ফেব্রুয়ারিতেই মেলা হওয়া উচিত

হানা দিয়েছে অমিক্রন। পেছাল অমর একুশে বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি যে মেলা হওয়ার কথা ছিল, তা আবার কখন, কীভাবে হতে পারে—এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে নানা মত। বেশির ভাগ লেখকই চান ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক। কিন্তু করোনা বাস্তবতাও আমলে নিয়েছেন তাঁরা। বইমেলা নিয়ে আট লেখকের কথকতা।পড়ুন সাদাত হোসাইনের অভিমত।

বইমেলা কীভাবে হওয়া উচিত—এর উত্তর নিয়ে অনেক ভেবেছি। ভেবে অদ্ভুত এক দ্বিধায় পড়েছি। একজন লেখক কিংবা পাঠক হিসেবে আমি অবশ্যই চাই বইমেলা হোক। কিন্তু গত বছর যে প্রাণহীন, বিবর্ণ বইমেলা দেখেছি, তাতে অমন মেলা দেখতেও মন সায় দেয় না। তাহলে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কেমন বইমেলা চাই? কেমনভাবে সম্ভব হবে সেটি?

দ্বিধাটা এখানেই। যেনতেন রকমের একটা মেলা যেমন দেখতে ইচ্ছা হয় না, তেমনি একদম না হওয়াটাও না। আবার হুট করেই কোনো একটা ‘মিরাকল’ ঘটে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, সে সম্ভাবনাও নেই। সে ক্ষেত্রে পরিবর্তিত এই ‘নতুন স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির সঙ্গেই আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে। পুরো পৃথিবী এখন সেই পথে এগোচ্ছে। বিভিন্ন দেশ বিধিনিষেধ তুলে দিচ্ছে। আমাদের এখানেও বাণিজ্য মেলা চলছে, সিনেমা হল, রাস্তাঘাট, শপিং মল—সবকিছু খোলা। এমন তো নয় যে কেবল বইমেলাই সংক্রমণের একমাত্র উৎস!

আমাদের দেশে বইয়ের বাজার মূলত মেলাকেন্দ্রিক। সবাই সারা বছর টিকে থাকার জন্য এই এক মাসের ওপরই নির্ভর করে। এসব বিবেচনায় সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সতর্কতা নিশ্চিত করে বইমেলা যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে আমার ধারণা ছিল। গত বছর দুয়েকের করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় সেটিই কিন্তু ছিল স্বাভাবিক। তা ছাড়া ফেব্রুয়ারির বইমেলা অন্য সময়ে যে সেই আবেদন তৈরিতে সক্ষম নয়, তা-ও প্রমাণিত। এর মধ্যে গত মেলাটি সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষকে তাঁদের রুটিরুজির প্রশ্নেও ভয়ানক এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

এখন মেলা ১৫ দিন পিছিয়ে আমাদের আসলে কী প্রাপ্তি ঘটল, তা আমার বোধগম্য নয়। যে নির্দেশনা বা স্বাস্থ্যসতর্কতা অবলম্বন করে ১৫ দিন পর মেলা হওয়ার কথা হচ্ছে, ঠিক একই পদ্ধতিতে যথাসময়ে বইমেলা শুরু হলে কী ক্ষতি হতো, আর ১৫ দিন পর ঠিক কোন জাদুবলে করোনা পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টে যাবে—এসব কথার পরেও বলব, দেরি হলেও ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক।