কথা না বলেও অনেক কথা কথা বলে গেলেন যিনি
আজ কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী চার্লি চ্যাপলিনের জন্মদিন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
চার্লি চ্যাপলিন। নামটি উচ্চারণমাত্রই অবচেতন মনে আমাদের মনের ভেতর ভেসে ওঠে এক মানুষের প্রতিচ্ছবি, যাঁর পরনে কোট, ঢিলেঢালা প্যান্ট, মাথায় ক্যাপ, ছোট গোঁফ, হাতে ছড়ি আর পায়ে সামঞ্জস্যহীন জুতা। তিনি শহরের নানা পথ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কথা বলছেন না, অথচ তাঁর কার্যক্রমে হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছে দর্শকের ভেতর। এই হাসির মধ্যেই আচমকা ভিজে যাচ্ছে চোখ। হাসাতে হাসাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি করেছেন বিপ্লব।
১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মূকাভিনেতা দক্ষিণ লন্ডনের ওয়ালওর্থের ইস্ট স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। পঁচাত্তর বছরের কর্মজীবনে খ্যাতি ও বিতর্ক দুটোই সমানতালে চলেছে তাঁর সঙ্গে। প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকায় মাত্র সাত বছর বয়সেই উপার্জনের পথ খুঁজতে হয় তাঁকে এবং নয় বছর বয়সে ছোটদের যাত্রাদল ‘দ্য এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’–এ যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় অভিনয়জীবন। ১৯১৪ সালে ‘মেকিং আ লিভিং’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করলেও ‘দ্য ট্র্যাম্প’ তাঁকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের কাছে। এই সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিনের বেশভূষা তাঁকে এক হাস্যকর চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। আবার রাজকীয় ব্যক্তিত্বও প্রদর্শন করতে চায় একই সঙ্গে। পদে পদে তাঁকে হতে হয় আরও অপদস্ত।
চ্যাপলিনের পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। তাঁর চলচ্চিত্র হাস্যরসপ্রধান হলেও সেই সব চলচ্চিত্রে মিশে থাকত সূক্ষ্ম রাজনীতি। থাকত নিম্নবিত্তের জীবন। বেকারত্বের ওপর শিল্পায়নের প্রভাব উঠে এসেছে তাঁর চলচ্চিত্রে। পুঁজিপতিদের তিনি তুলনা করেছেন ভেড়ার পালের সঙ্গে। ‘সিটি লাইটস’–এ দেখা যায়, বিপন্ন মানুষের দুঃখের কথা, যা উন্মোচিত হয়েছে তাঁর হাস্যরসের ভেতর দিয়ে।
প্রখর দারিদ্র্যের ভেতর কেটেছে তাঁর শৈশব। তিনি বৃষ্টিতে কাঁদতেন, যেন কেউ তা না দেখে। নিজের দুঃখগুলো এমনভাবে লুকিয়ে হাসতে হাসতে আর হাসাতে হাসাতে কাটিয়ে দিলেন একটা জীবন। বেঁচে থাকলে আজ এই বিস্ময়কর প্রতিভার বয়স হতো ১৩৫ বছর।