রাজাদের কেন সাতটা রানি? রাজকন্যারা কেন নিয়ন্ত্রিত?
রূপকথায় কত-না তেলেসমাতি। রাজা-রানি, সিন্ডারেলা, রাপানজেল—সব মিলিয়ে এ এক স্বপ্নময় জগৎ। রূপকথার সেই স্বপ্নীল দুনিয়ায় চোখ ফেরানো যাক আবার
রূপকথার রাজাদের কেন সাতটা রানি থাকে? রাজকন্যারা কেন শুধু নিয়ন্ত্রিত, ঘুমন্ত আর অধীন হয়? সৎমায়েরা কেন এত কুটিল আর হিংসুক? রানিকে কেন পুত্রসন্তান জন্ম দিতেই হবে? সিন্ডারেলা বা রুপানজেল ছেলে হলে কেমন হতো? গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে পশ্চিমা নারীবাদীরা প্রচলিত রূপকথাগুলো নিয়ে প্রথম এই ধরনের প্রশ্ন করতে শুরু করেন এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিমোহিত করে রাখা এসব কাহিনির প্রতি মানুষের প্রশ্নহীন মুগ্ধতার মোহজাল ভেঙে দেন। ফলে দুই শ বছর আগে গ্রিম ভাইদের সংগৃহীত রূপকথা ষাটের দশকে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্লিখন বা পুনর্নির্মাণ করা শুরু হয়। যে নির্মাণে আমূল বদলে যায় রূপকথার নারী চরিত্ররা। নিষ্ক্রিয়রা হয়ে ওঠে সক্রিয়, দুর্বল হয়ে ওঠে সবল, ব্যক্তিত্বহীন নারী চরিত্র পায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের স্বকীয় অনুভব, খুঁজে পায় হারিয়ে যাওয়া মানবিক মর্যাদা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, লোকমুখে প্রচলিত ও সংগৃহীত রূপকথাগুলো প্রাচীন সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। যে সমাজে নারী রাজকন্যা বা রানি—যা-ই হোন না কেন, তাঁর অস্তিত্ব মূলত পুরুষনির্ভর। জীবনে চলার পথে নারীর পাথেয় হলো অপূর্ব দৈহিক সৌন্দর্য, অফুরন্ত রূপ-যৌবন ও পুত্রসন্তান ধারণের যোগ্যতা। বেশির ভাগ রূপকথাতেই নারীকে মূল্যায়ন করা হয় তাঁর দৈহিক সৌন্দর্য ও বশ্যতা স্বীকারের মানদণ্ড দিয়ে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গ্রিম ভাইদের সংগৃহীত ১৬৮টি রূপকথার গল্প পর্যালোচনা করে দেখান যে শতকরা ৯৪ ভাগ কাহিনিতেই নারীর নমনীয় শারীরিক সৌন্দর্যের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। তাঁরা এমনও দেখিয়েছেন, একটা গল্পে ১১৪ বার নারীর সৌন্দর্যের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ রূপকথাতেই সুন্দরী বা শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী নারীরা জয়ী হন। আবার গল্পের ডাইনি বা রাক্ষসী অথবা নেতিবাচক নারী চরিত্রটি থাকে অসুন্দরী, কুৎসিত। নারীবাদীরা এর সমালোচনা করে বলেন, একজন নারীকে শুধু তাঁর সৌন্দর্য দিয়ে বিবেচনা করলে তাঁর অন্য গুণগুলো ঢাকা পড়ে যায়। কিছু অর্জন করতে হলে অপরূপ সুন্দরী হতে হবে, এ ধরনের ধারণা শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে অনেকেই শিক্ষা, ক্যারিয়ার এসব ভুলে শুধু সৌন্দর্যচর্চাকেই জীবনের মূল লক্ষ্য মনে করতে পারে। এটা স্পষ্ট যে রূপকথার নারীরা পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের আদলেই তৈরি, তারা রাজার চরণে নিজেকে বিলিয়েই আনন্দ পায়, রাজকন্যারা অপেক্ষা করে থাকে কবে এসে তাকে উদ্ধার করবে রাজার কুমার আর সুয়োরানি-দুয়োরানি যে-ই হোক, মাতৃত্বের মাধ্যমেই তারা জীবনে পূর্ণতা লাভ করে। মেয়েরা যদি চুপচাপ মুখ বুজে সব মেনে নেয়, যদি থাকে অক্রিয় আর আনুগত্যপ্রবণ ও অসহায়, তবেই গল্প শেষে সে পায় ভালোবাসা, ধনসম্পদ এবং উচ্চতর সামাজিক অবস্থান। যারা ক্ষমতাবান নারী—সক্রিয়, সাহসী আর নিজের ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, রূপকথায় তারা খারাপ চরিত্র।
