বইমেলা হোক ভাষার মাসেই
হানা দিয়েছে অমিক্রন। পেছাল অমর একুশে বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি যে মেলা হওয়ার কথা ছিল, তা আবার কখন, কীভাবে হতে পারে—এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে নানা মত। বেশির ভাগ লেখকই চান ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক। কিন্তু করোনা বাস্তবতাও আমলে নিয়েছেন তাঁরা। বইমেলা নিয়ে আট লেখকের কথকতা।পড়ুন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অভিমত।
একুশের বইমেলা আর দশটা দেশের বইমেলার মতো হলে বলা যেত, এক মাস কেন, মেলা দুই মাস পিছিয়ে দেওয়া হোক অথবা বাতিল করে দেওয়া হোক। এই বইমেলার সঙ্গে সম্পর্কিত আমাদের একুশের ইতিহাস, যার একটি দিক ছিল নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিগত নিজস্বতার প্রতিষ্ঠা দেওয়া। এই কাজ এখনো শেষ হয়নি, হওয়ারও নয়, যেহেতু এর সংস্কৃতির যে মূল ভূমি, যা উদারভিত্তিক, মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, যাতে সব মানুষের সমান প্রবেশাধিকার, তা এখন সংকুচিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদ এখনো সক্রিয়। একটা বইমেলা তার ফয়সালা করতে পারে না। কিন্তু একুশকে ঘিরে যার আয়োজন, তার একটা সম্ভাবনা থাকে মানুষকে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে শামিল করতে। এ জন্য একুশের বইমেলা ফেব্রুয়ারিতে করলে এর প্রাসঙ্গিকতাটা বজায় থাকে, অন্য কোনো মাসে করলে তা কেবলই বইমেলা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেই বইমেলারও প্রয়োজন আছে। আমাদের দেশে যত শিক্ষিত মানুষ, তার তুলনায় পড়ুয়া মানুষ অনেক কম। বই কিনে পড়ার মতো মানুষ আরও কম। তারপরও বই লেখা হয়, ছাপা হয়, প্রকাশকেরা বই ছাপেন। প্রকাশকেরা তাকিয়ে থাকেন বইমেলার দিকে। এক বছরের যত লগ্নি, তা এই মেলা ঘিরে। এটি না হলে তাদের হিসাবের খাতাজুড়ে লাল কালির দাগ পড়ে।
এদিকে কোভিড এখন বুনো চেহারা ধরেছে। অমিক্রন এখন নতুন আতঙ্ক। এক মারি–বিশেষজ্ঞ ২৫ জানুয়ারি জানালেন, আরও দুই সপ্তাহ কোভিড ঊর্ধ্বমুখী থাকবে, তারপর নিম্নগামী হবে। তাহলে ১৫ ফেব্রুয়ারি হয়তো বইমেলা শুরু করা কঠিন হবে। তবে আমার বিশ্বাস, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবস্থার উন্নতি ঘটবে। টিকা কার্ড দেখিয়ে মেলায় ঢোকার ব্যবস্থা করলে, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলে, ভিড় জমতে না দিলে (এ জন্য প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করতে হবে), প্রবেশতোরণগুলোয় প্রয়োজনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করলে বইমেলা চলতে অসুবিধা হবে না।
কোভিড সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের নিচে নামতে থাকলে বইমেলা শুরু করা যায়। আমি চাই বইমেলা হোক—১৫ ফেব্রুয়ারি সম্ভব না হলে, মেলা শুরু হোক ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে। আর এ মেলা আমাদের আরেকটি সংস্কৃতিচর্চা শেখাক—অপরের সুস্থতার জন্য মাস্ক পরা ইত্যাদির সাময়িক কষ্ট আনন্দে সয়ে নেওয়ার।