ক্রিকেট নিয়ে ১০ বই
>চার বছর অপেক্ষা শেষে গতকাল শুরু হয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আবার সামনেই আসছে খুশির ঈদ উৎসব। ঈদের ছুটিতে ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশের মানুষ যেমন অপেক্ষা করবে টিভির সামনে বসে চার-ছক্কার হইহই দেখার জন্য, তেমনি ছুটির অবসরে চাইলে যে কেউ পড়তে পারেন ক্রিকেট–সংক্রান্ত বইও। খেলার এই মৌসুমে বিভিন্ন সূত্র ঘেঁটে ক্রিকেটবিষয়ক ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের কথা তুলে ধরেছেন মুহিত হাসান
ক্রিকেট কান্ট্রি: দ্য আনটোল্ড হিস্ট্রি অব দ্য ফার্স্ট অল ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিম
প্রশান্ত কিদাম্বি
প্রকাশক: পেঙ্গুইন ভাইকিং
১৯১১ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রান্ত থেকে ১৬ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে গঠিত হয় একটি সর্বভারতীয় দল। নানা শ্রেণি–পেশার খেলোয়াড়ের সমাবেশ ঘটেছিল সেখানে। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের উত্তুঙ্গ সময়ের সূচনাপর্বে ওই সফরের গুরুত্ব কিছু কম ছিল না। ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক প্রশান্ত কিদাম্বির কলমে উঠে এসেছে সেই অজানা অধ্যায়।
কার্ডাস অন ক্রিকেট’
নেভিল কার্ডাস
প্রকাশক: স্যুভেনির প্রেস
আধুনিক ক্রিকেট সাহিত্যের জনক বলা হয় ইংরেজ লেখক নেভিল কার্ডাসকে। নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত ‘স্যার’ কার্ডাসের ক্রিকেটবিষয়ক অসামান্য সব রচনা থেকে সবচেয়ে সেরাগুলো বেছে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বই। ক্রিকেটের আদি পর্বের নানা সুলুকসন্ধান যাঁরা পেতে চান এবং এর চিরায়ত ধারাটিকে আবিষ্কারে ইচ্ছুক, এমন যে কারও জন্য অবশ্যপাঠ্য বইটি।
আ কর্নার অব আ ফরেন ফিল্ড
রামচন্দ্র গুহ
প্রকাশক: পেঙ্গুইন
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ একই সঙ্গে একজন দুঁদে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞও বটে। তাঁর এই বিশালাকৃতির বইয়ে ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে আসা এক নিতান্তই অচেনা খেলা ক্রিকেট নীরবে উপমহাদেশের ধমনিতে মিশে গেল চিরদিনের জন্য কেমন করে, সেই ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে অনুপুঙ্খরূপে। আবার এই উপমহাদেশে বারবার ক্রিকেটের সঙ্গে কীভাবে মিশেছে রাজনীতির নিদারুণ জটিলতা, সেই আখ্যানও এ গ্রন্থে মিলবে।
দ্য আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি
মাইক ব্রিয়ারলি
প্রকাশক: প্যান বুকস
ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের একজন মাইক ব্রিয়ারলির কলমে উঠে এসেছে ক্রিকেট মাঠে নেতৃত্ব দিতে গেলে কোন ধরনের কৌশল ও নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তার অনুপুঙ্খ বিবরণ। ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে খেলাটা যে কৌশলগত ও মানসিক দিক থেকেও যে কতখানি জটিল, তা–ও পাঠক অনুভব করবেন বইটি পড়তে গিয়ে। এ বই যেমন ক্রিকেটকে বোঝার জন্য জরুরি, তেমনি জীবনসংগ্রামে অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্যও দরকারি।
অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ক্রিকেট
সিমন হিউস
প্রকাশক: ব্ল্যাক সোয়ান
