একটি সিন্দুক, দুটি ফেরাউন

জন্মের পর থেকেই বাবার ঘরের কাঠের সিন্দুকটি দেখছি। সিন্দুকটিতে বাবা প্রয়োজনীয় কাগজপাতি রাখেন। কিন্তু নিরীহ গোছের, পুরোনো ওই কাঠের সিন্দুকের মধ্যেই যে এমন বিস্ময় লুকিয়ে আছে, কখনো জানতে পারিনি। জানতে পারলাম তখন, যখন বাবা মৃত্যুশয্যায় শায়িত। বাবার জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছিল। জীবনের সবচেয়ে বিপন্ন এই সময়ে বাবার জীবনসঙ্গী, আমার মা, তাঁর পাশে নেই। আমার কিশোরবেলায় মা তাঁর জীবনের অদ্ভুত সিদ্ধান্তটি নেন। আমাকে ও বাবাকে ছেড়ে নতুন পরিচিত হওয়া এক উঠতি শিল্পপতির সঙ্গে ঘর বাঁধেন। হয়তো সুখেই আছেন এখন। সঠিক খবর জানি না।

বাবার মৃত্যুর রাতটা ছিল আশুরার পবিত্র রাত। আমাদের মোহাম্মদপুরের বাড়ির আশপাশে হজরত হোসাইনের জন্য শোকগাথার এক স্নিগ্ধ আবহ বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে ঘনিয়ে এল বাবার মৃত্যুক্ষণ। মৃত্যুর আগে, তখনো বাবার চোখ থেকে দৃষ্টি হারাননি, ঘরের কোনায় রাখা সিন্দুকটির কাছে যেতে চাইলেন তিনি। আমি সিন্দুককেই ঠেলে বাবার কাছে নিয়ে এলাম। বাবা সন্তানের পিঠে হাত বোলানোর মমতা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সিন্দুকটির গায়ে হাত বোলালেন। তারপর যা বললেন, তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। উত্তরাধিকারসূত্রে বাবা সিন্দুকটি পেয়েছেন। এই প্রাপ্তির পরম্পরা কয়েক শ বছরের পুরোনো। তখন ধর্ম প্রচার করতে আসা পীর-আউলিয়াদের কাল চলছে বাংলায়। সে সময় ইরান থেকে এসেছিলেন অলৌকিক ক্ষমতাধর এক পীর।

শোনা যায়, তিনি নাকি কুমিরের পিঠে চড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অবতরণ করেছিলেন। তারই সঙ্গে কুমিরের পিঠে চড়ে এসেছিল সিন্দুকটি। আমার দাদার দাদার বাবা সে সময় ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছিলেন। আরও অনেক মানুষের মতো আমার সেই পরদাদাও পীরের অলৌকিকত্বে মুগ্ধ হন এবং একপর্যায়ে পীরের সান্নিধ্য ও শিষ্যত্ব লাভ করেন। মৃত্যুর আগে পীরবাবা আমার সেই পরদাদার হাতে তুলে দিয়েছিলেন অলীক সিন্দুকটি। শুক্লা দ্বাদশীর রাতে একাকী ঘরে সিন্দুকের ডালা খুললেই নাকি উন্মুক্ত হয়ে যায় এক অলৌকিক দরজা। সেই দরজার সামনে ভেঙে পড়ে সময়-কাল ও মানচিত্রের বিভেদ। সিন্দুকের মালিক চাইলেই পৃথিবীর যেকোনো সময়ে যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারে। বাবা যদিও সিন্দুকের অলীক দরজা দিয়ে পৃথিবী দেখতে বেরোননি কোনো দিন, তবে সিন্দুকের অলৌকিকত্বের ব্যাপারে তাঁর বিশ্বাস আছে।

সিন্দুকটি আমার হাতে তুলে দিয়ে বাবা মারা গেলেন। দিন দিন আমার শোক কমতে থাকল আর বাড়তে থাকল সিন্দুকবিষয়ক কৌতূহল। এখনো বিয়ে করিনি আমি। পড়াশোনা শেষ করে বাবার রেখে যাওয়া পুরোনো ব্যবসার হাল ধরেছি মাত্রই। পুরো বাড়িতে আমার একলা বসবাস। এই একাকিত্বের সুযোগে সিন্দুককে একবার যাচাই করে দেখব নাকি? আমি এ যুগের ছেলে। এসব আজগুবি কেচ্ছাকাহিনিতে ইমান নেই।

কিন্তু মৃত্যুর আগে বাবা এমন আবেগমথিত গলায় বলেছিলেন ঘটনা, ভাবলে আমার এখনো গা ছমছম করে। কী ভেবে এক শুক্লা দ্বাদশীর রাতে আমি সিন্দুকের সামনে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম, সিন্দুকটি যে অঞ্চল থেকে এসেছে, সেখানেই যাওয়া যাক না! অমনি সারা ঘর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল। আমার সামনে সিন্দুকের ডালা একটি উন্মুক্ত দরজায় পরিণত হলো। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তখন আমার। কিছুক্ষণের জন্য চেতনা হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরল, নিজেকে আবিষ্কার করলাম জালালউদ্দিন রুমির কবিতার মজলিশে। রুমি এক ধ্যানে শিষ্যদের মধ্যে কবিতা আবৃত্তি করছেন। ততক্ষণে আমিও সেই সময়ের মানুষ। পোশাক-আশাক ও চেহারায় আমিও যেন এক রুমিশিষ্য।

উত্তেজনায় আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। কোনো দিন রুমিকে স্বচক্ষে দেখতে পাব, স্বপ্নেও ভাবিনি। অলীক সিন্দুকটি সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এরপর নেশা চেপে গেল আমার। কখনো অ্যারিস্টটল, কখনো ইবনে সিনা, কখনো সম্রাট শাহজাহানের সময়ে ইচ্ছামতো ঘুরতে লাগলাম। বিশ্বভ্রমণের ভেতরে একবার তিতলির ওপর মন খারাপ হলো। ও হ্যাঁ, আপনাদের বলা হয়নি, আমার একজন প্রেমিকা আছে—তিতলি, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি যে হুটহাট কোনো কোনো রাতে মেসেজ না দিয়ে গায়েব হয়ে যাই, এ জন্য ও আমার সঙ্গে একবার দুর্ব্যবহার করল। আমার মন খারাপের কারণ তিতলির দুর্ব্যবহার। তো, মন খারাপের কারণে পরবর্তী শুক্লা দ্বাদশীতে আমি সিন্দুককে কোনো গন্তব্য জানালাম না। প্রতিবার তো নিজের পছন্দসই জায়গায় ঘুরি। এবার সিন্দুকই নিয়ে যাক না তার পছন্দের জায়গায়! আমি নিরুদ্দেশ হলাম। কতক্ষণ পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক ভয়ংকর জঙ্গলে। সেই জঙ্গলে অসংখ্য বিপন্ন নারী দুধের সন্তান কোলে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষুধায় চিৎকার করে কাঁদছে শিশুরা। মায়েরা করছে আহাজারি। সেখানে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। এত দিন ঐতিহ্যবাহী, সমৃদ্ধ, সুখী–সুখী নগরীতে ঘুরেছি। কবিতা ও জ্ঞানের মজলিশ, তাজমহলের নির্মাণযজ্ঞ, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান—ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত সব স্থান ও স্থাপনা উপভোগ করেছি। কিন্তু সময় এবার বেদনার এ কোন বেলাভূমিতে এনে ফেলল আমাকে! কয়েকজন মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তারা আমাকে দেখে ভয়ে গুটিয়ে গেল, যেন আমি শত্রুপক্ষের কেউ। কয়েকজন তো ছুরি বের করে শাসাল—খবরদার, কাছে আসবি না! দুই হাত ওপরে তুলে যখন বললাম, আমি এক নিরীহ মুসাফির, পৃথিবী দেখার উদ্দেশ্যে পথে বেরিয়েছি। তখন তাদের কেউ কেউ আশ্বস্ত হলো। কেউ কেউ সন্দেহের চোখে তাকাতে লাগল। যারা আশ্বস্ত হলো, তারা যা জানাল, তাতে শিউরে উঠলাম। এখানকার শাসক শিশুহত্যায় মেতেছে। শাসকের পোষা গণক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, শিগগিরই এই জনপদে এমন এক ছেলের আবির্ভাব ঘটবে, যার অস্তিত্ব শাসকের ক্ষমতার জন্য হুমকি। এ কারণে এই অত্যাচারী শাসক রাজ্যের সব ছেলেশিশুকে হত্যা করছে। জীবন রক্ষার্থে মায়েরা ছেলেসন্তানসহ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। কী মর্মান্তিক ব্যাপার।

ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে কেবল সন্দেহের বশে একটি শিশুর বড় হওয়া রোধ করতে হাজার হাজার শিশুর প্রাণবধ! ক্ষমতা এত প্রিয় এই শাসকের! আমি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলাম। চওড়া এক নদীর কূল বেয়ে হাঁটতে লাগলাম। এখানকার জনপদে যেতে চাই আমি। জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া নারীরা যা বলল, তার সবটা বিশ্বাস করা কঠিন। কোনো শাসক প্রজাদের ওপর এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমি আসল ঘটনা জানতে চাই। ধু ধু মরুভূমি আর বালিয়াড়ির ভেতর দিয়ে কিছুদূর চলার পর একটি বাজার দেখতে পেলাম। সচরাচর বাজার যেমন কর্মচঞ্চল আড্ডামুখর আর হইচইপ্রবণ হয়, এ বাজার তেমন নয়। খুবই ম্রিয়মাণ, চুপচাপ আর আড়ষ্ট এক বাজার, যেন বাজারটির গলায় ফাঁস পরিয়ে রাখা হয়েছে। নড়াচড়া করলেই গলায় ফাঁস বসে যাবে। দোকানি, খদ্দের—সবার চেহারাতেই উৎকণ্ঠার ছাপ। সবার ভেতরেই ঘরে ফেরার তাড়া, যেন নিতান্ত ঠেকায় পড়ে তারা বাজারে এসেছে।

একটি কামারের দোকানে কয়েকজন বৃদ্ধ নিচু স্বরে কথা বলছিল। আড়ি পাতার উদ্দেশ্যে আমি নিঃশব্দে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু আমাকে দেখামাত্র তারা চুপ হয়ে গেল। দুজন তো উঠে দুই দিকে হাঁটা শুরু করল। নিঃশব্দে হলেও এতক্ষণ বাজারের কেনাবেচা ঠিকঠাকমতোই চলছিল। ফিসফাস করে হলেও লোকেরা কথা বলছিল। কিন্তু আমি আসার পর কী যে হলো, লোকেরা কথা বলা বন্ধ করে দিল। অনেক দোকান ঝাঁপ নামিয়ে ফেলল। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে লাগল আমার। সঙ্গে বাড়তে থাকল বিস্ময়বোধ। এত ভয়, এত উৎকণ্ঠা নিয়ে একটি জনপদ কীভাবে জীবনযাপন করে! হঠাৎ এক হেকিমের দাওয়াখানায় চোখ আটকে গেল। এক মা তার সন্তানকে কাপড়ের পোঁটলার মতো কোলের মধ্যে পেঁচিয়ে হেকিমের কাছে এসেছে। হেকিম ইতিউতি তাকিয়ে শিশুটির জন্য পথ্য তৈরি করছে আর দরদর করে ঘামছে। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই হা-রে-রে করতে করতে ছুটে এল একদল সশস্ত্র পেয়াদা। তারা হামলে পড়ল দাওয়াখানার ওপর। অসুস্থ শিশুকে মায়ের কোল থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিল। বল্লমের মাথায় শিশুকে গেঁথে জংলিদের মতো উল্লাস করতে লাগল। আর শিশুটির মা আছাড়িবিছাড়ি করে কাঁদতে লাগল দাওয়াখানার সামনে। যে দৃশ্য সিনেমায় দেখলেও বিশ্বাস করতাম না, সেই দৃশ্য একমুহূর্তে আমার চোখের সামনে ঘটে গেল। নিশ্বাস নিতেও ভুলে গেলাম। কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, জানি না। কারও ধাক্কায় ঘোর ভাঙল। এক তরুণ কাঁধে ধাক্কা দিয়ে হড়বড় করে বলল, এখানে আর একমুহূর্ত দাঁড়াবেন না। বলেই সে হনহন করে হাঁটতে লাগল। সংবিৎ ফিরে পেয়ে আমি তার পিছু নিলাম। বাজার ছাড়িয়ে নিরাপদ এক গাছের নিচে দুজনই হাঁপাতে লাগলাম। তরুণকে জিজ্ঞেস করলাম, ওই নিষ্পাপ শিশুকে কেন হত্যা করা হলো?

তরুণ এবার অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে, যেন এই হত্যাকাণ্ডের কারণ না জানা অপরাধ। মিনমিন করে বললাম, ‘আমি স্থানীয় কেউ নই। মুসাফির।’ তরুণ এবার শিশুহত্যার কারণ হিসেবে সেই ঘটনাই বলল, যা আমি জঙ্গলে নারীদের মুখে শুনে এসেছি।

এখানকার রাজা কে? আমার কণ্ঠে এবার ঝাঁজ।

ফেরাউন।

ফেরাউন! এতক্ষণ না জেনেই কুখ্যাত ফেরাউনের রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার শিরায় শিরায় ভয়ের মৃদু কাঁপন উঠল। শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে লাগল ঠান্ডা চোরাস্রোত। শৈশব থেকে যার অত্যাচারের নানামাত্রিক গল্প শুনে বড় হয়েছি, রক্তমাংসের আমি এখন তার রাজ্যে ঘুরছি! না, এই অরাজক রাজ্যে থাকার আর সাহস হলো না। যেখানে একজন প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে হত্যা করা হয় শত শত শিশুকে, সেখানে আমার জীবনও নিরাপদ নয়। ফিরে এলাম আপন সময়ে। 