রূপকথার প্রায় প্রতিটি গল্পেই দেখা যায় পুরুষের বহুবিবাহকে সমর্থন করা হয়েছে, নানাভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুরুষের শক্তিমত্তা, বীরত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। পাশাপাশি নারীকে দেখানো হয়েছে পরনির্ভরশীল, দুর্বল, অসহায়, নির্যাতিত, ব্যক্তিত্বহীন ইত্যাদি। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীকে থাকতে হয় পরাধীন, পবিত্র ও পতিব্রতা; বিপরীতে পুরুষের একাধিক নারীসঙ্গ উপভোগে কোনো বাধা নেই।
বাংলা শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রাচীন রূপকথার সংকলন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সংকলিত ও সংগৃহীত ঠাকুরমার ঝুলি। এক শ বছরেরও আগে ১৯০৬ সালে প্রথম কলকাতার একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে সংকলনটি প্রকাশিত হয়। আমাদের অনেকের ছোটবেলাই কেটেছে ঠাকুরমার ঝুলির মন ভোলানো রূপকথা শুনে—রাজপুত্র-রাজকন্যা, রাক্ষস-খোক্কস আর ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমির রহস্যে ভরা জগতে। সেই সময় এসব গল্প শুনে শুনে অপেক্ষা করেছি কখন ন্যায় আর সত্যের জয় হবে, কখন জানব সব দুঃখ-কষ্ট শেষে ‘তাহারা সুখে-শান্তিতে বাস করিতে থাকিলেন।’
গবেষকেরা বলেন, রূপকথায় সরল উপায়ে ভালো কিছু জিনিসও শিশুর মনে গেঁথে দেওয়া হয়। যেমন সব রূপকথার গল্পেই মোটাদাগে ভালো-মন্দ বা সৎ-অসৎ—এমন দুটি পক্ষ থাকে। যারা অন্যায়কারী, গল্প শেষে তাদের শাস্তি হয় আর যারা ভালো, সৎ ও ন্যায়ের পক্ষে জয় হয় তাদের। তবে মাঝেমধ্যে রূপকথায় অপরাধীর শাস্তিও হয় ভয়ংকর ধরনের। যেমন ‘হেঁটে কাঁটা উপড়ে কাঁটা দিয়া পুঁতিয়া ফেলিতে আজ্ঞা’ হয়। ‘তলোয়ারের এক কোপে ঘাড় হইতে মাথা আলাদা করিয়া’ ফেলার মতো যার-তার ‘গর্দান’ নিয়ে নেওয়া বা ‘কাটিয়া ফেলা’র মতো শাস্তির বিধানও আছে রূপকথায়।
অনেকে বলেন, রূপকথা পড়ার বয়সে শিশুমনে হয়তো সমালোচনামূলক অনেক প্রশ্নই জাগে না। গল্পের নাটকীয়তা আর চমৎকারিত্বই মুগ্ধ করে রাখে তাদের। এমনও বলা হয়, কল্পনার বিস্তৃতিতে রূপকথা শিশুকে বরং সাহায্যই করে। রূপকথার বইয়ে পাতায় পাতায় সাজিয়ে রাখা প্রেম, দ্বন্দ্ব, সহানুভূতি, স্বপ্ন, আজগুবি চিন্তাভাবনা শিশু মনস্তত্ত্বকে সমৃদ্ধ করে। শিশুরা হয়তো একটু বড় হলেই বুঝে যায় রূপকথার জগৎ আর বাস্তব দুনিয়া আলাদা। আবার কেউ কেউ বলেন, উল্টোটাও তো হতে পারে, রূপকথার গল্পে শাস্তি দেওয়ার এসব সহিংস পদ্ধতি, বীভৎসতা অবচেতনে হয়তো শিশুর মনে ছাপ ফেলে যায়। কে জানে ফুল থেকে কে মধু গ্রহণ করে আর কে নেয় বিষ?
তবে রূপকথা তো আর আকাশ থেকে এসে পড়েনি, এগুলো আমাদের লোক ইতিহাসের সমাজবাস্তবতাও বটে। যে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি রূপকথাতে দেখতে পাই। দেখতে পাই, এমন এক পিতৃতান্ত্রিক জগৎ, যেখানে পুরুষ আধিপত্য বিস্তার করেন আর নারী নিয়ন্ত্রিত হতেই ভালোবাসেন। রূপকথার ‘ভালো’ নারীরা সব সময়ই অসহায় ও দুর্বল, বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকাই তাদের নিয়তি। সন্তান জন্ম দিতে না পারলে, কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে, পুত্রসন্তান জন্ম না দিতে পারলে রানিদের কপালে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। আর কোনো রানি যদি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েই ফেলে, তবে অন্য রানিরা মিলে তার জীবন অতিষ্ঠ তো করে তোলেই, এমনকি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সদ্যোজাত শিশুর প্রতি চরম নিষ্ঠুর আচরণ করতেও তারা দ্বিধা করে না।
পশ্চিমে এখন তাই রূপকথা লেখা হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে, চরিত্রগুলোর লৈঙ্গিক পরিচয় পাল্টে দিয়ে। যেমন রাপানজেল যদি ছেলে হতো, তার কি লম্বা চুলের বদলে থাকত লম্বা দাড়ি? সিন্ডারেলা ছেলে হলে সেকি তবে নাচতে যেত রাজকুমারীর নৃত্যসভায়? ইতালির দুই নারী এলেনা ফাভিলি ও ফ্রাঞ্চেস্কা কাভালো বলেছেন, তাঁরা তাঁদের ছোটবেলায় যত রূপকথা শুনেছেন, তার কোনোটিতেই একটি মেয়ে তার নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেয়নি, সব সময়ই তাদের সাহায্য করেছে কোনো রাজপুত্র, নয়তো ভাই অথবা আর কিছু না হলে ইঁদুর। এর ফলে তাঁরা দেখেছেন, কিশোরী বয়সে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাঁদের মতে, প্রতিটি মেয়েরই এই ভেবে বড় হওয়া উচিত যে সে যা চায়, তা-ই হতে পারে। ২০১৭ সালে এলেনা আর ফ্রাঞ্চেস্কা তাই লিখেছিলেন এক শ জন বিপ্লবী সাহসী সফল নারীর জীবনের সত্যিকারের রূপকথা গুড নাইট স্টোরিজ ফর রেবেল গার্লস। যা পড়ে শিশুরা বুঝবে, নারীও পারেন নিজ হাতে আপন ভাগ্য গড়ে নিতে। তারা বুঝবে, সাফল্য শুধু নারী বা পুরুষ হওয়ার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর; সমান সুযোগ পাওয়ার ওপর।
গত বছর সুযোগ হয়েছিল সুইডেনের অলিকা প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধি ক্যারন স্যামসনের সঙ্গে কথা বলার। সুইডিশ ভাষায় অলিকা মানে ভিন্ন বা আলাদা। অলিকা শিশুদের জন্য সুইডিশ ভাষায় ভিন্ন ধরনের বই প্রকাশ করে থাকে। ক্যারন বলেন, তাঁরা মনে করেন, শিশুদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বই পড়া উচিত, যাতে শিশুরা উপলব্ধি করতে পারে শুধু লিঙ্গগত পার্থক্যের কারণে কারও জীবন ও কাজ সীমাবদ্ধ হতে পারে না। অলিকা প্রকাশিত বইগুলো নারী-পুরুষের ব্যক্তিত্বের ভিন্ন ধরন সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। যেমন সাধারণভাবে মনে করা হয়, মেয়েরা হবে আবেগপ্রবণ, নিষ্ক্রিয়, মিষ্টি, সুন্দরী অন্যদিকে ছেলেরা হবে শক্তিশালী, সাহসী, রাগী, লম্বা ইত্যাদি। আবার মেয়েরা থাকবে ঘরে আর ছেলেরা দাবড়ে বেড়াবে বাইরের পৃথিবী। এসব প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে লেখা অলিকার ‘ফুটবল স্টার’ সিরিজের বইগুলোর প্রচ্ছদে দেখা যায়, ফুটবল পায়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে একটা মেয়ে, ল্যাবরেটরিতে কাজ করছে আবিষ্কারক জোহানা নামের চশমা পরা গম্ভীর এক বালিকা, এমনকি জলদস্যুর গল্পগুলোতেও সমুদ্রে জাহাজ হাঁকিয়ে চোখে কালো পট্টি বেঁধে মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে মেয়েরা। ‘পুরুষেরা কখনো কাঁদে না’, এমন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে লেখা বইয়ের নাম বাবা কেন কাঁদেন? বইয়ের ঝলমলে রঙিন প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে হাপুস নয়নে কেঁদে যাচ্ছেন শার্ট-প্যান্ট পরা একজন স্মার্ট বাবা। তাঁকে ঘিরে আছে ছেলেমেয়েরা। ক্যারন বলছিলেন, অলিকা প্রকাশনী বিশ্বাস করে, ভালো সাহিত্য পৃথিবীতে স্থান করে দেয় শিশুকে আর শিশুর মধ্যেও স্থান করে নেয় পৃথিবী।
