মাসুদ রানা: স্মৃতির ভেতর তোমার দুর্ধর্ষ মিশন
আমাদের দেশের কয়েক প্রজন্মের মানুষের ‘জীবনে প্রথম’ নামক কত স্মৃতির সঙ্গেই না মিশে আছেন ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। এ লেখায় ধরা আছে এক পাঠকের স্মৃতি
আমার মাসুদ রানা অনেক রকম। মাটির দুনিয়ায় মা–বাবার শাসন। তাই বড়দের বই পড়ার আসন বানিয়ে নিয়েছিলাম টিনের চালে। চালের ওপর কার্নিশের দেয়াল। তাতে হেলান দিয়েও পড়া যায়, চাইলে সটান শুয়ে বুকের ওপর বই তুলেও পড়া যায়। উল্টানো গামলার মতো আকাশটা রোদে ভরে আছে। কিন্তু গরম লাগছে না। পেছনের বাড়ির আমগাছটা চালের ওপর ডালপালার শামিয়ানা দিয়ে রেখেছে। তার তলে চিত হয়ে শুলে নাকের ওপর আমপাতা, তার ঘ্রাণ, ছুঁয়ে থাকা; সব হয়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে দেখা যায়, এলাকার সবচেয়ে উঁচু শিমুলগাছ থেকে তুলা উড়ে যাচ্ছে, মেঘের মহল ভেসে যাচ্ছে। তার মানে সেটা চৈত্র বা বৈশাখ মাস হবে। ও রকম সময়েই শিমুলের ফল ফাটে। ওই শিমুলগাছটার তলায় ঝোপজঙ্গলের ভেতরে আমরা টারজান টারজান খেলতাম, বাঁশের বন্দুকের জন্য এলামগাছের গোটা খুঁজতাম।
সারা দিন খুব গরিব গরিব লাগত আমাদের। পয়সাওয়ালা ঘরের ছেলেদের পকেটেও টাকাপয়সা তেমন থাকত না। থাকত মার্বেল কিংবা লাটিম। মালাই আইসক্রিম কেনার আট আনাও সব দিন জুটত না। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কোনোমতে সাত-আট টাকা হলেই আর পায় কে? দে দৌড়। দুঃসাহসী টম সয়্যার আর হাকলবেরি ফিন যখন মিসিসিপি নদীর চরে ডাকাত দলের মুখোমুখি, তখন গোঁফ না গজানো কিশোর আমি হাঁটিতে গিয়া মর্দ দৌড়াইয়া চলিল ভঙ্গিতে চলে এসেছি সাতমাথার গ্যাঞ্জাম চত্বরে। সেটা পেরিয়ে থানা রোড। ও পথ দিয়ে ভদ্রভাবেই হেঁটে যেতে হয়। বাবার বন্ধুরা কেউ যদি দেখে ফেলে? কিন্তু বিপদ ছিল অন্যখানে। হ্যাংলা-পটকা এই বালক কী করে মুসলিম বুক ডিপোর বুড়ো লোকটাকে বলি, ‘মাসুদ রানার বই দ্যান, নতুন বই।’ ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ লেখা বই আমাকে দেবে? জীবনে প্রথম একা একা বাড়ি থেকে এত দূর আসা আর জীবনে প্রথম নিজের টাকায় বই কেনা! ‘জীবনে প্রথম’ নামক কত স্মৃতির সঙ্গে মিশে আছেন মাসুদ রানার স্রষ্টা আপনি, কাজী আনোয়ার হোসেন!
সব জাতিরই কাল্পনিক নায়ক-মুখ থাকে। মাসুদ রানা বাংলাদেশের সেই কাল্পনিক মহানায়ক। এই নায়কের কোনো সংস্কার নেই। নেই পিছুটান। আবেগপ্রবণ কিন্তু ভাবালু নন। দেশপ্রেমিক কিন্তু জাতীয়তাবাদী হতে চান না। প্রেমিক, তবে দাপুটে ব্যাটাগিরি নেই তাঁর স্বভাবে। কোমলে-কঠিনে মেশানো এই নায়ককে কোথায় পেলেন কাজী আনোয়ার হোসেন?
