হান কাংয়ের সাহিত্যের অন্দরমহলে

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কথাসাহিত্যিক হান কাং। তাঁকে নিয়ে আয়োজন

ভৌগোলিক দূরত্ব খুব বেশি না হলেও সাংস্কৃতিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমরা বেশ দূরেই ছিলাম বহুদিন। মাত্র কয়েক দশক হয় কোরিয়ার চলচ্চিত্র আমাদের নজর কেড়েছে। এরপর এই প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে কে–পপ আর কে–ড্রামা। সাম্প্রতিক সময়ে রামেন আর কিমচির মতো কোরিয়ান খাবারের প্রতিও আগ্রহ বেড়েছে বাংলাদেশের মানুষের। বিশ্বায়নের যুগে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন সবার হাতের মুঠোয় থাকায় পৃথিবীর কোনো দেশই আর দূরের নয়। অথচ একই মহাদেশে অবস্থানের পরও কেবল ভাষা অপরিচিত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্য আমাদের অনেকের কাছে এখনো দূরের। অনেক সময় শহরের দেয়ালে ‘কোরিয়ান ভাষা শিখুন’ জাতীয় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে বটে, তবে সাহিত্য পড়ার জন্য কেউ কোরিয়ার ভাষা শেখেন বলে মনে হয় না।

দক্ষিণ কোরিয়ার ঔপন্যাসিক হান কাং ২০২৪ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার পর কথাগুলো মনে এল।

সাহিত্যের নোবেল এবার যখন হান কাংয়ের ঝুলিতে গেল, সাহিত্যামোদীরা বোধ করি খুব বেশি বিস্মিত হননি। তাঁর উপন্যাস দ্য ভেজিটারিয়ান ২০১৬ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার জেতার পর আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনে হান কাং বেশ পরিচিত নামই। বইটি অনেকেই পড়েছেন, আরও আগ্রহীরা একই সঙ্গে পড়েছেন ২০১৭–তে বুকারের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পাওয়া তাঁর আরেকটি উপন্যাস হিউম্যান অ্যাক্টসও। কবিতার মাধ্যমে লেখালেখির সূচনা হলেও হান কাং নোবেল পেয়েছেন কাব্যিক গদ্যভাষার জন্য। সাহিত্যিক পরিবারে জন্ম নেওয়া হান কাং এরই মধ্যে জিতেছেন সম্মানসূচক ফরাসি পুরস্কার লে প্রি মেডিসিস, ই স্যাং সাহিত্য পুরস্কার, কোরিয়ান নভেল অ্যাওয়ার্ড, মালাপার্তে, সান ক্লেমেন্তেসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। কাজেই চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল ঘোষণার আগে অনেকেরই অনুমানের তালিকায় ছিল এই কথাসাহিত্যিকের নাম।

হান কাংয়ের লেখা কেমন? কী তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়? মূল ভাষার সৌন্দর্য বোঝার মুরোদ আমাদের নেই, তাই তাঁর অনুবাদক ডেবরা স্মিথের অনুবাদই ভরসা। দ্য ভেজিটারিয়ান যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা হয়তো বিস্মিত হয়েছেন এটা জেনে যে ভেজিটারিয়ান–এর দ্বিতীয় পর্ব মঙ্গোলিয়ান মার্ক, যেখানে গদ্যভাষার কাব্যিক প্রয়োগ বিদ্যমান, ওই অংশটি আলাদাভাবে পুরস্কার এনে দিয়েছে ৫৩ বছর বয়সী হানকে।

দ্য ভেজিটারিয়ান তিনটি পর্বে বিভক্ত। ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখে অসুস্থ হওয়ার পর মাছ–মাংস খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইয়েয়ং হাই নামের এক বিবাহিত নারী। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে তার স্বামী চেইয়ং দেখতে পায় ফ্রিজ থেকে সব প্রাণিজ আমিষ খাদ্য ফেলে দিচ্ছে সে। নিজে নিরামিষভোজী হয়েই ইয়েয়ং ক্ষান্ত নয়, স্বামীর জন্যও মাছ–মাংস রাঁধতেও সে অস্বীকৃতি জানায়। শান্তভাবে বলে যে দিনের মধ্যে দুই বেলাই যেহেতু চেইয়ং বাইরে খাওয়াদাওয়া করে, তাই এক বেলা নিরামিষ খেলে তার এমন কিছু ক্ষতি হবে না।

হান কাং নোবেল পেয়েছেন কাব্যিক গদ্যভাষার জন্য। তাঁর লেখার জগৎ আসলে কেমন?

