাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা যে বহু আগে এ দেশে পরিচয়পত্র পেয়েছেন,Ñআইনগত সেই অর্জন এখনো বাংলাদেশজুড়ে উপলব্ধিতে আসেনি।

‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের নামে যত ক্যাম্প আছে, সেসব ক্যাম্পের উর্দুভাষী পরিবারগুলোতে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, এই মানুষদের মূলত দরকার রুটিরুজিতে সহায়তা। ভালোমতো থাকার জায়গায় পুনর্বাসনও চান তাঁরা। এই সম্প্রদায়ের সবাই নানা ধরনের হাতের কাজে পটু। কেউই কৃষিকাজে অভ্যস্ত নন। সে কারণে এঁদের পুনর্বাসন দরকার শহরের সন্নিহিত এলাকায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যে সচেতন, সেটাই দেখা যায় প্রশাসনিক বিভিন্ন উদ্যোগে। ২০১৪-এর নভেম্বরে এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাক্রমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে নির্দেশনামূলক যে ভাষণ দেন, তাতে ক্যাম্পের উর্দুভাষীদের ঢাকার আশপাশে কোথাও পুনর্বাসনের জন্য বলেছিলেন। বাস্তবে এটাই হতে পারে এখন ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের জন্য অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা সে সময় ক্যাম্পে ক্যাম্পে উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। নতুন থাকার জায়গায় পুনর্বাসন তাঁদের জীবনযাপনের অনিশ্চয়তা অনেকখানি দূর করবে। ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’দের নিয়ে করণীয়ের জায়গাটা এখানেই।

আলোচ্য ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ সরকার বহু দায়িত্ব পালন করেছে, সম্পদ ব্যয় করেছে। এই রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে ক্যাম্পবাসী উর্দুভাষীরা নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এসব সত্ত্বেও এই মানুষদের জন্য পাকিস্তান সরকারও ঐতিহাসিক দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই ক্যাম্পবাসীদের বর্তমান দুর্দশাভরা জীবনের পটভূমি তৈরি করেছে পাকিস্তান বাহিনীর একাত্তরের যুদ্ধ। তাই সে দেশের সরকারের এই মানুষদের বিষয়ে অবশ্যই করণীয় রয়েছে। এঁদের পুনর্বাসনে পাকিস্তান কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তা সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আহ্বানের সুযোগ নিশ্চয়ই আছে। এসব পুরোনো মানবিক প্রসঙ্গের সন্তোষজনক সমাধান করেই কেবল দুই দেশ ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর পথ নির্মাণ করতে পারে।


আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক