শ্রদ্ধা
আবুল মনসুর আহমদের সাধনার এক দিক
৩ সেপ্টেম্বর ছিল লেখক–চিন্তক আবুল মনসুর আহমদের জন্মদিন
বাংলা অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাঙালি মুসলমান বলে একটা বর্গ আছে। এই বর্গের উৎস কোথায়, সেই ঐতিহাসিক তর্কের দাগ এখনো মোছেনি। তবে ইতিহাসের গতিধারা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানের পর থেকে ক্রমে এই বর্গের উদ্ভব হয়েছে। ধীরে ধীরে বর্গটির একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদল দাঁড়িয়েছে।
বলা দরকার, বৃহৎ বাংলার সব অঞ্চলের বাঙালি মুসলমান এক নয়। এই একটি বর্গের মধ্যে নানা ভাগ-উপভাগ আছে। আর সবকিছু বাদ দিলেও অন্তত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির দিক থেকে বিভিন্ন কিসিমের বাঙালি মুসলমানের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। বাংলার সব জায়গার বাঙালি মুসলমানের চেতনার জায়গাটি একই রকম নয়। হতে পারে না। প্রতিটি আলাদা ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এই সম্প্রদায়ের আলাদা একটা চৈতন্য শনাক্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানেরও একটা স্বতন্ত্র সত্তা বা চেতনার জায়গা আছে; রূপ, রং, আদল আছে। আবুল মনসুর আহমদের সাহিত্য বলি, রাজনীতি বলি আর চিন্তাচর্চাই বলি সবকিছুর সঙ্গেই বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানের সত্তা আবিষ্কারের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। বলা যায়, আবুল মনসুর আহমদ বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানের জাতীয় চেতনার অন্বেষণেই তাঁর সারাটা জীবন কাটিয়েছেন।
ইতিহাস সাক্ষী, বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীটি তার সত্তার অন্বেষণে উনিশ ও বিশ শতকের অন্তত প্রথম দিকে ছিল কিছুটা যেন বেপথুমান। ইতিহাসের নানা পর্বে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ঘুরপাকের ভেতর দিয়ে সে নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছে। থিতু হতে চেয়েছে। আবুল মনসুরের চিন্তা ও সাহিত্যচর্চার শুরু ওই অস্থির-অস্থিত সময়ের ভেতর। তিনি ওই অস্থির উন্মেষপর্বের গর্ভজাত।
গত শতাব্দীর বিশের দশকে আবুল মনসুর আহমদের লেখালেখিগুলো দেখলে ব্যাপারটা সহজেই বোঝা যায়। ১৯২২ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে আবুল মনসুরের লেখা আয়না গল্পগ্রন্থটি আসলে ওই সময়ের বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীকে পাঠ করার এক দারুণ মওকা। গ্রন্থটির গল্পগুলো পড়তে গেলে মনে হয় অসংখ্য অব্যবস্থিত, অস্থির, প্রতিষ্ঠাপাগল, সুযোগসন্ধানী, অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠার বাসনাকাতর অথচ নিরুপায় মানুষদের কোলাহল-ক্যাওয়াজ, ফিতনা-ফ্যাসাদ, অস্তিত্ব-সংকট, উত্তেজনা-নিঃসহায়তার মতো পরস্পরবিরোধী কর্মকাণ্ডের মচ্ছব। একটু গভীরভাবে দেখলে দেখা যাবে, এই বইয়ের অধিকাংশ গল্পের প্রধান চরিত্ররা, বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চরিত্রগুলো বড্ড অস্থির। আধুনিক পাশ্চাত্য যাপনে ও শিখনে তারা স্থির হতে পারছে না। আবার অসহযোগ-খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েও কোথায় যেন একটা কমজোরি মানসিকতায় ভুগছে। ধর্মের আশ্রয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেখানেও সে পুরোপুরি থিতু হতে পারছে না। এমন বহুমাত্রিক অস্থিরতায় আক্রান্ত ‘হুজুর কেবলা’ গল্পের এমদাদ, ‘লীডরে-কওম’ গল্পের ইসমাইল, ‘বিদ্রোহী সংঘ’ গল্পের নায়ক। চরিত্রগুলো