একবার মরুভূমির মাঝখানে এক সরাইখানায় রাত কাটাচ্ছি। কী এক গোপন মিশনে ভারতের রাজস্থানের এই জনহীন বালুর সাগরে এসেছি, তা মনে নেই। সরাইখানার মালিক এক সুন্দরী নারী। সে রাতে কি চাঁদ উঠেছিল? নইলে গেস্টহাউসের বাংলোয় শুয়ে রাস্তার ওপারের দোতলার জানালায় সেই উর্বশীর শরীররেখা দেখলাম কী করে? অকুতোভয় স্পাইয়ের প্রেম এভাবে আমারও প্রেম হয়ে ওঠে। সব মাসুদ রানা পাঠকও একেকজন মাসুদ রানা। নাহলে এত টান কেন ওই ঘরছাড়া কোমলে-কঠিন মেশানো যুবকের প্রতি? তো, আমাদের শহরে তখন অনেক মাসুদ রানা। কিন্তু সোহানা একজনই। জেলা পরিষদের মোড়ে তখন একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সেটার কাউন্টারে বসতেন এক যুবতী। তিনি আবার মোটরসাইকেলও চালাতেন। সেই মফস্বলে, অল্প আলোর সন্ধ্যাদেশে সরাইখানা না থাকলেও মাসুদ রানার ওই নীলাবতী নারীর মতোই রহস্য আর রোমাঞ্চের আভাস দিতেন।
এভাবে তিন গোয়েন্দা সিরিজের কিশোর-মুসা-রবিনের পাল্লায় পড়ার আগেই মাসুদ রানা হয়ে গেছি। ‘কু-উ-উ’ ডাক দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। সেটা কি ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ? ট্রেনের মধ্যেই খুনের পর খুনের লোমহর্ষময় সব ঘটনা। আরেকবার রাশান নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে চড়ে সাগরতলার রূদ্ধশ্বাস মিশন। কিংবা মালয় সাগরতীরে আমার মৃত্যুর ব্যথায় আমিই কাঁদতে কাঁদতে বলছি, ‘আই লাভ ইউ ম্যান!’
যে পড়িবে সে-ই নায়ক হইয়া যাইবে টাইপ অবস্থা। পাড়ার খলিল ভাই মাসুদ রানা, বন্ধু প্রিন্সও মাসুদ রানা। বুড়ো মাসুদ রানা থেকে খোকা মাসুদ রানায় ভরপুর নব্বইয়ের দশকের শুরুটা। তো, মাসুদ রানা রোম-ভিয়েনা করে বেড়াচ্ছে যখন, তখন আমার শহরে এক গুপ্ত কুঠুরি আবিষ্কার করে ফেললাম। শহরের মাসুদ রানা গং মারফত খবর পেলাম, সেই থানা রোডেই বিশাল গুপ্তধন আবিষ্কৃত হয়েছে। একদিন কলেজের বাস থেকে বাড়ির কাছে আর নামলাম না। নামলাম সাত মাথার কাছে। মহা উত্তেজনা নিয়ে সেই গুপ্তধনের আড়তের সামনে গিয়ে ধুশ করে হতাশ হয়ে গেলাম। আরে, এটা তো হার্ডওয়্যারের দোকান। রং, নাট-বল্টু, পেরেক আর শিরীষ কাগজের ডিপো। এখানে বই কোথায়? লুঙ্গি পরা মধ্য বয়সী মালিক ইশারায় ডাকলেন। ছোট্ট দোকান। একপাশ দিয়ে কাঠের মইয়ের মতো সিঁড়ি উঠে গেছে। দশ-বারোটা ধাপ ওঠার পরে যেখানে ছাদ থাকার কথা, সেখানে একটা কাঠের ঢাকনা। সটো সরালে একটা ফোকর। ফোকর দিয়ে মাথাটা মাত্র তুলেছি, ওমা, এ কী! চারদিকের শেলফে শত শত প্রজাপতি মার্কা বই। সেবা প্রকাশনীর সব বইয়ের স্পাইনে ছাপা থাকত ওই মোহ ধরানো হলুদ প্রজাপতি।
সম্ভবত লোহালক্কড়ের ওই ব্যবসায়ীর নিজের সংগ্রহের বই ওগুলো। সেবা প্রকাশনীর সব রকম বই, মাসুদ রানা, কুয়াশা সিরিজ, ওয়েস্টার্ট, অনুবাদ, থ্রিলার, রোমান্টিক, কিশোর ক্ল্যাসিক কী ছিল না সেখানে। ১৫ বা ২০ টাকা জামানত দিয়ে সদস্য হওয়া গেলেই কেল্লা ফতে। বইপ্রতি ভাড়া দুই টাকা। সম্পর্ক হয়ে গেলে ওই একই জামানতে দুটি-তিনটি করে বই নিতাম। ছয় টাকার বদলে পাঁচ টাকায় তিনটা বইও ভাড়া নেওয়া যেত।
সেবা প্রকাশনীতে দাখিল হওয়ার পরে এ রকম জায়গা আবিষ্কারে মজা পেতাম। এ রকম একটা বই ভাড়ার দোকান ছিল মহাস্থানের শাহ সুলতানের মাজারের উল্টা দিকে, মহাসড়কের ধারে। যত রেলস্টেশনে গেছি, বুকস্টল ভরে থাকত ‘সেবা’র বই। ঢাকায় বেড়াতে এসে দেখতাম, রাস্তার পাশে সংবাদপত্রের দোকানেও সেবার বই। আর কী হিংসা হতো! ঢাকার এরা এত সহজে বই পায়?
মাসুদ রানা আমাদের কল্পনা করার সাহস দিয়েছিল, দিয়েছিল সাহসী হওয়ার কল্পনাও। ‘দুর্ধর্ষ’ শব্দটার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ও মাসুদ রানার বরাতেই। সেই যে নিউজপ্রিন্টের পলিরঙা পাতার প্রতিটি নতুন রানা সিরিজের শুরুতেই থাকত মাসুদ রানার পরিচয়, ‘কাছে টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।’ সেখানেই ছিল শ্যামা রঙের ছিপছিপে গড়নের পেটানো শরীরের নায়কের ‘দুর্ধর্ষ’ খেতাবের বয়ান।
মাসুদ রানা এই ঘাড়কুঁজো বাঙালিকে বৈশ্বিক করেছে। বাংলাদেশি এক স্পাই দুনিয়ার বাঘা বাঘা কিংবা শেয়ালজাতীয় স্পাইদের হারিয়ে দিচ্ছে, টম অ্যান্ড জেরি খেলছে ভয়ংকর কবীর চৌধুরী কিংবা উ সেনের সঙ্গে; এই গর্ব রাখি কোথায়? তখন তো জানতাম না যে জেমস বন্ড কিংবা অন্য কোনো থ্রিলারের কাহিনির ছায়াতেই এই দুর্ধর্ষ বীরের জন্ম। জানলেই–বা কী? প্রথম প্রেমের কোনো দোষ চোখে পড়ে না। পড়েওনি। কাহিনি ধার নেওয়া হয়েছে তো কী, নায়ক তো আসলই। ধ্বংস পাহাড়, ভারতনাট্যম, পিশাচ দ্বীপ যিনি লিখতে পারেন, লাখো পাঠকের সাপ্তাহিক কি মাসিক খাইখাই মেটাতে তাঁকে তো অন্যের কাছে হাত পাততে হবেই। কাজীর ব্যাটা কাজী আনোয়ার হোসেন আর শেখের ব্যাটা শেখ আবদুল হাকিম আমাদের চোখে জোড়া দেবদূত, যাঁরা অদৃশ্যলোক থেকে পাঠকের জন্য মণি-মুক্তা তুলে আনেন। আমাদের বড় হয়ে ওঠা দেখতে শেখা তো এই যুগল দেবদূতের রোমাঞ্চময় ডানার ঝাপটানি খেয়েই।
পাঠকেরা ভক্ত হয় লেখকের। অথচ আমরা ভক্ত হয়ে গেলাম লেখকের বানানো চরিত্রের। মাসুদ রানার। আমরা যারা শার্লক হোমস কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা পড়ার আগেই কাজী সাহেবের মাসুদ রানা কিংবা হুমায়ূনের হিমুর হাত ধরেছি, আমাদের পক্ষে সেই হাত ছাড়া কঠিন। শার্লক হোমস আর ওয়াটসন ব্রিটিশ হিরো। কিন্তু দুজনই যাবতীয় ষড়যন্ত্রের পেছনে কেবল বিষাক্ত মানসিকতার বিদেশিদের পান। ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদের ছায়া থেকে বের হন না শার্লক ও তাঁর বন্ধু। শার্লক হোমসের ছায়ায় তৈরি ফেলুদাও হোমসের মতোই রাশভারী। জটিল মনস্তত্ত্বের বুদ্ধিজীবী ধরনের মানুষ। চারমিনার ব্র্যান্ডের সিগারেটসেবী ফেলুদা ওরফে প্রদোষ মিত্তির কলকাতাই মধ্যবিত্তের বাবুয়ানার বাইরে তিনি খুব একটা যান না। ফেলুদা ও তাঁর দুই সাগরেদকে উচ্চবর্ণের গণ্ডির বাইরে কল্পনা করতে পারেননি সত্যজিৎ। ফেলুদার নাম প্রদোষ মিত্র, সহযোগী তোপসের উপাধিও মিত্র, আর জটায়ু লালমোহন গাঙ্গুলীও ব্রাহ্মণই। ব্রাহ্মণ সত্যজিৎ আপন শ্রেণি ও গোত্রের বাইরে নায়ক খুঁজে পেলেন না, এটা আফসোস। কবীর চৌধুরীর ষড়যন্ত্র না থাকলে তো মাসুদ রানা সুলতা রায়কে বিয়ে করে সম্প্রদায়ের সীমা ডিঙাত। অথবা অনীতা গিলবার্টকে বিয়ে করে ভাঙত জাতের জাঁতাকল। মাসুদ রানার সঙ্গীরাও বিচিত্র। সেখানে সোহেলও আছে, সলিলও আছে, সোহানাও আছে রূপাও আছে। আর আছে অপূর্ব গিলটি মিয়া। ঢাকাই কুট্টি গিলটি মিয়া ঢাকাই জবান ও জীবন নিয়ে ‘সুশীল সংস্কৃতির’ বাইরে থেকে এসে উপনায়ক হয়ে ওঠেন। থ্রিলার সাহিত্যে এহেন দেশীয় রসের আমদানি আসলেই অপূর্ব। মাসুদ রানা আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমী। সময়ের বিবর্তনে মাসুদ রানার শত্রু-মিত্র বদলে গেলেও রোমান্টিক এক বাংলাদেশিই তিনি থেকে গেছেন। এটাই তাঁর চরিত্র-সৌরভ।
এভাবে কাজী আনোয়ার হোসেন কয়েক প্রজন্মের পাঠকদের কেবল বিরাট দুনিয়ারই খোঁজ দেন না, মুক্ত মানুষের মূল্যবোধ গড়তেও কাজ করে গেছেন তাঁর থ্রিলার উপন্যাসগুলোর মাধ্যমে। এমনকি তাঁর ভিলেনরাও সব অমানুষ নন। পাগল বিজ্ঞানী কবীর চৌধুরীর ভেতরেও মানুষ দেখান।
