আমার আমি
চারুকলার চার
গান, অভিনয়, চলচ্চিত্রের আঙিনায় ঘুরেফিরে আমরা তাঁদের দেখি। এই চারজনের মধ্যে আরও একটা মিল কিন্তু আছে। চারজনই চারুকলায় পড়েছেন। আমাদের অনুরোধে তাঁরা এঁকেছেন নিজের ছবি, বলেছেন নিজের কথা।
কোনো জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই
চঞ্চল চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী
ছবি আঁকার ঝোঁক যেভাবে মাথায় চেপেছিল
ছোটবেলা থেকে পছন্দ করতাম। পাঠ্যবইয়ের আঁকাগুলো ভালো লাগত। গ্রামের বিয়েবাড়িতে হয়তো লেখা-আঁকা-আলপনা দরকার। সেসবের দায়িত্ব নিয়ে নিতাম।
প্রিয় চিত্রশিল্পী
জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, পাবলো পিকাসো, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, ক্লদ মনে। আমার শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকে আছেন। মোহাম্মদ কিবরিয়া স্যার, রনবী (রফিকুন নবী) স্যার। আবদুস শাকুর শাহ। শেখ আফজাল। নতুন–পুরোনো মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন।
ছাত্রজীবনের যে সময়টায় ফিরে যেতে চাই
ছাত্রজীবনে ফিরে যেতে চাই না। কোনো জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। ফিরে যেতে হলে অনেক কিছু ছেড়ে যেতে হবে।
যদি এক বছরের ছুটি পেতাম...
আমার সন্তান শুদ্ধর সঙ্গে থাকতাম। পুরো সময়টা ওকেই দিতে চাই।
সর্বশেষ যে চলচ্চিত্র মনে নাড়া দিয়েছিল...
আমার অভিনীত চলচ্চিত্রের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব—হাওয়া। সচরাচর আমার অভিনয় দেখে আমি খুশি হই না। কিন্তু হাওয়া দেখার পর মনে হয়েছে, আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্যটা দিতে পেরেছি। আর দেশের বাইরের ছবি—স্যাম বাহাদুর। বলিউডের সিনেমা। আমি তো আসলে সিনেমা দেখি না, অভিনয় দেখি। ভিকি কৌশল দারুণ অভিনয় করেছেন।
যাঁকে গুরু বলে মানি
মামুনুর রশীদ
নিজের কথায় নিজে চলো
অনিমেষ আইচ, চলচ্চিত্র নির্মাতা
ছবি আঁকার ঝোঁক যেভাবে মাথায় চেপেছিল
জানি না।
প্রিয় চিত্রশিল্পী
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ, এম সি এশার, এস এম সুলতান
ছাত্রজীবনের যে সময়টায় ফিরে যেতে চাই
দ্বিতীয় বর্ষ। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উত্তাল দিনগুলোতে।
যদি এক বছরের ছুটি পেতাম
ছবি আঁকা শুরু করতাম। একটা নতুন সিনেমার গল্প লিখতাম। (আমি তো ছুটিতেই আছি, তেমন কোনো কাজ করি না)
সর্বশেষ যে চলচ্চিত্র মনে নাড়া দিয়েছিল
পুওর থিংস, মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন
যাঁকে গুরু বলে মানি
অনেককেই। হামিদুজ্জামান খান, হুমায়ূন আহমেদ, শহীদুল জহির, আন্দ্রেই তারকোভ্স্কি।
একটা ঝাড়ু নিয়ে পুরো শহর পরিষ্কার করতাম
শাহনেওয়াজ কাকলী, চলচ্চিত্র নির্মাতা
ছবি আঁকার ঝোঁক যেভাবে মাথায় চেপেছিল
শিশুকাল থেকেই চক-পেনসিলে দেয়াল, মাটি, খাতাতে ফুল, লতা, পাতা, মানুষ, দৃশ্য, নকশা, যা আঁকতে ইচ্ছা করত, তা-ই আঁকলে হয়ে যেত। বড়রা বলত, ওর ছবি আঁকার হাতটা আছে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণার জন্ম হয়তো।
প্রিয় চিত্রশিল্পী
গুস্তাভ ক্লিমট, ভ্যানগঘসহ অনেক ওল্ডমাস্টার। দেশীয় শিল্পী জয়নুল আবেদিন, হাশেম খান, আব্দুস সাত্তার, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইউনুস। ভারতীয় শিল্পী লালু প্রসাদ সাউ, যামিনী রায় প্রমুখ।
ছাত্রজীবনের যে সময়টায় ফিরে যেতে চাই
চারুকলার ক্লাসরুমে, মোল্লার দোকানে চায়ের আড্ডায়। হলজীবনের বান্ধবীদের সঙ্গে গড়াগড়ি করে হাসতে চাই।
যদি এক বছরের ছুটি পেতাম
খাদ্য, বাসস্থান, অর্থ নিশ্চিত থাকলে একটা ঝাড়ু নিয়ে পুরো শহর পরিষ্কার করতাম। কারণ, পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে বড় শিল্প।
সর্বশেষ যে চলচ্চিত্র মনে নাড়া দিয়েছিল
এখনো হাচি মুভিটা ভুলতে পারি না। যেকোনো অ্যানিমেল মুভি আমাকে নাড়া দেয়।
যাঁকে গুরু বলে মানি
চিত্রকলায় হাশেম খান, চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান।
অঙ্ক খাতা, বাংলা খাতার পাতায় পাতায়
রাহুল আনন্দ, সংগীতশিল্পী
ছবি আঁকার ঝোঁক যেভাবে মাথায় চেপেছিল
বইয়ের অলংকরণ দেখে দেখে...বইয়ের ‘কোনাকাঞ্চিতে’ টুকটাক আঁকিবুঁকি।
সেটাই পরে অঙ্ক খাতা, বাংলা খাতার পাতায় পাতায়।
প্রিয় চিত্রশিল্পী
আমার প্রিয় ‘লাল মিয়া’ শিল্পী এস এম সুলতান। আর ভ্যান গঘ।
ছাত্রজীবনের যে সময়টায় ফিরে যেতে চাই
চারুকলার দিনগুলোতে। নানা কারণে সময়টা ছিল আমাদের জন্য উদ্ভ্রান্ত, অনিশ্চিত আর নয়া যৌবনে দিগ্বিদিক উল্লাস। আমরা তখন পথে-বিপথে হাঁটতাম। স্বপ্নে হলেও আবার সে সময়টায় ফিরে যেতে চাই।
যদি এক বছরের ছুটি পেতাম
সোজা গ্রামে চলে যেতাম। কৃষকের কাছ থেকে হাতে-কলমে কৃষিকাজ শিখতাম আর বই পড়তাম।
সর্বশেষ যে চলচ্চিত্র মনে নাড়া দিয়েছিল
গল্প হলেও সত্যি
যাঁকে গুরু বলে মানি
গুরুজি বারী সিদ্দিকী। যিনি সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে নীরবে-নিভৃতে আমার ভেতরের ‘আমি’টাকেও পরিচয় করিয়েছিলেন। যাঁর দেখানো পথেই আমি পথ হাঁটি।