উপন্যাসের প্রথম পর্বে ইয়েয়ংয়ের ভেজিটারিয়ান হওয়া নিয়ে অস্বস্তি, যা ক্রমে পারিবারিক সংকট, অতঃপর সংঘাতের রূপ নেয়—সেটুকু ইয়েয়ং হাইয়ের স্বামী চেইয়ংয়ের বয়ানে, সোজাসাপটা ভাষায় লেখা। মাঝেমধ্যে কেবল কিছু অংশ লেখা হয়েছে ইটালিকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেগুলো ইয়েয়ং হাইয়ের স্বপ্নের বিবরণ। তাতে যত না কাব্য, তার চেয়ে বেশি আছে ভয়ানক সব নৃশংসতার চিত্র। রক্তাক্ত, বীভৎস সেই সব দুঃস্বপ্ন ইয়েয়ংকে ভয়ানকভাবে তাড়া করে। স্বপ্ন ভেঙে জেগে ওঠার পর প্রাণী হত্যা আর মাংস ভক্ষণের পুরো প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক নিষ্ঠুর বলে মনে হয় তার কাছে। যদিও প্রতি বেলা মুরগি, গরু, শূকর, অক্টোপাসসহ নানা ধরনের মাছ–মাংস সব সময়ই ছিল তাদের খাদ্যতালিকায়। ইয়েয়ং হাই নিজে খুব ভালো রাঁধুনি। ছোটবেলায় মায়ের কাছে প্রায়ই ওয়েস্টার খাবারের জন্য বায়না করত।

দ্বিতীয় পর্বে ‘মঙ্গোলিয়ান মার্ক’ লেখা হয়েছে সর্বদ্রষ্টা বক্তার (ওমনিশ্যান্ট ন্যারেটর) ভাষায়। এখানে মূল দৃষ্টিভঙ্গি ইয়েয়ং হাইয়ের ভগ্নিপতির। আর তৃতীয় পর্ব ‘ফ্লেইমিং ট্রিজ’–এর বক্তা ইয়েয়ং হাইয়ের বোন ইন হাই। তিনটি অংশের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান দুই বছর করে। মূল চরিত্রের সরাসরি বক্তব্য খুব অল্প পরিমাণ হলেও তার প্রাণী হত্যা নিয়ে পরিবর্তিত মনোভাব অনেকটাই বোঝা যায়। নিজে খাওয়ার জন্য অন্য প্রাণকে ধ্বংস করার ব্যাপারটি সহ্য করতে না পারা ইয়েয়ং একপর্যায়ে স্বামীর ‘শরীরে মাংসের গন্ধ’ পায় বলে তার সঙ্গে যৌন সংসর্গও ত্যাগ করে। স্বামীর বয়ানে জানা যায়, এই প্রত্যাখ্যানের ফলে ইয়েয়ংকে বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার পর্যন্ত হতে হয়।

ইয়েয়ং হাইয়ের নিজের শরীর ও জীবনের ওপর তার অধিকার না থাকার বিষয়টির উল্লেখ করে এ আখ্যানকে তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে দেখেছেন দ্য ইনডিপেনডেন্ট–এর বিশ্লেষক জুলিয়া পাসকাল। দ্য অস্ট্রেলিয়ান বইটিকে অদ্ভুতুড়ে বা ‘আনক্যানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গ্যাজেট ভ্যান আনটওয়েরপেন বলেছে, এটি হারুকি মুরাকামির ভক্তদের জন্য উপযোগী এক বই। আবার দ্য আইরিশ টাইমস একে দেখছে নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতার আখ্যানরূপে। আর দ্য গার্ডিয়ান–এর মতে, এই উপন্যাস নানা পীড়াদায়ক প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে।

দ্য ভেজিটারিয়ান অবলম্বনে একই নামে ২০০৯ সালে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন লিম উ সিয়ং। বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ছবিতে দেখানো হয়, ইয়েয়ং হাই নামের এক নারী ফুল হয়ে যেতে চায়। লেখক নিজে তাঁর প্রিয় কবি ই স্যাংয়ের চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভেবেছিলেন, মানুষের আদতে গাছ হওয়া উচিত। বুকার পুরস্কার পাওয়ার পর কাং বলেছিলেন, তিনি নিজেও ভাবেননি দ্য ভেজিটারিয়ান এত বেশি পাঠকপ্রিয়তা পাবে; বিশেষত ভিন্ন সংস্কৃতির নারী পাঠকদের কাছে প্রশংসিত হওয়ার ব্যাপারে তাঁর কথা ছিল, ভেজিটারিয়ান–এর কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশেষভাবে কোরিয়ান নয়; বরং এটি যেকোনো দেশের নারীরই গল্প হতে পারে। উপন্যাসটিকে কেউ পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি রূপক প্রতিবাদ হিসেবে দেখতে চাইলেও আপত্তি করেননি লেখক।

এক নারীর নিরামিষাশী হওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে পারিবারিক সংকট আর সামাজিক নিষ্ঠুরতার গল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে দ্য ভেজিটারিয়ান। অন্যদিকে হান কাংয়ের আরেক উপন্যাস হিউম্যান অ্যাক্টস লেখা হয়েছে দ্বিতীয় পুরুষের বর্ণনায়। ইতিহাসভিত্তিক এ উপন্যাসের ভাষা আদতে কাব্যিক। ছয়টি অধ্যায় আর শেষে উপসংহার নিয়ে মোট সাত খণ্ডের উপন্যাসটিতে আছে চুন ডু হুয়ান নামের এক সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কিশোরের গল্প। স্কুলপড়ুয়া কিশোর দং হো ১৯৮০ সালের মে মাসে জড়িয়ে পড়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দানা বাধা গণতন্ত্রকামীদের আন্দোলনে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোয় পাল্টে যায় পরিপ্রেক্ষিত। জেয়ং দে নামের আরেক নিহত কিশোরের বয়ানে এগোতে থাকে কাহিনি। পড়তে পড়তে কারও মনে পড়তে পারে ওরহান পামুকের মাই নেম ইজ রেড–এর কথা। এখানে নামহীন লেখকের চরিত্রটি হতে পারেন হান কাং নিজেই, যিনি গোয়াংজু অভ্যুত্থানের কিশোর শহীদ দং হোর কবরে মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্মান জানিয়ে আসেন। তারপর সিউলে ফিরে উপন্যাস লিখতে শুরু করেন আন্দোলনের শহীদদের নিয়ে।

অনেকটাই আত্মজৈবনিক উপন্যাসটি ধারণ করেছে কোরিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতাকে। আবার একই সঙ্গে এটি দেখিয়েছে মানুষের নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার ছবিও। অন্যতম মূল চরিত্র ডং হো মৃতদের সমাহিত করার কাজে অংশ নেয়, তার মা আট বছর পরও চোখে ভুল দেখে এবং তার মনে হয় ডং হো এখনো রাস্তায় আছে। এ সময় ডং হোর মা মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয়, কেন ছেলেকে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যেতে দিল, কেন ছেলের হাত ধরে রাখল না সে। পড়তে পড়তে পাঠক বুঝতে পারেন, শত শত শবদেহ নিশ্চিহ্ন করার, তাদের পরিচয় লুকিয়ে ফেলার নৃশংস চেষ্টা চলছে। উপন্যাসজুড়ে তাঁরা দেখেন মুক্তিকামী জনতাকে পোকামাকড়ের মতো মেরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার বীভৎস সব ছবি।

মানুষের সভ্যতায় ঘটে যাওয়া অমানবিকতার মর্মস্পর্শী বয়ান হান কাংয়ের এ উপন্যাস। দ্য গার্ডিয়ান–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে লেখক জানান, ১৯৮০ সালের গোয়াংজু অভ্যুত্থানের সময় তাঁর বয়স ছিল ৯ বছর। তত দিনে তাঁর পরিবার জন্মস্থান ছেড়ে সিউলে বসবাস করেছে। ফলে ওই অভ্যুত্থানের তেমন কোনো স্মৃতি তাঁর নেই। পরে ১২ বছর বয়সে পারিবারিক বইয়ের আলমারির পেছনে লুকিয়ে রাখা একটি গোপন স্মরণিকা খুঁজে পান হান। সেখানে ছিল বিদেশি আলোকচিত্রীদের তোলা অনেক ছবি। বেয়োনেটের আঘাতে মুখমণ্ডল ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া এক নারীর ছবি দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে কাংয়ের। তিনি বলেন, ‘২০ বছর বয়সে এই ছবি দেখলে আমার ঘৃণা হয়তো মিলিটারি রেজিমের দিকে যেত; কিন্তু সেই বয়সে ছবিটি দেখে মনে হয়েছিল, মানবজাতি প্রাণী হিসেবেই ভয়ংকর এবং আমিও এ প্রজাতিরই একজন।’

উপন্যাসের ভাষা নিয়ে নানা নিরীক্ষা করেছেন হান কাং। দ্য ভেজিটারিয়ান, হিউম্যান অ্যাক্টসসহ সব উপন্যাসেই এর ছাপ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তাঁর অনুবাদক ডেবোরা স্মিথ হিউম্যান অ্যাক্টস–এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘উপন্যাসটির অনেকটা, বিশেষত “দ্য বয়’জ মাদার” অংশটুকু লেখা হয়েছে গোয়াংজুর আঞ্চলিক ভাষায়, ইংরেজিতে অনুবাদ করা যা ছিল বেশ কঠিন। অনুবাদক হিসেবে কিছুটা স্বাধীনতা নিয়ে হলেও এর আঞ্চলিকতাটুকু আমি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’