ইংল্যান্ডের সাংবাদিক সিমন হিউসের লেখা এই বইয়ের বৈশিষ্ট্য হলো, ক্রিকেটের ইতিহাস এখানে বর্ণিত হয়েছে গল্পের ভঙ্গিতে। একান্তই আড্ডার মেজাজে ক্রিকেটের সামাজিক ইতিহাসের পূর্বাপর তুলে ধরতে চেয়েছেন হিউস, যিনি কিনা ইংল্যান্ডের কয়েকটা ঘরোয়া ক্লাবেও এককালে ক্রিকেট খেলতেন। এ বই থেকে বাদ পড়েনি ক্রিকেটকে ঘিরে নানা রঙ্গরস, উদ্ভট ঘটনা ও বিতর্কিত প্রসঙ্গও।
বিয়ন্ড আ বাউন্ডারি
সি এল আর জেমস
প্রকাশক: ইয়েলো জার্সি প্রেস
‘যারা শুধু ক্রিকেটকেই জানে, তারা ক্রিকেটের কতটুকুই আর জানে’—প্রবাদপ্রতিম অমোঘ বাক্যটি ত্রিনিদাদের ঐতিহাসিক-সমাজতাত্ত্বিক সি এল আর জেমসের ১৯৬৩ সালে প্রথম প্রকাশ পাওয়া এই বইয়েরই। খেলার মধ্যে অন্তর্নিহিত শিল্পের বিশ্লেষণে এখানে যেমন মিশেছে ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত, তেমনি ব্যক্তিগত স্মৃতিও ঢুকে পড়েছে অনায়াসে। জেমসের অনবদ্য কলমে এখানে উপস্থাপিত হয়েছে খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত কারিকুরির ‘টেকনিক্যাল’ বিশ্লেষণও।
এগারো: বাংলাদেশের ১১ ক্রিকেটারের গল্প
উৎপল শুভ্র
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
বাংলাদেশের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক যুগের গোড়া থেকেই ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রের নানা পর্যায়ের উত্থান-পতনের এক ক্লান্তিহীন পর্যবেক্ষক। এখানে তিনি বেছে নিয়েছেন তাঁর চোখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা বাংলাদেশের হয়ে খেলা ১১ কীর্তিমান ক্রিকেটারকে, বিশ্লেষণ করেছেন তাঁদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য। সেকালের মিনহাজুল আবেদিন থেকে একালের মুশফিকুর রহিম পর্যন্ত বিস্তার এই গ্রন্থের। আছে ১১ ক্রিকেটারের বিভিন্ন সময়ের ছবিও।
ক্রিকেট: দ্য গেম অব লাইফ’
শিল্ড ব্যারি
প্রকাশক: হোডার অ্যান্ড স্টাউটন
বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট সাময়িকী উইজডেন-এর সাবেক সম্পাদক শিল্ড ব্যারি তাঁর চল্লিশ বছরের ক্রিকেট–সাংবাদিকতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে তুলে এনেছেন এই খেলার মধ্যেকার আনন্দ-বেদনার কাব্য, মনস্তত্ত্ব এবং জনতার মনে এর ইতিবাচক প্রভাবের কথকতা। গ্রন্থের পাঠান্তে পাঠকেরা পুনর্বার টের পাবেন, কেন তাঁরা ক্রিকেটকে এত ভালোবাসেন। ক্রিকেটের বৈচিত্র্যময় ভূগোলকে বুঝতে ও নতুন করে খেলাটি নিয়ে ভাবানোর জন্য এই বইয়ের জুড়ি নেই।
নো বল: দ্য মার্কি ওয়ার্ল্ড অব ম্যাচ ফিক্সিং
চন্দ্রমোহন পুপুল্লা
প্রকাশক: প্যান ম্যাকমিলান
অনুসন্ধানী সাংবাদিক চন্দ্রমোহন পুপুল্লার এই বই ক্রিকেটের গৌরবগাথা নয়, বরং এর মধ্যেকার অন্ধকার দিকটিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া কী করে ক্রিকেটকে কলুষিত করল, দুর্নীতি কীভাবে হয়ে দাঁড়াল এর অনিবার্য অপ-অনুষঙ্গ, আর এই সব কুকর্মের নেপথ্যে কী করে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র জড়িয়ে রয়েছে—সবকিছুর কৌতূহলোদ্দীপক বর্ণনা রয়েছে বইটিতে।
বাংলাদেশের অধিনায়ক
রানা আব্বাস
প্রকাশক: সমগ্র প্রকাশন
ক্রিকেট ‘ক্যাপ্টেনস গেম’। আর কোনো খেলায় অধিনায়কের এত বিশাল ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কেরা—যথাক্রমে শামিম কবির থেকে আজকের মাশরাফি, সাকিব কিংবা মাহমুদউল্লাহ—ক্রিকেট মাঠে গত চার দশকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০ জন। আবার অনেকের অধিনায়কত্বকে রূপকথার গল্প হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কদের সেই জানা-অজানা গল্পকে দুই মলাটে বাঁধা হয়েছে এ বইয়ে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, গুডরিডস