অস্বচ্ছ; নিজেকেও যেন ঠিকমতো নিজেই বুঝে উঠতে পারে না। তারা কোথায় যেন কী অবলম্বন খোঁজে, আবার আস্থার সংকটেও ভোগে। হানাফি-মোহাম্মদি, মাইনর স্কুল-মাদ্রাসা, মাস্টার-মৌলভি, আহলে হাদিস-হানাফি ইত্যাদি নানা বাইনারির ঘেরটোপে পড়ে অস্থিরতায় আচ্ছন্ন বাঙালি মুসলমান সমাজের একটা অব্যবস্থিত হট্টগোল ও কুসংস্কারপ্রবণতাকে গল্পের পর গল্পে আবুল মনসুর আহমদ চিহ্নিত করে উঠতে চেয়েছেন। এসব গল্প পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়, গল্পকার ও গল্পের চরিত্রগুলো যেন নিজেদের সত্তার অনুসন্ধানে আছে। কিন্তু তখনো তা স্পষ্ট ও আকরিত হয়নি যেন। আবুল মনসুর আহমদের জীবন ও চিন্তার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যাঁরাই কিছুটা ধারণা রাখেন, তাঁরাই জানেন যে এসব গল্পের বাঙালি মুসলমান চরিত্রগুলোর অবস্থার সঙ্গে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের অস্থিরতাটাকে ঠিক ঠিক মিলিয়ে পড়া অসম্ভব নয়।
অনেকে মনে করেন, বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর; বিশেষত বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর; ঘরে ফেরার কাল ত্রিশ ও চল্লিশের দশক। পাকিস্তান আন্দোলনের পথ যত প্রশস্ত হতে লাগল এবং আন্দোলন যত তুঙ্গে উঠতে লাগল, তত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিকতার দিকে পা বাড়াতে শুরু করল। নিজের জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুভব করতে লাগল। কেন আলাদা রাষ্ট্র? এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে একবার অতীত ইতিহাসের দিকে আরেকবার বর্তমানের মধ্যে ডুব দিল। দেখল, নিজেদের বঞ্চনা ও আত্মবিস্মৃতির ইতিহাস। ফলে সে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বকীয়তা আবিষ্কার করতে চাইল। কাব্য-কবিতা-উপন্যাস-সাংস্কৃতিক নানা সংগঠন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠতে লাগল। এসবের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠী নিজের সংজ্ঞায়ন করতে সচেষ্ট হলো। এরই বড় আর আনুষ্ঠানিক নাম ‘পাকিস্তানি জাতীয়াবাদ’। ধর্মের ভিত্তিতে এই জাতীয়তাবাদ নির্ধারিত হয়েছে বলে একধরনের ইতিহাসে সাব্যস্ত হলেও এর আড়ালে সবচেয়ে বড় যে অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপার ক্রিয়াশীল ছিল, তা–ও কোনো কোনো ইতিহাসে অনুল্লেখিত থাকেনি।
এই পর্যায়ে বাঙালি মুসলমানের মধ্যে ওই বিশের দশকের বা তারও আগের পর্যায়ের অব্যবস্থিত অস্থিরতা কমে গেল। সে যেন যাপন আর চিন্তনের ক্ষেত্রে অনেক অপ্রয়োজনীয় মেদ ঝরাতে সক্ষম হলো। ফলে তার সময় এল নিজের চৈতন্য নিজেই আবিষ্কারের। এই জাতীয় চৈতন্য আবিষ্কারে বিশেষত চল্লিশের দশকে যাঁরা সবচেয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠলেন, আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন তাঁদের তাত্ত্বিক পুরোহিতের মতো। সবাই জানত যে পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলমানের সত্তার অন্বেষণের প্রবণতা আবুল মনসুর আহমদের প্রধান প্রবণতা। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির ১৯৪৪ সালের সম্মেলনে বাঘা বাঘা লোকের মধ্যে তাঁকেই করা হলো সভাপতি। সভাপতির ভাষণে তিনি সেদিন যে কথা বলেছিলেন, তা বাঙালি মুসলমানের সত্তাসন্ধানী আবুল মনসুর আহমদের পরিচয়টিকেই প্রধান করে তুলে ধরে। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান দাবীটা প্রধানতঃ কালচারেল অটনমির দাবী। ...রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার চেয়েও কালচারেল অটনমি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক হইতে পাকিস্তান দাবী শুধু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাবী নয়, এটা গোটা ভারতের কালচারেল মাইনরিটির জাতীয় দাবী। ...ভারতীয় মুসলমানরা হিন্দু হইতে আলাদা জাত ত বটেই বাংলার মুসলমানরাও পশ্চিমা মুসলমানদের হইতে পৃথক জাতি। ...শুধুমাত্র ধর্ম জাতীয়তার বুনিয়াদ হইতে পারে না।’