উপন্যাসে হান কাং এমন এক দুনিয়ার চিত্র তুলে ধরেন, যা দৈনন্দিনতায় ভরা; কিন্তু খানিকটা বীভৎস, অদ্ভুত। পারিবারিক পরিস্থিতি বর্ণনার মধ্য দিয়ে তিনি উপস্থাপন করেন সমাজের সেসব রক্তাক্ত অনুভূতি, সচরাচর যেসব জনসমাজের সামনে আসে না। দ্য ভেজিটারিয়ান–এ বিষয়গুলো যেমন পোক্তভাবে উপস্থিত, তেমনি আছে হিউম্যান অ্যাক্টস–এও। মহান সাহিত্য যা করে, খবরের কাগজে পড়ে ভুলে যাওয়া একেকটি তথ্য বা গল্পের পেছনের বিশাল আখ্যানটিকে মহাকাব্যের মতো বিস্তৃতিতে নিয়ে যায়—হিউম্যান অ্যাক্টসও একই কাজ করেছে। ডং হো নামের কিশোরও হানের ছোটবেলায় পাওয়া সেই স্মরণিকা থেকে উঠে আসা। গোয়াংজুর গণহত্যার সময় নিহত আরও নাম না জানা কিশোর-তরুণেরাও উপন্যাসের চরিত্র হয়ে এসেছে। হান কাংয়ের কলমে বিভিন্ন নামের এসব শহীদ আসলে কাল্পনিক কোনো চরিত্র নয়। গোয়াংজু অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে লেখা হিউম্যান অ্যাক্টস–এর সঙ্গে আমাদের পাঠকেরা সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থান ঘটল, তার মিল পেতে পারেন। 

খুব বেশি না লিখেও দক্ষিণ কোরিয়ার নোবেলজয়ী এই কথাশিল্পী আখ্যান রচনায় অনন্য আর নিজস্ব শৈলী সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছেন। দ্য কনভারসেশন–এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হান কাং যে কথা বলেন, সেটি হয়তো তাঁর লেখালেখির মূল মন্ত্র। কাংয়ের কথা হলো, মূলত তাঁর উপন্যাস মানবজীবনের যন্ত্রণা আর বেদনা নিয়ে লেখা। মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিক বর্বর আচরণ, অসহনীয় নির্মমতা তাঁকে খুবই পীড়া দেয়।

এ কারণেই কি হান কাংয়ের লেখার অন্দরমহলে এত চাপা রক্তের ছাপ দেখা যায়, আর একের পর এক তিনি লিখতে থাকেন রক্তাক্ত মানুষের গল্প?

কোরিয়ান চলচ্চিত্রে যাঁদের আগ্রহ, তাঁরা এ ব্যাপারে একমত হবেন যে হত্যা, মৃত্যু, নৃশংসতাকে অন্য এক দৃষ্টিতে দেখার আর দেখানোর প্রবণতা আছে কোরিয়ানদের মধ্যে। সম্প্রতি অস্কার পাওয়া ছবি প্যারাসাইট–এও আমরা দেখেছি চরম দারিদ্র্যের ফলে মানবিক অধঃপতন এবং এর সমান্তরালে ধনকুবের এক পরিবারের বিলাসী জীবনযাপনের প্রতি বিদ্বেষ; ফলাফল হত্যা আর নিষ্ঠুরতা।

পাঠক, কাংয়ের লেখায় যে টুকরা টুকরা রক্তাক্ত জগৎ, যে নিষ্ঠুরতা, তা বৃহদাকারের নয়, অনেকটা ফুটকির মতো; কাব্যিক ভাষার আচ্ছাদনে অজস্র রূপক দিয়ে ঘেরা। তাঁর উপন্যাসে ডুব দিলে আপনি অনুভব করতে পারবেন সেই ‘আনক্যানি’ ভরা দুনিয়াকে।

একনজরে হান কাং

■ জন্ম ২৭ নভেম্বর ১৯৭০, দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে।

■ লেখাপড়া করেছেন ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে।

■ ১৯৯৮ সালে আইয়োয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশ নেন।

■ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও এক পুত্রসন্তানের জননী হান কাং ২০১৮ সাল থেকে সিউলে একটি বইয়ের দোকান চালান।

■ ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিউল ইনস্টিটিউট অব দ্য আর্টসে সৃজনশীল সাহিত্য পড়িয়েছেন।

■ ম্যান বুকারসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন ৫৩ বছর বয়সী এই লেখক।

■এ বছর প্রথম কোরিয়ান সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পদক জিতলেন তিনি। নারী হিসেবে নোবেলজয়ীর তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৮তম।