হুমায়ূন আহমেদের লেখা কি ‘পুরুষতান্ত্রিক’?
হুমায়ূন আহমেদের লেখা পুরুষতান্ত্রিক, তাঁর লেখায় হরেদরে রয়েছে নারীবিদ্বেষী উপাদান—এমন অভিযোগ আজকাল কেউ কেউ করেন। কাউকে কাউকে আবার এমনও প্রশ্ন করতে দেখা যায়, হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ সাহিত্যে, বিশেষত ‘পপুলার’ সাহিত্যে কেন নারীরা রূপ, প্রেম ও আবেগের সীমানা অতিক্রম করতে পারেনি? তিনি অনেক বেশি লিখেছেন রূপাকে নিয়ে। আর এই রূপার বর্ণনায় তীব্র আবেগ, প্রখর সৌন্দর্যই মুখ্য। সুন্দরী, আবেগময়ী, মায়াময়ী নারী চরিত্রগুলো নিয়ে কেন বেশি লিখলেন হুমায়ূন আহমেদ? আজ ১৩ নভেম্বর নন্দিত এই কথাশিল্পীর জন্মদিনে এই প্রশ্নগুলোর সুলুকসন্ধান।
‘লীলার সবই সুন্দর। চেহারা সুন্দর, চোখ সুন্দর, মাথার কোঁকড়ানো চুল সুন্দর।’ (‘দীঘির জলে কার ছায়া গো’)
‘গাড়ির চালকের সিটে যে বসে আছে, তাকে দেখাচ্ছে পদ্মিনী গোত্রের কোনো তরুণীর মতো। কুইন অব সেবা, হার রয়েল হাইনেস বিলকিস হয়তো আঠারো-উনিশ বছর বয়সে এই মেয়ের মতোই ছিল।’ (‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’)
‘নিশাত একটা কাঠের বেঞ্চিতে লাল চাদর গায়ে দিয়ে বসেছিল। রোদ পড়েছে তার মুখে। শীতের বাতাসে তার কপালে ছোট ছোট কিছু চুল নাচছে। সে বসে আছে বিষণ্ন ভঙ্গিতে। তার ফর্সা গালে লাল চাদরের আভা পড়েছে। দিলু ফিসফিস করে বলল, আপা কত সুন্দর দেখেছেন?’ (‘আমার আছে জল’)
হুমায়ূন আহমেদের লেখায় নারী চরিত্রেরা এমনই—তীব্র সুন্দর, আটপৌরে সুন্দর, স্নিগ্ধ সুন্দর। খানিকটা মায়াবতী, খানিকটা কঠিন, কেউ কেউ অভিমানী, কেউ হয়তো খেয়ালি। তবে এরা নির্দ্বিধায়, অকপটে সুন্দরী। ‘নির্দ্বিধায়, অকপটে’ আবার কেউ সুন্দরী হয় কী করে, সেটাই ভাবছেন তো? হুমায়ূন আহমেদ বেশির ভাগ নারী চরিত্রের বিবরণ দেওয়ার শুরুতে যখন এমন রূপের বর্ণনা দেন, নিতান্তই সাধারণ ভঙ্গিতে বসে থাকা নারীর রূপের তীব্রতা নিয়ে লাইনের পর লাইন কাব্য করেন, তাকে ‘হেলেন অব ট্রয়’ বা ‘কুইন অব সেবা’র সঙ্গে তুলনা করেন, তখন হুমায়ূন ইউনিভার্সে রূপ হয়ে যায় বড্ড বেশি অকপট ও প্রকট। বারবার নারীর বর্ণনায় রূপের আধিক্য চলে আসায় তাই পাঠক-সমালোচক একসময় বিরক্ত হন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেই ফেলেন, নারীকে হুমায়ূন আহমেদ মেপেছেন রূপের নিরিখে। নারীর যেন রূপই সব!
লেখক অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে ‘এই আমি’ বইতে বহু আগেই লিখেছিলেন, ‘আমার গল্পের নায়িকারা সবাই অসম্ভব রূপবতী। ও রকম কেন? রূপ দেওয়ার ক্ষমতা যখন আমার হাতে, তখন কেন জানি কার্পণ্য করতে ইচ্ছা করে না।’ তবু প্রশ্ন আসে, লেখক হুমায়ূন আহমেদ এই ‘রূপ’ বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন? ফরসা, ছিপছিপে গড়নের, দিঘল কেশের নারীর যে ‘বিউটি স্ট্যান্ডার্ড’ বাংলা সাহিত্য ও সমাজে আসন গেড়ে বসেছে বা বসেছিল, সেই স্ট্যান্ডার্ডকেই কি তার সৃষ্ট রূপসী নায়িকারা আরও একটু মজবুত করে? নাকি হুমায়ূন আহমেদের লেখায় ‘রূপ’ ও ‘রূপসী’র সংজ্ঞা খানিকটা আলাদা?
উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলোর কাছেই। না, গায়ের রঙের প্রতি লেখক হুমায়ূন আহমেদের কোনো অহেতুক পক্ষপাতিত্ব সেখানে চোখে পড়ে না। বরং নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনায় তিনি যেন ‘মায়া’কে বড্ড বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে এ কথাও সত্যি যে নারীর সৌন্দর্যের অপ্রচলিত বা ভিন্ন কোনো সংজ্ঞাও হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আমাদের শাদা বাড়ি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’র মতো কোনো কোনো লেখায় শ্যামবর্ণের ভীষণ মায়াময় কোনো কোনো নারী চরিত্রের উপস্থিতি আমরা পাই বটে, তবে সেখানেও খুব স্পষ্ট স্বরে তিনি নারীর সৌন্দর্যের অপ্রচলিত কোনো সংজ্ঞায়ন করেননি।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রানুর গল্পেও তার রূপের বর্ণনা খানিকটা হলেও তার অপ্রকৃতস্থতাকে রোমান্টিসাইজ করে ফেলে। নারীর মনের গভীর বোধকে বোঝাতে গিয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদ যেটুকু ‘প্রিয়তমেষু’, ‘নন্দিত নরকে’ বা ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এ লিখছেন, তা আদতে কতটা গভীর, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়।
তবে কি বলা যায়, নারী দেখতে কেমন এবং কতটা মায়াবতী—হুমায়ূন আহমেদের লেখায় সেটুকুই কেবল মুখ্য? স্বাধীনতা-পরবর্তী মধ্যবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন রকম নারী চরিত্রই আমরা হুমায়ূন আহমেদের লেখায় পেয়েছি। সেসব চরিত্রের মূলে রূপ ও আবেগের বাইরেও অনেক কিছু আছে। মুনা চাকরি করে, রাবেয়া সংসার সামলায়, নীতু কিংবা মিলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, দিলু বা মারিয়া চঞ্চল, অভিমানী কিশোরী। ‘কোথাও কেউ নেই’র মুনার ক্ষেত্রে প্রেম, সংসার, পরিবারের বাইরেও আমরা তার অফিসের যে চিত্র দেখতে পাই, তা তৎকালীন সমাজে নারীরা কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হন, সেসব খানিকটা হলেও তুলে ধরে। ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এর রাবেয়া অবিবাহিত বড় বোন হয়ে সংসারের হাল ধরায় কী কী অসুবিধায় পড়ছে, সে কথাও তাঁর লেখায় এসেছে। তবে সেই আসাটুকু যেন নারীর প্রেম, অভিমান আর আবেগের চেয়ে অনেক কম গুরুত্ব দিয়ে লেখা। নারীকে যেন হুমায়ূন আহমেদ রূপ, প্রেম ও আবেগের বাইরে গিয়ে তেমন একটা দেখতে চাননি। তাই হয়তো আজকের মিলেনিয়াল কোনো তরুণী ফেসবুকে লেখেন, ‘রূপা শুধু হিমুর সুন্দরী প্রেমিকা আর বড়লোক বাবার খেয়ালি কন্যা। তার আর কোনো আইডেনটিটি নেই।’
কথা খুব ভুল নয়। সত্যিই রূপার জীবনের আর কোনো দিক আমরা কেন দেখি না, সে প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে লেখক এটাও তো বলতে পারেন, হিমুকে নিয়ে লেখা সব উপন্যাসে মুখ্য চরিত্র হিমু। সেখানে মাজেদা খালা ও বাদল থেকে শুরু করে জিতু মিয়া ও রূপা ‘হিমুকে’ নিয়ে কী ভাবছে, কী করছে সেটুকুই তো থাকবে! এ কথাও বলা যায় যে ‘প্রিয়তমেষু’ উপন্যাসে তো নারীর আবেগ বা রূপ নয়, বরং গৃহবধূ নারীর লড়াইয়ের কথা, নির্যাতিত হওয়ার কথাই উঠে এল। ‘নন্দিত নরকে’ তো রাবেয়ার প্রেম বা রূপের কথা বলে না, বরং তার সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে সমাজ তাকে কীভাবে দংশন করে সে কথাই বলে। ‘দেবী’ বা ‘আমিই মিসির আলী’ও নারীর রূপের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে আমাদের নিয়ে যায় নারীর রহস্যময় মনের গভীরে।