আবুল মনসুর আহমদের এই বক্তব্য এক অর্থে ওই সময়ের মুসলিম লীগের অধিকাংশের মতবাদের সঙ্গে ঠিক ঠিক মেলে না। না মেলারই কথা। কারণ, মনসুর বরাবরই পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষণেই ব্যাপৃত থেকেছেন বেশি। তাঁর কাছে পাকিস্তান মানেই ছিল পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অটোনমি। এটা তিনি মনেপ্রাণে চাইতেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, পূর্ব বাংলা ও এর ভাষা-সংস্কৃতি-মানুষ এবং এর বলন-চলন-গড়ন-চেতন অন্যদের থেকে আলাদা। তিনি তাঁর আত্মজীবনী আত্মকথা বইয়ে আরও স্পষ্ট করে কথাটা বলেছেন এভাবে, ‘দেশভাগ হওয়ার পর আমার সাহিত্যিক অ্যাপ্রোচে মৌলিক পরিবর্তন আসিল। “মুসলমান” শব্দটার স্থান দখল করিল “পূর্ব-বাংলা”। পূর্ব-বাংলা পাকিস্তানের অংশ হয় শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থে। কৃষ্টিক অর্থে পূর্ব-বাংলা ছিল বরাবর একটি স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। এর কৃষ্টিক স্বকীয়তা এক দিকে যেমন পাকিস্তানের অপর অঞ্চল পশ্চিম-পাকিস্তান হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিল, অপর দিকে তেমনি ঐতিহাসিক বাংলার অঞ্চল পশ্চিম-বাংলা হইতে ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।’
ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে পূর্ব বাংলার স্বকীয়তার সাধনা আরও বেগবান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি বলে মনসুর মনে করেন। তিনি মনে করেন, পশ্চিম পাকিস্তানের অতিরিক্ত উর্দু জবরদস্তি ও ‘মুসলমানত্বের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আরোপণে’ পূর্ব বাংলা আরও বেশি করে কলকাতামুখী হয়ে পড়ে। ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার—সব দিক দিয়েই পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলার কাছে হাত পাতে। এবং এটি অবশ্যই বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের সংকটে একটা দ্বিধা-দ্বৈরথ তৈরি করেছে।’ আত্মপরিচয় বইয়ে তিনি বলছেন, ‘...চল্লিশের দশকে আমরা কতিপয় সাহিত্যিক পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের যে, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, কৃষ্টিক স্বকীয়তা ও জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের কথা সগর্বে বুলন্দ আওয়াজে বলিতে পারিয়াছিলাম, পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় বসিয়া তার কিছুই বলিতে পারিলাম না। পশ্চিম-পাকিস্তান ও পশ্চিম-বাংলার মধ্যে, লাহোর ও কলিকাতার মধ্যে এবং ইকবাল ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে যে একটা পূর্ব-বাংলা, একটা ঢাকা, একটা নজরুল ইসলাম আছে, তা আমরা কেউ বুঝিলাম না।’