সব জাতিরই কাল্পনিক নায়ক-মুখ থাকে। মাসুদ রানা বাংলাদেশের সেই কাল্পনিক মহানায়ক। এই নায়কের কোনো সংস্কার নেই। নেই পিছুটান। আবেগপ্রবণ কিন্তু ভাবালু নন। দেশপ্রেমিক কিন্তু জাতীয়তাবাদী হতে চান না। প্রেমিক, তবে দাপুটে ব্যাটাগিরি নেই তার স্বভাবে। কোমলে-কঠিনে মেশানো এই নায়ককে কোথায় পেলেন কাজী আনোয়ার হোসেন? এই নায়ক ছিল। সেবা প্রকাশনীরই প্রকাশিত আত্মজৈবনিক থ্রিলার ‘হেল কমান্ডো’তে এক মেজর আনোয়ারকে পাই। ‘দুর্ধর্ষ’ বলতে কী বোঝায়, তা কল্পনা করতে গেলে পাঠকের এই মেজরকে মনে পড়বে। যে দেশে এক মেজর মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন, যে দেশের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সশস্ত্র বিপ্লবের নেতা হয়ে ওঠেন, যে দেশের সেনারা কৃষকের সঙ্গে মিশে মুক্তিযুদ্ধ লড়েন, সেই দেশে মেজর মাসুদ রানাকে দূরের মানুষ মনে হয় না। তার গায়ের শ্যামা রং তাকে আরও বেশি করে বাংলাদেশি করে তোলে। বাংলাদেশিরা সব বিষয়েই বিভক্ত, কিন্তু পাঠকের মনে মাসুদ রানাকে নিয়ে দলাদলি নেই। মাসুদ রানা এই বিভক্ত জাতির অভিন্ন নায়ক।
এদিকে আমরা বড় হয়ে উঠি। দিন বয়ে যায় জলেশ্বরীতলার ওপর দিয়ে করতোয়া হয়ে যমুনার দিকে। শুনতে পাই বর্ডার দিয়ে মসলা পাচারের ব্যবসা করতে করতে ‘মাসুদ রানা’র মতো চৌকস হয়ে ওঠা বন্ধুটাও মারা গেছে। সেই জগৎও আর নেই। শহরের প্রথম নারী মোটরবাইকার সেই মেয়েটির খোঁজও হারিয়ে গেছে। তবু ইচ্ছা করে সেই প্রজাপতি মার্কা মন নিয়ে আবার চালের কার্নিশে উঠে বসি। মাসুদ রানা পড়তে পড়তে দেখি সেই সব সাদাকোলো দুপুরবেলা। দেখি আকাশে শিমুল তুলা ওড়ে, রাস্তা দিয়ে লেইস-ফিতা-চুরির ফেরিওয়ালা যায়। দেখি, ছোটনফুদের ছাদ পড়ে আছে ফাঁকা।
ভাইবোনেরা টিভিতে টারজান দেখছে বোধ হয়। মা বোধ হয় এখনো চুলার পাড়ে। আর আমার মন ঘুরে বেড়াচ্ছে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা কিংবা লাস ভেগাসের ক্যাসিনো অথবা বঙ্গোপসাগরের কোনো নিষিদ্ধ দ্বীপে। আর এত সব স্মৃতি নিয়ে তখন তুমি, মাসুদ রানা, পালাবে কোথায়? আপনিই–বা আর কত দূরে যাবেন কাজী আনোয়ার হোসেন। আমাদের করুণ-কঠিন বাস্তবতার মধ্যে আপনি দুর্ধর্ষ সব কল্পনা বুনে দিয়েছেন। কোমল-কঠিন হতে শিখিয়েছেন। আপনার মাসুদ রানাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। এটাই তার আসল দুর্ধর্ষ মিশন, যার থেকে কখনো ছুটি নেই তার।
ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।