বৈশাখের পঙ্ক্তিমালা
করোনাকালের বৈশাখ : কামরুল হাসান
ওই মেঘপুঞ্জ বুঝি ঝড়ের কেশর
ঈষাণে ফোলানো অবাধ্য রঙিন
বায়ুর ট্রেনে চড়ে ধেয়ে চলে নৈর্ঋতে
দিগন্তের প্রান্তরে যত পাতাঘেরা স্টেশন
হাত নাড়িয়ে বলে, যাও, করোনা বিনাশে
সবুজ পতাকা উড্ডীন, সিগন্যালে সবুজ ইশারা
সে বাজায় তীব্র হুইসেল, মাতোয়ারা গতি
ফোটায় অবিরত আলোর আতশবাজি,
পোড়ায় করোনা;
বজ্রবিদ্যুতের বর্শায় গেঁথে ফেলে করোনার দেহ
উড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে করোনার যত রেণু।
মাঠগুলো খোলে কফিন সরানো বুক, হালখাতা
বৈশাখ রেখে যায় ধোয়া হাতের পরিশুদ্ধ ছাপ
করোনাকাল শেষে লেখা জীবনের নতুন হিসাব,
মুখোশ সরানো এক নতুন বাংলাদেশে।
এবার বোশেখ : সাজ্জাদ মোহাম্মদ
বোশেখ এবার ঘরের ভেতর,
বাইরে যাওয়া মানা,
পান্তা খাব লবণ মেখে
ইলিশ তাতে? না না।
নয়তো শোভাযাত্রা এবং
বটমূলের ওই রমনা,
ঘরের ভেতর বৈশাখী গান
গাওয়ার মজাও কম না।
লাল পোশাকের ছবি দিয়ে
ভরতে পারি এফবি তো,
এবার এমন বোশেখ পালন
হতে পারে হেব্বি তো।
ঘরেই থাকি সুস্থ থাকি
নিপাত গেলে করোনি,
বোশেখ হবে রমনাতে ফের
সবুজ হলে ধরণি।
বুকপকেটে কষ্ট রাখা
ফাতিমা-তুজ-জোহরা
বুকপকেটে কষ্ট রাখা,
কালো, ধূসর, ছাইয়ে মাখা;
তারই মাঝে স্বপ্নপ্রদীপ
গলিত মোম দুগাল বায়,
কষ্টগুলো নষ্ট করার
স্পষ্ট তড়িৎশক্তি চায়।
কুমারী বৈশাখ : বীথি রহমান
এক বৈশাখ নিস্তব্ধতাকে ছুঁতে চেয়েছিল
মৃত্যুপুরীকে জাগাতে চেয়েছিল বৃষ্টির ঝঙ্কারে
শরীরে মেঘের রং মেখে
তুমুল নৃত্যে মেতেছিল কুমারী বৈশাখ;
যেখানে শহর মৃত, নিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসের আড়ি,
রোমশ স্তব্ধতা নিয়ে আতঙ্কের ডঙ্কা বাজে
এমন এক নিস্তব্ধ সময়ে বৈশাখ এসেছিল
মুক্তির হাওয়া নিয়ে।
কিন্তু কী থেকে কী হলো!
হলদেটে চাঁদ ঢেকে দিয়ে যে বাতাস এসেছিল
তার চেয়েও অধিক ক্ষিপ্রতায়, বিষদৃষ্টি হেনে
এক অশরীরী ছায়া ভাসে
বিদ্যুৎ-ঝলকে
ফুসফুসে ঢুকে পড়ে পলকে
আকাশে ক্রন্দনরত গোমড়া মেঘ—
আহা কী করুণ নিস্তব্ধ সময়ে সে এসেছিল!
জ্যোতির্ময় : জাহানারা ইয়াসমীন
বসন্তে কোকিল খুঁজতে হয়? নাকি কোকিল কাঁদে বলেই বসন্ত মাতে?
ফুলেদের মৌতাতে কোকিলের কণ্ঠ চিরে যে কান্না ভেসে আসে,
তাকে আমরা ভালোবাসা বলে ভুল জানি।
দিন গুনছি, পা পা করে স্মৃতির দিকে পেছন ফিরে হাঁটছি—
চোখ বুজে আছি,
পাছে বন্ধ চোখের পাতায় কোনো প্রিয়জন
প্রয়োজনের খড়গ তুলে গেঁথে না দেয়।
শেষ থেকেই শুরু হলো,
শূন্য থেকেই নাহয় বিভ্রমের মোহ ছেড়ে আলোয় ভাসব
আলোর সাঁজিতে দিনলিপি শিশুর সারল্যে মধুচন্দনে যাত্রা শুরু করুক।
এখানে কখনো রাত আসেনি,
এখানে কখনো কেঁদে ওঠেনি কিশোরীর ভীরু প্রাণ,
এখানে বাঁশিতে হৃদয় কেঁপেছে—
টাকডুম টাকডুম বোলে শিশুঋতুর জন্ম ঘোষিত হলো;
এখানে আজ জীবন হাসে কান্নার দমকে
কান্নার দমকে জীবন হাসেও।
এসো প্রাণ, এসো জুড়ে রও
এসো বাউল বাতাসে কাঁপন তুলে
মৃত্যুঞ্জয়ী সুধায় আকাশ কালোর আলোয় ছেয়ে।
আঁধারে আঁধার ঘষে জ্বালাও আগুন।