ফিরে আসি শুরুর কথায়, এই পিতৃতান্ত্রিক দুনিয়ায় হাজার বছর ধরে আছে পুরুষেরই আধিপত্য, আর নারীই থাকেন নিয়ন্ত্রিত। জৈবিকভাবে কেউই তাঁর নারী-পুরুষ পরিচয় বদলাতে পারেন না। তবে সমাজনির্ধারিত কর্মবিভাজন বা সামাজিক মানসিক বৈষম্য নিয়ে তো প্রশ্ন করাই যায়। এই যে রূপকথাগুলোতে লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রতিফলন দেখেও সেসব নিয়ে দিনের পর দিন প্রশ্নহীন থাকাকে বিশ্লেষকেরা দেখছেন ‘সমষ্টিগত অসচেতনতা’ হিসেবে। এই অসচেতনতা লৈঙ্গিক আদর্শের ভিত্তিতে নির্মিত, যা ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়কেই প্রভাবিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় ‘নারীসুলভ’ সবকিছুই খারাপ, যে পুরুষের মধ্যে তথাকথিত নারী আবেগ রয়েছে, তিনিই দুর্বল, তিনিই হাসির পাত্র। পরবর্তী সময়ে নারীবাদীরা পুরুষতান্ত্রিক নির্দেশনায় নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া সব বৈষম্যমূলক ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। নারীবাদী রূপকথায় আমরা দেখি নারীদের দক্ষতা রয়েছে পুরুষের মতোই, সেখানকার নারী চরিত্রগুলো শক্তিশালী, সাহসী, স্বাধীন ও সক্রিয়। ঐতিহ্যগত লিঙ্গবৈষম্যের সঙ্গে আপস না করে আমাদেরও উচিত বদলে যাওয়া জগতের দিকে দৃষ্টি ফেরানো।
বাস্তবে তো দেখতেই পাচ্ছি গত কয়েক দশকে কত পরিবর্তন ঘটে গেছে বাংলাদেশের নারীর জীবনে। শুধু শিশুর জন্ম দেওয়া আর গৃহকর্ম করার মধ্যে তাঁর জীবন আর সংকুচিত নয়। নারী এখন দুর্দশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোনো রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকেন না, বরং নিজের শক্তিতে রাজপুত্রকেই বিপদ থেকে উদ্ধার করে আনেন। আমাদের পথে-হাটে-ঘাটে-ঘরে-বাড়িতে এমনকি ফুটবল আর ক্রিকেটের মাঠেও এখন মেয়েদের দাপট। চাইলেই এই মেয়েদের নিয়ে আমরা লিখতে পারি নতুন দিনের নতুন রূপকথা। একসময় এই দেশে মেয়েরা যাতে মাঠে খেলতে না যায়, সেই দাবি তুলে মিছিলও তো হয়েছে। কলকারখানায় নারীরা যেন কাজ না করতে যান, সে রকম উদ্ভট প্রচারণাও চলেছে। কিন্তু নারীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। আজ সব বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে নারীর জয়যাত্রার ধ্বনি বাজছে চারদিকে। নিজের ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়ে নিচ্ছেন তাঁরা। নতুন সময়ের রাজকন্যারা বুদ্ধিমতী, আত্মবিশ্বাসী, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোমাঞ্চকর কাজে আগ্রহী এবং সব সময় সক্রিয়। আর তাই এই নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন সময়ের রূপকথা আমাদের লিখতে হবে বৈকি।
যে রূপকথার রাজা পুত্রসন্তানের জন্য কাতর হয়ে সাতটি বিয়ে করবে না। যে রূপকথার রানি রাজার পাশে দাঁড়িয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পাবে না। যে রূপকথার রাজপুত্ররা দুঃখ পেলে কাঁদতে লজ্জা পাবে না। রাজকন্যারা নির্ভয়ে ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলে শিকার করতে বের হবে। রূপকথার সেই পৃথিবীতে সব রাজপুত্র আর রাজকন্যার জন্য থাকবে সমান সুযোগ, সমান মর্যাদা আর সমান অধিকারের নিশ্চয়তা।