এরপরও কথার পিঠে কথা আসে। কেননা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রানুর গল্পেও তার রূপের বর্ণনা খানিকটা হলেও তার অপ্রকৃতিস্থতাকে রোমান্টিসাইজ করে ফেলে। নারীর মনের গভীর বোধকে বোঝাতে গিয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদ যেটুকু ‘প্রিয়তমেষু’, ‘নন্দিত নরকে’ বা ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এ লিখছেন, তা আদতে কতটা গভীর, সে নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়।
তবে এত প্রশ্নের ভিড়ে সবচেয়ে মুখ্য প্রশ্নটি হলো, হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ সাহিত্যে, বিশেষত তাঁর ‘পপুলার’ সাহিত্যে কেন নারীরা রূপ, প্রেম ও আবেগের সীমানা অতিক্রম করতে পারেনি? একটা ‘প্রিয়তমেষু’, একটা ‘নন্দিত নরকে’ তিনি লিখেছেন, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি লিখেছেন রূপাকে নিয়ে। আর এই রূপার বর্ণনায় তীব্র আবেগ, প্রখর সৌন্দর্যই মুখ্য। সুন্দরী, আবেগময়ী, মায়াময়ী নারী চরিত্রগুলো নিয়ে কেন তিনি বেশি লিখলেন?
কেন তিনি বেশি লিখেছেন, সে উত্তর দেওয়াটা আমাদের জন্য কঠিন ও অসম্ভব। তবু খানিকটা অনুমানে, খানিকটা সাহিত্য-সংস্কৃতির তত্ত্বে ফেলে বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ অসম্ভব স্মার্ট একজন লেখক ছিলেন। ‘মার্কেট ডিমান্ড’ বলি আর পাঠকপ্রিয়তা বলি, সেটা তিনি খুব ভালোই বুঝেছিলেন। আমি-আপনি যেমন জানি, তেমনি তিনিও জেনেছিলেন ‘প্রিয়তমেষু’ বা ‘ছায়াবীথি’র চেয়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ হিমু সিরিজের উপন্যাসগুলো বেশি গ্রহণ করেছে। তিনি এটাও বুঝেছিলেন, ‘কোথাও কেউ নেই’ শেষতক আর মুনার গল্প থাকে না, আমরা পাঠকেরা সব মনোযোগ নিবিষ্ট করেছি বাকের ভাইয়ের ট্র্যাজেডিতে। তাই বোধ হয় তাঁর লেখায় একসময় আর রাবেয়া, নিশাত বা মুনারা আসেননি; বরং বারবার ঘুরেফিরে এসেছে রূপা, লীনা, মারিয়ার মতো চরিত্ররা—যারা তীব্র রূপবতী ও ভীষণ মায়াবতী। তারা প্রাণপণ প্রেমে পড়েন এবং সেই প্রেমই তাদের সব অস্তিত্বকে গ্রাস করে। ‘খুব সুন্দরী, বড় মায়াবতী কেউ পুরুষের প্রেমে পড়ছেন’—পুরুষের ফ্যান্টাসির প্রতি সমর্থন জানানো এমন নারী চরিত্রগুলোকেই নারীবাদী তত্ত্বে—বিশেষত লরা মালভি বলছেন ‘মেল গেজ’ থেকে সৃষ্ট নারী। কেননা এমন লেখায় বা শিল্পে নারীর গভীরতা, বহুমাত্রিকতা বাদ দিয়ে রূপ ও প্রেমময়তাই মুখ্য হয়। আর তখনই বলা হয় অমন শিল্পে ‘মেল গেজ’ বা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল। হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ সাহিত্যও নারীকে সৌন্দর্য আর আবেগের ছকের বাইরে ভাবতে পারেনি। তাই আকৈশোর হুমায়ূনের সাহিত্যে ডুবে থেকে, প্রিয় লেখকদের তালিকায় তাঁকে বেশ ওপরের দিকে রেখেও আমার মস্তিষ্কের ‘একাডেমিক’ অংশটি বলতে চায়, হুমায়ূন আহমেদের লেখায় ‘মেল গেজ’ প্রকট। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তিনি বারবার এবং অধিকাংশ সময় নারীর অস্তিত্বকে আবেগ ও বাহ্যিকরূপেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