তিতলির সঙ্গে বেশ কয়েক দিন কথা হয় না। মেয়েটার জন্য মন কেমন করতে লাগল। বাবা মারা যাওয়ার দিন ও এসেছিল বাসায়। তারপর আর দেখাও হয়নি। তিতলিকে ফোন দিলাম। রিসিভ হলো। কিন্তু ওর কণ্ঠ ছাপিয়ে স্লোগান শুনতে পেলাম। চিৎকার করে বললাম, ‘তুমি কই? এত চিৎকার কিসের?’

তিতলিও ততোধিক চিৎকার করে বলল, ‘কথা বলার অবস্থা নেই। পরে কল ব্যাক করব। এখন রাখি।’

তিতলির সঙ্গে কথা হলো পরদিন সকালে। ২০১৮ সালের পর ওরা আবার কোটার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। কোটা সংস্কার না করে ওরা ঘরে ফিরবে না। তিতলি মিছিল করছে, শক্ত চোয়ালে স্লোগান তুলছে, আকাশপানে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ছে—ভাবতেই আমি উত্তেজিত হয়ে উঠলাম। এ রকম একটা আগুন–মেয়েই তো আমি প্রেমিকা হিসেবে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় যত গড়াতে লাগল, দেশের পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে লাগল। সারা দেশের সব শিক্ষার্থী নেমে এল রাস্তায়। সরকার কারফিউ দিল, ইন্টারনেট বন্ধ করল, তবু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। আমি দোকান বন্ধ করে সারা দিন বাসায় বসে থাকি। শিক্ষার্থীদের জন্য, তিতলির জন্য উৎকণ্ঠা পোহাই। এরই মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ে লাশের মিছিল। তাদের ভেতর শিশু-কিশোর-তরুণদের সংখ্যাই বেশি। কয়েকটি শিশু তো ঘরের মধ্যে, মায়ের কোলের ভেতর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এসব শিশুর চেহারার মধ্যে আমি খুঁজে পাই হাজার জীবন পেছনের সেই মজলুম শিশুর মুখ, যার বল্লমবিদ্ধ শরীর ফেরাউনের সৈন্যদের উৎসবের খোরাক হয়েছিল। আমাদের এই শিশুরাও কি ক্ষমতাসীনদের উৎসবের উপলক্ষ হচ্ছে? দিনে দিনে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি আর এই লাশের সারি গুনতে পারি না। একেকবার সিন্দুকটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। মনে হয়, সবকিছু চুকিয়ে একবারে ফেরাউনের দেশেই চলে যাই। কিন্তু শুক্লা দ্বাদশী আসতে যে এখনো ঢের দেরি। শুক্লা দ্বাদশী আসে না, তার আগেই চলে আসে ৩১ জুলাইয়ের সন্ধ্যা।

সন্দেহ নেই, এই সন্ধ্যা আমার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক, সবচেয়ে অভিশপ্ত সন্ধ্যা। এদিন এক তরুণের ভাইরাল হওয়া লাইভ ভিডিওতে তিতলির মরদেহ আবিষ্কার করি। টিভি সেন্টারের সামনে পড়ে আছে তিতলির মগজ বেরোনো লাশ। গুলি খেয়েছে তিতলি। চোখ দুটি আকাশপানে ছড়ানো। আমার পৃথিবী আঁধারে ছেয়ে যায়। কতক্ষণ আমি নিস্পন্দ হয়ে পড়ে থাকি বিছানায়। তিতলির ওই বীভৎস চেহারা দেখে পেটের ভেতরকার সবকিছু বমি হয়ে বেরিয়ে আসে। মাথায় পানি ঢেলে তখনই ছুটি টিভি সেন্টারের দিকে। তখনো অগ্নিগর্ভ ঢাকা। তখনো লাশ পড়ছে সারি সারি। তখনো বাতাসে বারুদের গন্ধ। রক্তনদী পেরিয়ে দুরু দুরু বুকে যখন তিতলির সামনে দাঁড়াই, আমার মস্তিষ্কে আবার ফিরে আসে ফেরাউন। ক্ষমতার জন্য এক ফেরাউন শুধু শিশুপুত্রদের হত্যা করেছিল। আর এই নব্য ফেরাউন আমার তিতলিকেও ছাড়ল না।