কিন্তু তাতে আবুল মনসুর আহমদ দমে যাননি। তিনি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের স্বকীয়তা তথা বাঙালি মুসলমানের জাতীয় চৈতন্যের তালাশ অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য ১৯৬৬ সালে লিখেছেন পাক-বাংলার কালচার বইটি। স্বাধীনতার পর বইটির নাম রাখেন বাংলাদেশের কালচার। ১৯৬৬ সালে যখন বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রীয় নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান’। কিন্তু আবুল মনসুর সে নামে বাংলাকে ডাকতে নারাজ ছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন বাংলা পাকিস্তান নয়, বাংলা বাংলাই। বাংলাদেশের কালচার বইয়ের ‘লেখকের কৈফিয়ত’-এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে ‘পাক-বাংলা’ (পাকিস্তানের অন্তর্গত বাংলা অর্থে) বলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটা নাম-গোত্র-ঐতিহ্য-ইতিহাসহীন জনপদ নয় যে অপরের রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে যে-কোনও নাম গ্রহণ করিতে পারে।’ বইটির শিরোনামগুলো এমন—‘সাহিত্যের প্রাণ, রূপ ও আঙ্গিক’, ‘ভাষা–আন্দোলনের মর্মকথা’, ‘পাক-বাংলার রেনেসাঁ’, ‘শিক্ষার মিডিয়াম’, ‘আনন্দের জোয়ার ঈদুল ফিতর’, ‘আমার স্বপ্নের শহীদ মিনার’, ‘আমাদের ভাষা’, ‘বাংলাদেশের কৃষ্টিক পটভূমি’ ও ‘বাংলাদেশের জাতীয় আত্মা’। শিরোনামগুলো দেখলেই অনুমান করা যায় যে বাংলাদেশের চৌহদ্দির মধ্যে আবুল মনসুর আহমদ আবিষ্কার করে উঠতে চেয়েছেন এই জনগোষ্ঠীর স্বরূপ ও স্বকীয়তার প্রাণভোমরাটিকে।
চল্লিশের দশক থেকে বাংলাদেশ অব্দি বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের মানুষদের নানা পরিবর্তন দেশের মানুষ দেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও এর জনগোষ্ঠীকে স্বতন্ত্র সত্তায় আবিষ্কারের রাজনীতির প্রশ্নে আবুল মনসুর তাঁর চল্লিশের দশকের অবস্থান থেকে আমৃত্যু কখনো সরে যাননি। বাংলাদেশের কালচার বইয়ের শেষ দুটি রচনার (‘বাংলাদেশের কৃষ্টিক পটভূমি’ ও ‘বাংলাদেশের জাতীয় আত্মা’) সংযোজন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। এই রচনা দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে লেখা। লেখা দুটির মধ্যে তিনি ওই আগের রচনাগুলোর মতোই বাংলাদেশের আত্মার সন্ধান করেছেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে এ–ও দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর কালচারেল স্বকীয়তা ও স্বাধীনতার যে প্রাণ ও রূপ পরিদৃশ্যমান, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবেও অবিকল তা–ই ছিল। কেউ দেখিয়াছেন, কেউ দেখেন নাই।’ আবুল মনসুর আহমদের এই বক্তব্যের ঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই স্বল্প পরিসরে তা সম্ভবও নয়। কিন্তু এ কথা দায়িত্ব নিয়ে বলাই যায় যে আবুল মনসুর আহমদ বাংলাদেশের ভাষিক, কৃষ্টিক, ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যিক, জনগোষ্ঠীর চেতনাগত স্বকীয়তা চিহ্নিতকরণের প্রশ্নে আমৃত্যু সৎ ও চরিত্রবান ছিলেন। এদিক থেকে তিনি যেন এক নিষ্ঠ সাধকের প্রতিমূর্তি।
সার্বিকভাবে কিছু কথা তোলা দরকার। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে একধরনের গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর আছে। এসব ফিসফাসের মূল কারণ যতটা না বুদ্ধিবৃত্তিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা ভালো, দলীয় মনোবৃত্তির সঙ্গে এসব গুজুর গুজুরের সম্পর্ক বেশি। এটা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যের পরিচায়ক বলে মনে করি। এমন ব্যাপার কোনো ‘সুস্থ-শিক্ষিত’ বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের জন্যই কাম্য হতে পারে না। শুধু আবুল মনসুর আহমদ কেন, যেকোনো বিষয় ও ব্যক্তিকে নিয়ে পদ্ধতিগত উন্মুক্ত আলাপ জারি থাকা জরুরি।