কিন্তু তাই বলে কি আপনি বলতে পারেন, ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ নারীবিদ্বেষী ছিলেন? প্রথমত, শিল্পের মাধ্যমে কারও ব্যক্তিসত্তাকে মাপার বিষয়টিই খুব একটা যৌক্তিক বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, একজন লেখক বা শিল্পীর পক্ষে তাঁর সময়কে অতিক্রম করা কঠিন। যখন কোনো শিল্পী তা পারেন, সময়ের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে সমাজের কোনো একটা অপ্রগতিশীল বিষয়ের দিকে আঙুল তোলেন, তখন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সেভাবেই তো একজন শিল্পী কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। কিন্তু শুধু তাঁর সময়কে, তাঁর সময়ের মানুষের ধ্যানধারণাকে যিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বলে কোনো লেখক বা শিল্পী হিসেবে ‘অপরাধী’ হয়ে যান না। ভেবে দেখুন, গত শতকের আশির দশকে হুমায়ূন আহমেদ যখন লিখতে শুরু করলেন, তখন সমাজে নারীর অবস্থান কী ছিল। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কি অনর্থক নারীবিদ্বেষ ছড়িয়েছেন? হুমায়ূন-সাহিত্যে তো আমি তেমন কিছু দেখছি না।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ বাঙালি পাঠকের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছেন, তাতে সমাজ বদলে দেওয়ার অনেকখানি ক্ষমতাই তাঁদের লেখার ছিল। তবে সমাজকে তাঁরা বদলে দিতে চান কি না, সেটুকু তাঁদের নিতান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সমাজ বদলাতে চাননি বলে, লেখক নিজের সময়ে, নিজের প্রথায় বাঁধা পড়েছিলেন বলে, আজ অন্তর্জালের যুগে দাঁড়িয়ে আমি-আপনি তাঁদের ‘দোষী’ সাব্যস্ত করতে পারি না। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারি, সমাজের দায় তিনি নিচ্ছেন না বলে সমালোচনা করতে পারি নিশ্চয়ই। তবে নানা রকম নেতিবাচক ট্যাগ দিয়ে তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে পারি কি?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদাহরণই না হয় দিই। তাঁর ‘সমাপ্তি’ পড়ে আপনি বলতেই পারেন, তিনি বাল্যবিবাহ ও কিশোরী বধূকে রোমান্টিসাইজ করলেন। ‘হৈমন্তী’ পড়ে মনে হয়, রবিঠাকুর এবার কিশোরী বধূর মনটাকে অন্তত দেখতে পেলেন। আবার ‘অপরিচিতা’য় আপনি এমন এক রবীন্দ্রনাথকে পাবেন, যিনি স্পষ্ট প্রথাবিরোধিতা করেই বলছেন, ১২ বছর বয়সে মেয়েকে যৌতুক দিয়ে তাড়াহুড়োর বিয়ে না দিলে কিচ্ছুটি যায় আসে না! এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আপনি এই ‘ক্যানসেল কালচার’-এর নিরিখে কীভাবে মাপবেন? স্রেফ সমাপ্তি পড়ে তাকে ‘মিসোজিনিস্ট’ বলবেন?
পাঠক-সমালোচক-গবেষক আলোচনা তো করবেই, করাই উচিত। আমরা আজকাল কার লেখায় ‘মেল গেজ’ বেশি, কোন শিল্পী নারীর মানবিকতাকেও যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলছেন, কোথায় কৃষ্ণাঙ্গদের বা এশীয়দের অধিকার আদায়ের কথা বলা হচ্ছে—এমন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা চাইছি এখনো যাঁদের গল্প বলা হয়নি, যাঁদের সামনে তুলে ধরা হয়নি, তাঁরাও এবার সামনে আসুক, কথা বলুক। তবে এই ‘সামনে আনা’র আলোচনায় কাউকে আমরা নিতান্তই পেছনে ফেলে দিতে চাই কি না, সেটিও একবার ভেবে দেখা যেতে পারে। আপনি বলতেই পারেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীকে দেখে এবং অবশ্যই সেটি যথার্থ নয়। তবে শুধু এটুকুর ভিত্তিতে ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ ‘নারীবিদ্বেষী’ কি না, সেই আলোচনায় চলে যাওয়াটা সমীচীন হবে কি না, সেটিও ভেবে দেখতে পারেন।